Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রমজানের ৪ পণ্যের রেকর্ড আমদানি, নেই ঘাটতির আশঙ্কা

রমেন দাশ গুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩০ জানুয়ারি ২০২৪ ২২:০৬

চট্টগ্রাম ব্যুরো: পবিত্র রমজানকে কেন্দ্র করে দেশে আমদানিনির্ভর ছয়টি ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। পণ্যগুলো হচ্ছে- চিনি, খেজুর, ভোজ্যতেল, ডাল, ছোলা ও পেঁয়াজ। রমজান শুরুর অন্তত তিন থেকে চার মাস আগ থেকে এসব পণ্য আমদানি শুরু হয়। এবারের রমজানকে সামনে রেখে গত চার মাসে খেজুর ও মসুর ডাল ছাড়া বাকি চারটি পণ্য রেকর্ড পরিমাণে আমদানি হয়েছে।

আমদানিকারকরা বলছেন, যে পরিমাণ পণ্য দেশে ঢুকেছে, তাতে রমজান মাসে সরবরাহে কোনো ধরনের সংকট হওয়ার কথা নয়। আড়তদার ও পাইকারি বিক্রেতারাও বলছেন, নতুনভাবে আমদানির পাশাপাশি রমজানের অত্যাবশ্যকীয় এসব পণ্য বিপুল পরিমাণে মজুদ আছে। অথচ এর বিপরীতে বাজারে ক্রেতা এখনও কম। এ কারণে এবারের রমজানে পণ্যের দাম বাড়ারও আশঙ্কা নেই।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত গত সাড়ে তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ১ লাখ ১৮ হাজার ৭০৭ দশমিক ১৭ মেট্রিক টন চিনি আমদানি হয়েছে। আগের বছর একই সময়ে যা ছিল ৮০ হাজার ২১২ মেট্রিক টন। এবার ৭ লাখ ৪৬ হাজার ৮৮৬ দশমিক ৪২ মেট্রিক টন অপরিশোধিত ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে। গত বছর একই সময়ে আমদানির পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ৫৮ হাজার ৬০৩ দশমিক ৭৩ মেট্রিক টন।

এবার ছোলা আমদানি হয়েছে ৪৯ হাজার ৫১৫ দশমিক ৯৭ মেট্রিক টন। আগের বছর একই সময়ে ২৪ হাজার ৪৮৬ দশমিক ৮১ মেট্রিক টন ছোলা আমদানি করা হয়। এ ছাড়া গত সাড়ে তিন মাসে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৯৫ হাজার ৮৮১ টন। এক বছর আগের একই সময়ের তুলনায় এবার ৪১ হাজার ৮৪০ টন পেঁয়াজ বেশি আমদানি হয়েছে।

কাস্টমসের তথ্যানুযায়ী, গত বছরের চেয়ে এবার ৪৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ চিনি, ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ ভোজ্যতেল, ১০২ দশমিক ২১ শতাংশ ছোলা এবং প্রায় ৫৪ শতাংশ পেঁয়াজ বেশি আমদানি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

কাস্টমস থেকে জানা যায়, এবার গত বছরের তুলনায় শুধুমাত্র খেজুর ৫৯ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং ডাল ৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ কম আমদানি হয়েছে। গত সাড়ে তিন মাসে ১০ হাজার ৭৯ দশমিক ৯৩ মেট্রিক টন খেজুর আমদানি হয়েছে। ২০২২ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ২৪ হাজার ৭৬০ দশমিক ৩৩ মেট্রিক টন খেজুর আমদানি হয়েছিল। একই সময়ে এবার ১ লাখ ৭২ হাজার ৬২৭ দশমিক ৫১ মেট্রিক টন ডাল আমদানি হয়েছে। আগের বছর একই সময়ে ১ লাখ ৯০ হাজার ৮২০ মেট্রিক টন ডাল আমদানি হয়।

ভোগ্যপণ্যের আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্যানুয়ায়ী, রমজানে দেশে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন ভোজ্যতেলের চাহিদা থাকে। এছাড়া রমজানে এক লাখ মেট্রিক টন ছোলার চাহিদা থাকে। এবার শুধুমাত্র অস্ট্রেলিয়া থেকে ছোলা আমদানি হয়েছে। পাইকারি বাজারে চলতি সপ্তাহে ভালো মানের ছোলা মণপ্রতি (৩৭ কেজি ৩২০ গ্রাম) বিক্রি হচ্ছে ৩৪০০ টাকায়। মাঝারি মানের ছোলা ৩১০০ থেকে ৩৩০০ টাকা এবং নিম্নমানের ২৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভোজ্যতেল মণপ্রতি ৬৫৮০ টাকা এবং পাম অয়েল ৪৮৬০ থেকে ৪৮৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপ-কমিশনার ব্যারিস্টার মো. বদরুজ্জামান মুন্সী সারাবাংলাকে বলেন, ‘রমজানের পণ্যের মধ্যে চিনি, ছোলা ও তেল গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি আমদানি হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কিছু পণ্য খালাস হয়েছে। আরও পণ্য খালাসের অপেক্ষায় আছে। এসব পণ্যবোঝাই বন্দরের পথে রয়েছে।’

ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক সিটি গ্রুপের পরিচালক (করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স) বিশ্বজিৎ সাহা সারাবাংলাকে বলেন, ‘শুধু আমরা নই, ছোট-বড় আমদানিকারকরা মিলে এবার যে পরিমাণ ভোগ্যপণ্য আমদানি করেছেন, তাতে রমজানের বাজারে কোনো সংকট হওয়ার কথা নয়; সুযোগই নেই। পণ্যের আমদানি খরচ অবশ্য বেশি, সেজন্য বাজারে প্রভাব পড়তে পারে। কিন্তু ভোক্তা পর্যায়ে চাহিদা কম, সেজন্য বাজার স্বাভাবিক থাকতে পারে। এক্ষেত্রে ট্যারিফ কমিশনের ভূমিকা মুখ্য। তারা যেভাবে দর নির্ধারণ করবে, আমরা সেভাবে বিক্রি করব।’

চট্টগ্রামের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি মেসার্স তৈয়বিয়া ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী সোলায়মান বাদশা সারাবাংলাকে বলেন, ‘ছোলার বাজার কিছুটা বাড়তি। এটা কমে যাবে। তেলের দাম স্থিতিশীল আছে। চিনির দাম কমতির দিকে। রমজানের পণ্যগুলোর কোনো ঘাটতি বাজারে নেই। আমদানি তো হচ্ছেই, আড়তেও প্রচুর মাল আছে। রমজান শুরুর আগে সবাই আড়ত থেকে মজুদ মাল ছেড়ে দেবে। তখন দাম আরও কমবে।’

তবে আড়ৎ ও বাজারে ক্রেতার সংকট আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চাহিদা অনেক কমেছে। আগে রমজান শুরুর তিন-চার মাস আগে থেকে ব্যবসায়ীরা আড়তে এসে বুকিং দিয়ে যেত। এবার কাস্টমার আসছেন না। চাহিদা কম থাকলে স্বাভাবিকভাবে দাম পড়ে যাবে। তবে জেলা প্রশাসনের মনিটরিং টিম নিয়মিত নজরদারি করলে ভালো হবে।’

সংশ্লিষ্টদের তথ্যানুযায়ী, দেশে দুই লাখ মেট্রিক টন চিনির চাহিদা থাকে রমজানে। আর বছরে চাহিদা থাকে প্রায় ২০ লাখ টন। যার ৯৫ শতাংশই আমদানি করতে হয়। দেশে আখ থেকে চিনি উৎপাদন হয় ৩০ হাজার মেট্রিক টন। বাকিটা আমদানি করেই মেটানো হয়। প্রতি মাসে গড়ে চিনির চাহিদা দেড় লাখ টন থাকলেও রমজানে বেড়ে যায়।

সারাবছর দেশে যে পরিমাণ খেজুরের চাহিদা থাকে, তার অর্ধেকই বিক্রি হয় রমজানে। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) হিসাবে, দেশে সারাবছর খেজুরের চাহিদা থাকে প্রায় এক লাখ টন। শুধু রমজানে এই চাহিদা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টন।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

আমদানি ঘাটতির শঙ্কা মাংস রমজান রেকর্ড

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর