তাড়াশে ট্রিপল মার্ডার: টাকার জন্য মামা-মামি-মামাতো বোনকে খুন
৩১ জানুয়ারি ২০২৪ ১৯:২০
সিরাজগঞ্জ: ভাগনে রাজীবের সঙ্গে ব্যবসায়িক লেনদেন ছিল মামা বিকাশের। এর জের ধরেই শুরু হয় মনোমালিন্য। ঘটনার দিন টাকা দেওয়ার কথা বলে মামার বাসায় যায় ভাগনে রাজীব। এর পর পালাক্রমে মামাতো বোন, মামি ও মামাকে হত্যা করে সে। যদিও মরদেহ উদ্ধারের ১২ ঘণ্টার মধ্যেই হত্যাকারীকে ধরে ফেলে পুলিশ। পরে পুলিশের কাছে এই ট্রিপল হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেন হত্যাকারী ভাগনে।
বুধবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. আরিফুর রহমান মন্ডল।
এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরের দিকে তাড়াশ থেকেই বিকাশের ভাগনে রাজীব কুমার ভৌমিককে (৩৫) গ্রেফতার করে পুলিশ। রাজীব সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার তেলিপাড়া গ্রামের মৃত বিশ্বনাথ ও নিহত বিকাশের বড় বোন প্রমিলা রানীর ছেলে। আগেরদিন যখন বিকাশদের খোঁজ মিলছিল না তখন তার মাশতুতো ভাই ও পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাকর্মীদের সঙ্গে রিপোর্ট করতে থানায়ও যায় রাজীব।
পুলিশ সুপার বলেন, ‘আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, হত্যাকারী রাজীব কুমার ভৌমিক (৩৫) এবং ভিকটিমরা পরস্পর আত্মীয়। ভিকটিম বিকাশ চন্দ্র সরকারের বড় বোন প্রমিলা রাণীর ছেলে রাজীব। হত্যাকারীর বাবা সরকারি চাকরি করতেন। তিনি মারা যাওয়ার পর পেনশনের টাকা দিয়ে ২০২১ সাল থেকে মামা বিকাশ চন্দ্র সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে খাদ্যশস্য কেনাবেচার ব্যবসায় যুক্ত হন রাজীব।’
তিনি বলেন, ‘ভিকটিম বিকাশ চন্দ্র সরকার তার ভাগনে রাজীর কুমার ভৌমিককে ব্যবসার পুঁজি হিসেবে ২০ লাখ টাকা দেন। এর পর ব্যবসা চলাকালীন রাজীব তার মামাকে বিভিন্ন ধাপে ব্যবসার লভ্যাংশসহ প্রায় ২৬ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু চলতি বছরে রাজীবের কাছে তার মামা বিকাশ চন্দ্র সরকার অতিরিক্ত ৩৫ লাখ টাকা দাবি করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এরপর বিকাশ চন্দ্র সরকার গত ২২ জানুয়ারি দাবিকৃত টাকা সাত থেকে আট দিনের মধ্যে ভাগনেকে ফেরত দেওয়ার জন্য অনেক চাপ দেয়। টাকার জন্য রাজীব ও তার মা’কে (ভিকটিমের বোন) ফোনে অনেক বকাবকি করে। কিন্তু রাজীব টাকা ম্যানেজ করতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং মামার বকাবকি মেনে নিতে না পেরে মামাসহ পুরো পরিবারকে হত্যার পরিকল্পনা করে।’
আরিফুর রহমান মন্ডল বলেন, ‘এরপর গত শনিবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেল ৪টা ৪৮মিনিটে মামাকে ফোন করে পাওনা টাকা নিয়ে বাসায় যেতে চায় রাজীব। ভিকটিম বিকাশ চন্দ্র তাড়াশের বাইরে থাকায় ভাগনেকে টাকা নিয়ে মামির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বলেন এবং তাদের বাসাতেই অবস্থা করতে বলেন।’
পুলিশ সুপার বলেন, ‘রাজীব যখন মামার বাসায় যায় তখন তার মামি সন্ধ্যা পূজা করছিলেন। কিন্তু মামা বাসায় অনুপস্থিত থাকার সুযোগে সে মামি ও মামতো বোন তুষিকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এক পর্যায়ে ভাগনে রাজীবকে কফি খাওয়ানোর জন্য তার মামি পূজা শেষে বাসার নিচের দোকানে কফির প্যাকেট কিনতে যায়। তখন রাজীব ব্যাগে করে আনা লোহার রড দিয়ে তার মামাতো বোনের মাথায় উপর্যুপুরি আঘাত করে। এতে তুষি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। ইতোমধ্যে তার মামি কফি কিনে বাসায় ঢুকতেই তাকেও একইভাবে রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে। মামি ও মামাতো বোনকে হামলার পর সে চলে যেতে চায়। কিন্তু ততক্ষণে তার মামা বাসায় চলে আসে। সে তখন মামাকেও একইভাবে রড দিয়ে আঘাত করে। এতে বিকাশ চন্দ্রও নিস্তেজ ও নিথর হয়ে যায়।’
তিনি বলতে থাকেন, ‘এরপর তার মামাকে গলাকেটে মৃত্যু নিশ্চিতের পর লাশ টেনে বেডরুমে নিয়ে যায়। তখন মামি ও মামাতো বোনের গোঙরানির শব্দ এলে তাদেরও গলা কেটে হত্যা করে বাইরে তালা লাগিয়ে চলে যায়। যাওয়ার পথে সে লোহার রড একটি পুকুরে ফেলে যায় এবং রক্তমাখা হাসুয়াসহ ব্যাগটি নিজ বাড়িতে রাখে।’
এসপি বলেন, ‘আমরা বিকাশের ফোন কল রেকর্ড থেকে প্রথম সূত্র পাই। এরপর ডিজিটাল তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজীবকে গ্রেফতার করি। সে আমাদের কাছে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে। তবে এটাই সত্য যে, পালাক্রমে রাজীব একাই তিন জনকে হত্যা করেছে। এরপরও আমরা যাচাই-বাছাই করছি।’ তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
প্রেস কনফারেন্সে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) মো. সামিউল আলম, উল্লাপাড়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার অমৃত কুমার সূত্রধর, জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) শাখার ওসি জুলহাজ উদ্দীন, তাড়াশ থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. নজরুল ইসলামসহ জেলা পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/পিটিএম