বিকল্প ভেন্যু রেখে স্টেডিয়ামে ফুড ফেস্টিভ্যাল, বিপাকে খেলোয়াড়রা
১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:১৭
রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটিতে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী ফুড অ্যান্ড কালচারাল ফেস্টিভ্যাল-২০২৪। ১ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি শনিবার পর্যন্ত চলবে এই উৎসব। রাঙ্গামাটি চিং হ্লা মং চৌধুরী মারী স্টেডিয়ামে প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পার্বত্য তিন জেলায় বসবাসরত ১৬ জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী বাহারি খাদ্যসামগ্রী পরিবেশন করা হবে উৎসবে।
তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড আয়োজিত এই মেলা নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে মাঠে অনুশীলন করা খেলোয়াড় ও ক্রীড়া সংগঠকদের মধ্যে। ফুড ফেস্টিভ্যাল উপলক্ষ্যে তিন দিন মাঠে অনুশীলন করা যাবে না বলে ক্ষোভ জানিয়েছে ক্রীড়া সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড আয়োজিত তিন দিনব্যাপী মেলা প্রধান অতিথি হিসেবে উদ্বোধন করবেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও খাগড়াছড়ি আসনের সংসদ সংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। অনুষ্ঠানে রাঙ্গামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদারসহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধি ছাড়াও বিভিন্ন দেশে দায়িত্বপালনকারী অবসরপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতরাও অংশ নেবেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড মেলা আয়োজন করলেও এর পরিকল্পনায় রয়েছেন বোর্ড চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমার স্ত্রী নন্দিতা খীসা।
বোর্ড সূত্র জানায়, ফুড ফেস্টিভ্যালে পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, ম্রো, তঞ্চঙ্গা, বাঙালি, অহমিয়া, খিয়াং, খুমি, গুর্খা, চাক, পাংখোয়া, বম, লুসাই, রাখাইন এবং সাঁওতালসহ ১৬টি জাতির মানুষ তাদের সুস্বাদু খাবার সামগ্রী নিয়ে ঐতিহ্যবাহী এই ফেস্টিভ্যালে অংশগ্রহণ নেবেন। ফুড অ্যান্ড কালচারাল ফেস্টিভ্যাল উপলক্ষ্যে আয়োজন করা হয়েছে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও।
এদিকে রাঙ্গামাটির খেলোয়াড়দের অনুশীলনের জন্য একমাত্র মাঠ রাঙ্গামাটি চিং হ্লা মং মারী স্টেডিয়াম। প্রতিদিন বিকেলে এই মাঠেই ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবলসহ অন্যান্য খেলার অনুশীলন করে থাকেন খেলোয়াড়রা। এ ছাড়া অনেকে হাঁটাহাঁটি-ব্যয়ামও করে থাকেন। ফুড ফেস্টিভ্যালকে কেন্দ্র করে বন্ধ থাকবে অনুশীলন ও ব্যায়াম।
ক্রীড়া সংগঠকরা জানিয়েছেন, আগামী ৭-৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাচ্ছে রাঙ্গামাটি পৌরসভা প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ। যদিও ১ ফেব্রুয়ারি থেকে খেলা শুরুর কথা ছিল। কিন্তু ফুড ফেস্টিভ্যালকে কেন্দ্র করে তা পেছানো হয়েছে। তবে সময় পেছানো হলেও ক্রিকেটাররা আগামী তিন দিন অনুশীলনের সুযোগ পাবেন না মেলার কারণে। এ ছাড়া ফুটবলসহ অন্যান্য খেলার অনুশীলনও বন্ধ থাকবে।
রাঙ্গামাটি ডায়নামিক ফুটবল ক্লাবের সদস্য হিসেবে স্টেডিয়ামে প্রতিদিন অনুশীলন করেন রিমেল চাকমা। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আজকে শেষ দিনের মতো অনুশীলন হচ্ছে। আগামী তিন দিন মেলার কারণে আমাদের অনুশীলন বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।’ একই কথা জানালেন মাঠে রিমেলের সঙ্গে অনুশীলনরত অন্যান্য খেলোয়াড়রা।
এ প্রসঙ্গে জানতে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মো. শফিউল আজমকে ফোন দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা ক্রীড়া সংস্থার এক সদস্য জানান, উন্নয়ন বোর্ড চাইলে তাদের প্রতিষ্ঠানের সামনেও এই আয়োজন করতে পারত। কিংবা বিকল্প ভেন্যু হিসেবে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট ছিল, জেলা ক্রীড়া সংস্থার জিমনেসিয়ামের পাশে খালি জায়গা ছিল। সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের ভেন্যুতে যেখানে বিজু মেলাসহ রাঙ্গামাটির বড় বড় অনুষ্ঠানগুলো হয়ে থাকে, সেখানেও করা যেত।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার ওই সদস্য বলেন, ‘ক্রীড়া সংস্থার শীর্ষ নেতৃত্বের গাফিলতির কারণেই তারা (উন্নয়ন বোর্ড) এখানে সুযোগ পেয়ে মেলা বসিয়েছে। রাঙ্গামাটিতে এমন উৎসব ও মেলা করার বিকল্প ভেন্যু থাকলেও খেলোয়াড়দের অনুশীলনের জন্য বিকল্প কোনো মাঠ নেই। এখন ক্রিকেট লিগের অনুশীলন ছাড়াও অন্যান্য খেলোয়াড়রা অনুশীলন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এটা অন্যায় হয়েছে। ডিএসএ’র কর্তারা এসব বিষয়ে সদস্যদের সঙ্গে কোনো আলোচনাই করেন না।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের উপপরিচালক ও ফুড অ্যান্ড কালচারাল ফেস্টিভ্যাল-২০২৪ আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব মংছেনলাইন রাখাইন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা খেলা বন্ধ রাখার পক্ষে না। খেলার জায়গায় খেলা চলবে। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলে আমরা খেলার মাঠের বাইরে মেলার স্টল বসিয়েছি। তিনিও মাঠের ভেতর মেলা বসাতে দেননি, আমরাও বসাইনি। এক সাইডে খেলা চলুক, আরেক সাইডে মেলা চলুক। আমরা সেভাবেই কথা বলে এই আয়োজনটা করেছি।’
ফুড ফেস্টিভ্যালের পরিকল্পনাকারী ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী নন্দিতা খীসা সারাবাংলাকে বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড তিন হিল ডিস্ট্রিক্টে উন্নয়ন করে থাকে। উন্নয়ন করা মানে তো তাদের (বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী) সঙ্গে নিয়েই উন্নয়ন করা। তাই আমিও মনে করেছি, যারা পিছিয়ে পড়া মানুষ, এটা তাদের জন্য উন্নয়নের মতোই। তাদের যদি আমরা টেনে তুলতে পারি, সবার সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে পারি, সেটাও তো একরকম উন্নয়ন। তাই বিষয়টিকে আমরা এভাবেই দেখেছি।’
সারাবাংলা/পিটিএম