আলু ক্ষেতে লেট ব্লাইট রোগের প্রকোপ, দুশ্চিন্তায় চাষিরা
২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:০৫
মেহেরপুর: ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে মেহেরপুরে আলু ক্ষেতে লেট ব্লাইট রোগের দেখা দিয়েছে। ছত্রাকনাশক ও বিষ প্রয়োগ করেও দমন করা যাচ্ছে না এ রোগ। এতে আলুর ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। এই রোগ রোধ করা না গেলে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কৃষি বিভাগ বলছে, বৈরী আবহাওয়ার কারণে এমন হয়েছে। তবে আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে এ রোগের সমস্যা থাকবে না।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় চলতি মৌসুমে ৯৩০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে। গেল মৌসুমে ভাল দাম পাওয়ায় চাষিরা এবারও আলু চাষে আগ্রহী হয়েছেন। সে অনুযায়ী চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। চাষিরা দেশি জাতের আলু আউশা, চল্লিশা, দোহাজারী লাল, পাটনাই, সাদা গুটি শীল বিলাতী ও সূর্যমূখী আবাদ করে থাকেন। উন্নত জাতের আলুরও চাষ হচ্ছে। তার মধ্যে ডায়ামন্ট, কার্ডিনাল, সিন্দুরী, ক্লিওপেট্রা বারি আলু-১ (হীরা), বারি আলু-৪ (আইলসা), বারি আলু-৭ (ডায়ামন্ট), বারি আলু-১৮ (বারাকা), বারি আলু-১৯ (বিন্টজে) এবং বারি আলু-২০ (জারলা) জাত রয়েছে। তবে দেশি জাতগুলো বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। দেখা গেছে ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে দেশি জাতের আলুর ফলন কমে যায়। বীজের মাধ্যমেই এ রোগটি ছড়িয়ে থাকে।
জেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, ক্ষেতে দেখা দিয়েছে লেট ব্লাইট রোগ। এতে গাছ মরে শুকিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই বিভিন্ন ধরনের বালাইনাশক ব্যবহার করছেন। তবে কোনো সুফল মিলছে না বলে জানিয়েছেন চাষিরা। আবার অনেকেই কি কারণে রোগ বালাই দেখা দিয়েছে তার কারণও খুঁজে পাচ্ছেন না। তবে আলুর ফলন কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে বামন্দী মটমুড়া বালিয়াঘাট হাড়াভাঙ্গাসহ সীমান্ত অঞ্চলে এ রোগের ভয়াবহতা বেশি।
কৃষকরা জানান, কৃষি অফিসের পরামর্শে ছত্রাকনাশক ও ওষুধ স্প্রে করেও কিছুটা সুফল মিলেছে। তবে কিছু আলু গাছ মরে যাওয়ার কারণে ছোট থাকতেই আলু তুলে ফেলা হচ্ছে। ফলে উৎপাদন কমে গিয়ে চার ভাগের এক ভাগ ফলন পাওয়া যাচ্ছে। এক বিঘা জমি বর্গা নিয়ে আলু আবাদ করতে ৪০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। সেখানে আলু বিক্রি করে ২০ হাজার টাকাও জমছে না।
হাড়াভাঙ্গা গ্রামের আলু চাষি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। এতে প্রায় ৮০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। ১ বিঘা জমিতে আলু ভালো আছে। বাকি ১ বিঘা আলু গাছ কিছুটা পুড়ে গেছে। এসব আলু আর তেমন ফলন হবে না। তাই বাধ্য হয়ে আলু তুলে ফেলতে হচ্ছে।’
একই কথা জানালেন আলু চাষি জুরাইস ইসলাম। তিনি জানান, তার সাড়ে চার বিঘা জমির সব আলু লেট ব্রাইট রোগে আক্রান্ত। এ মৌসুমে মোটা টাকার লোকসান হবে তার।
সদর উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের আলু চাষি জাহারুল ইসলাম বলেন, ‘এ মৌসুমে ৭৫ টাকা কেজি দরে আলুর বীজ কিনে আলু চাষ করেছি। ১ বিঘা জমি লিজ নিয়ে আলু চাষে প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। রোগাক্রান্ত আলু ছোট অবস্থায় তুলে বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে উৎপাদন কমে গেছে অর্ধেকে। এবার আলুর বাজারদর খুব ভালো ছিলো তারপর ও উৎপাদন কম হওয়াই লোকশানে পড়তে হবে।’
মেহেরপুর কৃষি প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা শামসুল আলম জানান, চলতি মৌসুমে ৯৩০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। শুরুতে আবহাওয়া ভালো থাকায় গাছ খুব ভালো হয়েছিল। কিন্তু জানুয়ারি মাসের শুরু থেকে তীব্র ঠাণ্ডা ও কুয়াশায় আলু ক্ষেতে লেট ব্লাইটের আক্রমণে গাছ মরে যাচ্ছে। যার ফলে আক্রান্ত আলুর ফলন কমে গিয়েছে। আসলে বৈরী আবহওয়ার কারণে এমনটি হয়েছে। এ আবহাওয়া কেটে গেলে এ রোগের আক্রমণ কমে যাবে। তাছাড়া চাষিদের বিভিন্ন বালাইনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সারাবাংলা/এসএমআরএ/এনএস