Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সহকর্মীকে ‘কুত্তা’ সম্বোধন, উপাচার্য বললেন এটা তাদের বিষয়

কুবি করেসপন্ডেন্ট
২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:২০

অভিযুক্ত শিক্ষক কাজী এম.আনিছুল ইসলাম

কুবি: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসানকে ‘কুত্তা’ বলে সম্বোধন করার অভিযোগ উঠেছে বিভাগীয় প্রধান (ভারপ্রাপ্ত) কাজী এম.আনিছুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ রয়েছে, গত ৩০ জানুয়ারি বিভাগীয় প্লানিং কমিটির মিটিংয়ে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সহকর্মী মাহমুদুল হাসানকে উদ্দেশ্য করে এই শব্দ ব্যবহার করেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আনিছুল ইসলাম। আরও অভিযোগ রয়েছে, আনিছুল ইসলাম বিভিন্ন সময়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মাদ আইনুল হকের সঙ্গেও বাজে আচরণ করেছেন।

বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকার স্বামীকে সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে কন্ডিশন মার্ক কমিয়ে নতুন বিধিমালা যুক্ত করার প্রস্তাব করেন বিভাগীয় প্রধান (ভারপ্রাপ্ত) কাজী এম. আনিছুল ইসলাম। তবে সেই বিধিমালা যুক্ত করার বিষয়ে আপত্তি জানায় তার সহকর্মীরা। পরে আনিছুল ইসলাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পোস্ট করা নিয়ে প্রশ্ন করেন মাহমুদুল হাসানকে।

উত্তরে মাহমুদুল হাসান কাজী এম. আনিছুল ইসলামকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমিতো কারও নাম উল্লেখ করে স্ট্যাটাস দেইনি। তাহলে আপনি কীভাবে নিশ্চিত হলেন যে আমি আপনাকে উদ্দেশ্য করে এই স্ট্যাটাস দিয়েছি। তার মানে আপনি কুত্তা নিয়ে যে স্ট্যাটাস দিয়েছেন সেটি আমাকেই বলেছেন? এসময় আনিছুল মাহমুদুল হাসানকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘হ্যাঁ আমি তোকেই বলেছি, কী করতে পারিস? কর।’

এর আগে ২৯ জানুয়ারি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের টাইমলাইনে মাহমুদুল হাসান লেখেন, ‘একজন মানুষ নৈতিক কিনা সেটা প্রকাশ পায় তার কর্মে। অন্য মানুষ যদি কাউকে নীতিবান বলে তাহলে তাকে নীতিবান হিসেবে ধরা যায়। নিজেই নিজেকে নীতিবান ঘোষণা করে নীতিবান হওয়া যায় না। আবার ফেসবুকে নীতিবান মানুষ বাস্তবে চরম নীতিহীন হতে পারে।’

একইদিনে ফিরতি স্ট্যাটাসে কাজী এম. আনিছুল ইসলাম নিজের ফেসবুকে ওয়ালে মাহমুদুল হাসানের স্ট্যাটাসকে ব্যঙ্গ করে লিখেন, “কুত্তার স্বভাব ঘেউ ঘেউ করা। কী বাজারে, কী ফেসবুকে।”

এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভাগের আরেক সহকারী অধ্যাপক মাহবুবুল হক ভূঁইয়া লেখেন, একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন আগে শিক্ষক পেটানোর ঘটনায় কোনো বিচার হয় নাই। আজ একই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক তার সহকর্মীকে ‘কুত্তা’ গালি দিয়ে আবার তাকেই বলেছেন ‘কী করতে পারবি কর’।

এর আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র শিক্ষকের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে ‘আমাকে জুতা দিয়ে মারেন’ বলে ক্ষমা চেয়ে পার পেয়েছিলেন। এই একই শিক্ষক দিন দুয়েক আগে সহকর্মী পেটানো শিক্ষককে ‘পরমাত্মীয়’ উল্লেখ করে ফেসবুকে পোস্টও দিয়েছিলেন।

ঘটনার বিস্তারিত জানতে বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহবুবুল হক ভূঁইয়ার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, একজন শিক্ষক কখনও তার সহকর্মীকে এটা সম্বোধন করতে পারেন না। এটার ভিন্ন একটা কারণ আছে।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী এবং আমি বিভাগীয় প্রধান থাকাকালীন তার আত্মীয়কে নিয়োগ দিতে আমার কাছে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়েছিল। আমি তখন সেটি নাকচ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু বর্তমান বিভাগীয় প্রধান কাজী আনিছুল ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য হাসিলে প্রক্টরের এই অবৈধ নিয়োগকে বৈধতা দিতে অ্যাকাডেমিক প্ল্যানিং কমিটিতে নিয়োগে শর্ত শিথিল করার চেষ্টা করেন। সেটি নিয়ে বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকরা রাজি না হওয়ায় পরবর্তীতে তাদের সঙ্গে এমন আচরণ করেন।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষককে এমনভাবে ক্ষমতায়িত করা হয়েছে তারা শিক্ষকদের সঙ্গে হরহামেশাই ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে আসছেন। আইন বিভাগের ঘটনা, নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকের সঙ্গে ঘটনার মতো কোনো ঘটনারই ক্যাম্পাসে বিচার হয় না। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে কয়েকজন শিক্ষকের বেপরোয়া আচরণ দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে।

যদিও প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী দাবি করেন, এই ধরনের সুপারিশ করার প্রশ্নই আসে না। কেউ যদি এটা প্রমাণ করতে পারে তাহলে আমি কালকেই বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে যাব।

এসব ঘটনায় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের আরেক সহকারী অধ্যাপক অর্ণব বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, এই ঘটনাটি একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে ঘটেছিল। অ্যাকাডেমিক একটি মিটিংয়ে উনি (মাহমুদুল হাসান) বলেছেন আপনি কি ঐ গালিটি আমাকে সম্বোধন করে বলেছেন। তখন কাজী আনিস স্যার বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি এটি আপনাকে উদ্দেশ্য করেই দিয়েছি।’ এর পরবর্তীতে মিটিং এ নানা কথাবার্তা হয়েছে৷ একপর্যায়ে তিনি (কাজী আনিছ) বলেন কী করতে পারবেন করেন।

কুত্তা বলার বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী মাহমুদুল হাসান জানান, অ্যাকাডেমিক প্লানিং কমিটির মিটিংয়ে আমরা একটা বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্তে আসতে পারতেছিলাম না। এসময় তিনি (কাজী আনিছ) আমার ফেইসবুক পোস্ট নিয়ে কথা তোলেন। তখন উনাকে আমি প্রশ্ন করি আপনি কীভাবে নিশ্চিত হলেন যে, এটা আমি আপনাকে নিয়ে বলেছি। তাহলে আপনি গত সোমবার ফেসবুকে কুত্তা বলে যে গালি দিয়েছেন সেটা কি আমাকে দিয়েছেন? তখন তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ তোকেই আমি কুকুর বলেছি, কী করতে পারবি? কর৷’ বিষয়টি নিয়ে আমি মর্মাহত। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকদের বিষয়টি জানিয়েছি। শিক্ষকরা বসে হয়ত একটি সিদ্ধান্তে আসবেন।

এদিকে নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আইনুল হকের সঙ্গেও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের অভিযোগ উঠেছে কাজী এম. আনিছুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আইনুল হক বলেন, আমার সঙ্গে কাজী আনিছ যা করেছে তা শিক্ষকসুলভ আচরণ নয়। এটি কোনো ভুল ছিল না, এটি অপরাধ। অপরাধের কোনো ক্ষমা হয় না। আমাকে অপদস্ত করার জন্যই সে আমার সঙ্গে এমন বাজে আচরণ করেছিল। বিষয়টি নিয়ে আমি এখনও বিব্রত।

অভিযোগের বিষয়ে কাজী এম. আনিছুল ইসলাম বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে সহকর্মী অভিযোগ দিয়েছেন সেটা ভিত্তিহীন। আমি আমার কোনো সহকর্মীকে কখনও ‘কুত্তা’ বলে গালি দেইনি।

এ বিষয়ে উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, এ ধরনের কোনো অভিযোগ লিখিতভাবে আসেনি। তবে সত্যি যদি একজন সহকর্মীর প্রতি এ ধরনের আচরণ হয়, সেটি অনুচিত। এটি শিক্ষক সূলভ আচরণ নয়। লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কথা হয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনের সঙ্গে। এ ঘটনায় প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেবে কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা শিক্ষকদের একান্ত আলাপ। এই সমস্ত বিষয়ে আপনি কেন আমাকে প্রশ্ন করেন?

এসময় তিনি আরও বলেন, এটা তাদের নিজেদের বিষয়। এটাতো সংবাদের বিষয়বস্তু নয়। দুইজন শিক্ষকের মধ্যে কী ধরনের কথা কাটাকাটি হয়েছে, সে বিষয়টি সাংবাদিকদের দেখার বিষয় না।

সারাবাংলা/এনইউ

কুত্তা কুবি টপ নিউজ শিক্ষক সম্বোধন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর