বইমেলায় তারুণ্যের আগ্রহ ফিকশনে
২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২৩:০৬
ঢাকা: শুরু হয়েছে অমর একুশে বইমেলা-২০২৪। আজ মেলার দ্বিতীয় দিন শুক্রবার। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় সকাল থেকেই ভিড় জমতে শুরু করে মেলা ঘিরে। সকালে শিশুপ্রহরে শিশু-কিশোর ও অভিভাবকদের আনাগোনা দিয়ে শুরু। এরপর সারাদিনই আসতে থাকেন ক্রেতা-দর্শনার্থীরা। আর ভিড়ের মধ্যে তারুণ্যের আধিক্যই চোখে পড়ে বেশি। আর তরুণ পাঠকদের অধিক আকর্ষণ ফিকশনধর্মী বা কল্পকাহিনিনির্ভর লেখায়। থ্রিলার এবং গোয়েন্দাকাহিনী যেমন তাদের প্রধান আকর্ষণ তেমনি উপন্যাস আর কবিতার ক্রেতাও কম নয়।
শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) একুশে বইমেলার দ্বিতীয় দিন মেলায় বিভিন্ন প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি ও তরুণদের সঙ্গে কথা বলেও এমন চিত্রই দেখা গেল। তরুণদের পছন্দ দেখে শুধু থ্রিলার ছাপিয়েছেন তা না, সব শ্রেণির পাঠকের জন্যই নানা ধরনের বই এনেছে প্রকাশনীগুলো।
জানা গেল, তরুণরা যেমন ফিকশন বেশি পছন্দ করেন, তেমনি রাজনীতি, সমাজনীতি, ইতিহাস, জীবনী, প্রবন্ধজাতীয় বইয়ের ক্রেতাও কম নয়। যে যার পছন্দমত বই এসে চাইলেই দেখাচ্ছেন বিক্রয় প্রতিনিধিরা।
আফতাবনগর থেকে বান্ধবীর সঙ্গে মেলায় এসেছেন ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী জারিন। জাফর ইকবালের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি কিনেছেন তিনি। জানালেন থ্রিলার, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিই ভালো লাগে তার। শিখা প্রকাশনী থেকে ভাগ্নে-ভাগ্নিদের জন্য থ্রিলার আর ভূতের বই দেখছিলেন তিলক বড়ুয়া। বললেন নিজের জন্য নানা ধরনের বই কিনলেও ভাগ্নে-ভাগনিদের জন্য এসব বইই কেনেন বইমেলায় এলে। তরুণদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল তারা দেশি লেখকদের পাশাপাশি বিদেশি লেখকদের অনুবাদগুলোও পছন্দ করেন। আগে থেকে ঠিক করে রাখা লেখকদের বই যেমন কিনছেন তেমনি মেলায় এসে কারও লেখা ভালো মনে হলে সেগুলোও কিনছেন বা পরে কেনার জন্য তালিকা করে রাখছেন।
সময় প্রকাশনীর একজন বিক্রয় প্রতিনিধি জানালেন তারা সব বয়সী ও রুচির পাঠকদের কথা মাথায় রেখেই বই প্রকাশ করেন। অনেক তরুণরা কিনলেও মূলত মধ্যবয়স্ক বা বয়স্ক পাঠক রাজনৈতিক, গবেষণাধর্মী, ঐতিহাসিক বই কেনেন। উপন্যাসও অনেকে কেনেন। তবে একদম অল্পবয়সী তরুণ যাদের বয়স বিশের কোঠায় তাদের প্রধান আকর্ষণ থ্রিলার আর ফিকশনে। একই বক্তব্য পাওয়া গেল ঐতিহ্য, বিদ্যাপ্রকাশ, শিখা প্রকাশনীসহ আরও কিছু প্রকাশনীতে।
ফিকশনের পাশাপাশি কবিতার প্রতিও আগ্রহী দেখা গেল তরুণ পাঠকদের। অনেক স্টল ও প্যাভিলিয়নে কবিতার বই নেড়েচেড়ে দেখতে দেখা গেল তাদের। কবিতার বইয়ের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র পরিচিত কবিই নন, বই নেড়েচেড়ে কবিতা ভালো লাগলে নিতান্ত অপরিচিত লেখকদের বইও তারা কিনছেন। এক্ষেত্রে বিক্রয় প্রতিনিধিরাও সাহায্য করছেন। চকবাজার থেকে বইমেলায় এসে প্রেমের কবিতার বই খুঁজছিলেন আকাশ, এমদাদ, কাউসার আর তাজবীন। পছন্দমতো বই কিনেছেনও তারা। লেখককে চেনেন না কিন্তু বই উলটে ভালো লাগায় কিনেছেন। কবিতার বই কেন জানতে চাইলে ২০ থেকে ২৪ বছরের এই তরুণরা বলেন, প্রেমের কবিতা ভালো লাগে। মুখস্ত করে কাউকে শোনালে তারা মুগ্ধও হয়। কবিতা ভালো লাগে বলে বইমেলায় তারা আর কোনো বই দেখেন না। খুঁজে খুঁজে শুধু কবিতার বইই দেখেন ও কেনেন।
তবে ভিন্নধর্মী বইয়েও আগ্রহী অনেক তরুণ। যেমন সৌম্য প্রকাশনীতে পাওয়া যাবে বাম ঘরানার বই। অন্যান্য উপন্যাস, শিশুতোষ বই পাওয়া গেলেও এখানে নানারকম গবেষণাধর্মী বইও রয়েছে। জানা যায়, এখানে পাঠক নির্দিষ্ট। তারা এসে নির্দিষ্ট লেখকের বইটিই খোঁজেন। আবার যেসব তরুণ বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন, কিন্তু বইয়ের বিষয়বস্তু দেখে তারাও কিনছেন গবেষনাধর্মী এসব বই।
বইমেলার দ্বিতীয়দিনে এখনও সব স্টল ও প্যাভিলিয়ন প্রস্তুত হয়নি। এদিকে ওদিকে এখনও চলছে কাজ। তবে মোটামুটি সব স্টলই সাধ্যমত সাজিয়ে বইয়ের পসরা নিয়ে এসেছেন। বইমেলা উপলক্ষে নতুন বইয়েরও ছড়াছড়ি। ঢাকা ক্রিয়েটিভ পাবলিকেশন্স নতুন বই এনেছে ৪০টি। বিক্রয় প্রতিনিধি জানালেন, সকাল থেকে ক্রেতা কম। আশা মেলার বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতাও বাড়বে। বিদ্যাপ্রকাশে নতুন বই ৪৪ টি। সেখানেও আজ ক্রেতা কম। ঐতিহ্য এনেছে ২৩০ টি নতুন বই। সময় প্রকাশনে অনুবাদসহ ৪৮ টি নতুন বই। জানা যায় সব বই আজ থেকেই পাওয়া যাচ্ছে এমন নয়। যেগুলো বাদ আছে সেগুলোর মেলাজুড়ে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশ হবে।
বইমেলার দ্বিতীয় দিন অন্যান্য শুক্রবারের তুলনায় পাঠক-ক্রেতা কম থাকলেও মেলাজুড়ে দেখা যায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। ভিড়ে চিড়েচ্যাপ্টা হওয়ার দশা না হলেও ভিড় করেই বই দেখছেন ক্রেতা-দর্শনার্থীরা। তাদের আশা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও জমজমাট হবে বইমেলা।
সারাবাংলা/আরএফ/একে