জিআই স্বীকৃতি কী-কেন-কীভাবে, এর গুরুত্বই বা কতটুকু
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:৪৭
ঢাকা: অবশেষে ‘টাঙ্গাইল শাড়ি’র ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পথ সুগম হয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন প্যাটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদফতরে (ডিপিডিটি) এর জিআই স্বীকৃতির আবেদন করা হয়েছিল। সেই আবেদন প্রকাশ করা হয়েছে জিআই জার্নালে। আগামী দুই মাসে এই আবেদনের বিপক্ষে কোনো অভিযোগ জমা না পড়লে জিআই সনদ পেয়ে যাবে টাঙ্গাইল শাড়ি। বাংলাদেশের নিজস্ব পণ্য হিসেবে এর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে বিশ্ব দরবারে।
টাঙ্গাইল শাড়ির হাত ধরেই জিআই পণ্যের স্বীকৃতি নতুন করে এসেছে আলোচনায়। ভারতের শিল্প মন্ত্রণালয় ‘টাঙ্গাইল শাড়ি অব বেঙ্গল’কে তাদের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিলে তা বিতর্ক উসকে দিয়েছিল। টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ির যে ঐতিহ্য বাংলাদেশের তার জিআই স্বত্ব ভারতের দখলে চলে যাওয়া নিয়েই অনলাইন-অফলাইনে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।
এখন বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয়ের ডিপিডিটি টাঙ্গাইল শাড়িকে নিজেদের জিআই পণ্য হিসেবে জার্নালভুক্ত করায় এবং ভারতের জিআই পণ্য স্বীকৃতির দাবিকে আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব বিষয়ক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি রাইটস অরগানাইজেশনে (ডব্লিউআইপিও) চ্যালেঞ্জ করার সিদ্ধান্তে সেই বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে টাঙ্গাইল শাড়ির স্বত্ব বাংলাদেশের করে নেওয়ার পথ তৈরি হয়েছে। কিন্তু কী এই জিআই স্বীকৃতি? এই স্বীকৃতি পাওয়ার প্রক্রিয়া কী? কোনো পণ্য জিআই স্বীকৃতি পেলে সুবিধাই বা কী? এসব প্রশ্ন অনেকের মনেই ঘুরপাক খাচ্ছে। সেই বিষয়গুলোই জেনে নেওয়া যাক একনজরে।
আরও পড়ুন- টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বীকৃতির আবেদন প্রকাশ পেল জার্নালে
জিআই কী ও কেন?
এমন অনেক পণ্য খাদ্যপণ্য আছে যা কেবল একটি নির্দিষ্ট এলাকাতেই উৎপাদন হয়। ওই একই পণ্য অন্য কোনো এলাকায় উৎপাদন হলে একই স্বাদ পাওয়া যায় না। যেমন— বগুড়ার দই, ইলিশ কিংবা দার্জিলিংয়ের চা। এসব পণ্যের গুণমান, স্বাদ-গন্ধ যেন এলাকার মাটি-জল-বায়ু ও মানুষের একান্ত নিজের।
কেবল খাদ্যপণ্যই নয়, কৃষি পণ্য, হস্তশিল্প বা শিল্পজাত অনেক পণ্যও রয়েছে, যেগুলো সুনির্দিষ্টভাবে কোনো এলাকার একান্ত নিজস্ব। এমনকি ওই এলাকার ভৌগলিক অবস্থান এবং জলবায়ুর সঙ্গেও এসব পণ্য সম্পর্কিত। এসব পণ্যকে ওই এলাকার পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যবস্থাই হলো ভৌগলিক নির্দেশক বা জিআই (জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন)।
সংক্ষেপে বলা যায়, ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই) হলো মেধা সম্পত্তি অধিকারের একটি কাঠামো, যা পণ্যকে কোনো একটি নির্দিষ্ট ভৌগলিক অবস্থান থেকে উদ্ভূত হিসেবে চিহ্নিত করে এবং এটি সুনির্দিষ্ট করে যে পণ্যের গুণাবলী, খ্যাতি বা বৈশিষ্ট্যগুলো মূলত ওই অঞ্চলের অধিকার। কৃষি পণ্য, খাদ্যদ্রব্য, হস্তশিল্প ও শিল্পজাত পণ্যগুলোর ক্ষেত্রে জিআই প্রযোজ্য হয়।
জিআইয়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো— পণ্যের গুণমান, খ্যাতি বা বৈশিষ্ট্যগুলোকে একটি নির্দিষ্ট ভৌগলিক এলাকার সঙ্গে সংযুক্ত করে। এর লক্ষ্য উৎপাদকদের স্বার্থ রক্ষা করা এবং আঞ্চলিক পণ্যের স্বাতন্ত্র্য প্রচার করা। এ ছাড়া জিআই একটি নির্দিষ্ট স্তরের গুণমান, উৎপাদনের ঐতিহ্যগত পদ্ধতি বা ভৌগলিক এলাকার সঙ্গে যুক্ত অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলোকেও ধারণ করে। জিআই কোনো পণ্যের অননুমোদিত ব্যবহার প্রতিরোধে সহায়তা করে। পণ্যের অনন্য গুণাবলির জন্য বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি নিশ্চিত করে জিআই।
আরও পড়ুন- জিআই সনদ পাচ্ছে টাঙ্গাইল শাড়িসহ ৬ পণ্য
সামগ্রিকভাবে বলা যায়, জিআই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ, গ্রামীণ অর্থনীতিকে সহায়তা ও নির্দিষ্ট অঞ্চলের সঙ্গে জুড়ে যাওয়া পণ্যের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অনেক দেশ জিআই নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষার জন্য আইনি কাঠামো প্রতিষ্ঠা করেছে। আইনি কাঠামোতে রেজিস্ট্রি, মানদণ্ড নির্ধারণ করা ও প্রয়োগকারী ব্যবস্থার রূপরেখা থাকে। আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব বিষয়ক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি রাইটস অরগানাইজেশনের (ডব্লিউআইপিও) নিয়ম অনুসরণ করে এই জিআই পণ্যের স্বীকৃতি দিতে হয়।
জিআই বা ভৌগলিক নির্দেশক কয়েকটি পণ্যের উদাহরণ হলো— শ্যাম্পেন, পারমিগিয়ানো-রেগিয়ানো পনির, দার্জিলিং চা, ইলিশ, রোকফোর্ট পনির। এই নামগুলো ওই অঞ্চলের জন্য সুরক্ষিত। শুধুমাত্র মনোনীত অঞ্চলগুলো থেকে তৈরি পণ্যগুলোই জিআই লেবেল ব্যবহার করতে পারবে। বাংলাদেশের প্রথম পণ্য হিসেবে জিআই স্বীকৃতি পায় জামদানি শাড়ি। এই তালিকায় এখন পর্যন্ত ২১টি পণ্য রয়েছে, যার সর্বশেষটি হলো কুষ্টিয়ার তিলের খাজা। টাঙ্গাইল শাড়িও এই তালিকায় যুক্ত হচ্ছে দুই মাস পর।
জিআই স্বীকৃতির সূচনা
পণ্যের উৎস ও খ্যাতি সুরক্ষায় জিআই নামক ধারণাটির ঐতিহাসিক শিকড় রয়েছে। পণ্যকে ভৌগলিক উৎসের সঙ্গে সংযুক্ত করার ধারণাটি শতাব্দী প্রাচীন। বিভিন্ন অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরে তাদের পণ্যের সত্যতা ও খ্যাতি রক্ষা করার চেষ্টা করে আসছিল।
১৯ শতকের শেষের দিকে শ্যাম্পেন উৎপাদনকারীরা তাদের স্বাতন্ত্র্য রক্ষার জন্য আইনি ব্যবস্থার দাবি তোলে। তখনই মূলত জিআই সুরক্ষা ধারণাটির আলোচনা শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ফ্রান্স এবং অন্যান্য দেশের মধ্যে ১৮৯১ সালে একটি শ্যাম্পেন চুক্তি হয়। চুক্তিটি ‘শ্যাম্পেন ট্রিটি অব ১৮৯১’ বা ‘মাদ্রিদ এগ্রিমেন্ট’ হিসেবে পরিচিত। এর মাধ্যমে জিআই-এর প্রথম ভিত রচিত হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুগে ওয়াইন ও স্পিরিটের ভৌগোলিক নির্দেশক সুরক্ষা চুক্তি আন্তর্জাতিক জিআই কাঠামোর আইনি নীতিমালা মজবুত করে। ১৯৪৭ সালে শুল্ক ও বাণিজ্য সম্পর্কিত সাধারণ চুক্তিতে (জিএটিটি) জিআই সম্পর্কিত বিধানগুলো অন্তর্ভুক্ত হয়।
আরও পড়ুন- টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বীকৃতি পেতে আবেদন
জিআইয়ের ইতিহাসে ১৯৯৪ সাল একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। ওই বছর বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) অধীনে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি অধিকারের (টিআরআইপিএস) বাণিজ্য-সম্পর্কিত চুক্তি হয়। ট্রিপস চুক্তিতে জিআইয়ের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং তা সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক মান প্রতিষ্ঠা করা হয়।
জিআই-সুরক্ষা কাঠামো গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তারা পণ্যের প্রোটেক্টেড ডেজিনেশন অব অরিজিন (পিডিও) এবং প্রোটেক্টেড জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশনের (পিজিআই) মতো মানসম্পন্ন নীতিমালা চালু করে। এসব নীতিমালার মডেল পরে অন্যান্য অঞ্চলও অনুসরণ করে। এসব নীতিমালা পণ্যগুলোকে রক্ষার পাশাপাশি গ্রামীণ উন্নয়ন ও টেকসই কৃষিতেও অবদান রাখে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওয়াইন ও স্পিরিটের বাইরে অন্যান্য পণ্যেও জিআইয়ের প্রসার ঘটে। কৃষিপণ্য, খাদ্যসামগ্রী, হস্তশিল্প ও শিল্প সামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্য যুক্ত হয় জিআই পরিসরে। লিসবন চুক্তির মতো আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলো জিআইকে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি ও সুরক্ষায় অবদান রেখেছে। বর্তমানে ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি রাইটস অরগানাইজেশনের (ডব্লিউআইপিও) নিয়ম মেনে জিআই পণ্যের স্বীকৃতি দিতে হয়।
জিআই ও ট্রেডমার্কের পার্থক্য
জিআই ও ট্রেডমার্ক দুই ব্যবস্থাই পণ্যের মেধাস্বত্ব রক্ষায় কাজ করে। কিন্তু জিআই ও ট্রেডমার্কের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে।
জিআই মূলত কোনো পণ্যের এমন বৈশিষ্ট্য বা নির্দেশকগুলো সুরক্ষিত করে যা ওই পণ্য উৎপাদনের ভৌগলিক অবস্থানের সঙ্গে সম্পর্কিত। অর্থাৎ পণ্যের মান, খ্যাতি ও বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে ভৌগলিক অবস্থানের যে সম্পর্ক, তা সুরক্ষিত করে জিআই। অন্যদিকে ট্রেডমার্ক কোনো পণ্যের নির্দিষ্ট নির্দেশক যেমন— নাম, লোগো বা প্রতীককে আইনি সুরক্ষা দেয়। ট্রেডমার্ক কোনো ব্র্যান্ড নাম, স্লোগান বা ব্যবসার সঙ্গে সম্পর্কিত অন্য যেকোনো বিশেষত্বকেও রক্ষা করে।
জিআই পণ্যের ভৌগলিক উৎস ও ওই অঞ্চলের কারণে পণ্যের গুণমান সম্পর্কিত বিষয়ের আইনি সুরক্ষা দেয়। তবে একই ধরনের পণ্য অন্য কোনো অঞ্চলেও তৈরি হতে পারে। এতে জিআই কোনো প্রভাব ফেলে না। কিন্তু যদি ওই অঞ্চলের বাইরে তৈরি পণ্য ওই অঞ্চলের তৈরি বলে দাবি করে, তাহলে জিআই আইনি সুরক্ষা দেয়। অন্যদিকে ট্রেডমার্ক করা কোনো প্রতীক, লোগো, নাম বা অন্য যেকোনো চিহ্ন কেবল ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রার করা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানই ব্যবহার করতে পারে।
জিআইয়ের মালিকানা সাধারণত কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের একটি গোষ্ঠী বা সংস্থার নামে হয়ে থাকে। জিআইয়ের মাধ্যমে কোনো পণ্যের ওপর কোনো সম্প্রদায়, জাতি বা দেশের অধিকার সম্মিলিতভাবে রক্ষা করা হয়। জিআই কোনো ব্যক্তির একার হয় না। অন্যদিকে ট্রেডমার্ক কোনো ব্যক্তি বা কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান তার পণ্য বা প্রতীকের জন্য আলাদাভাবে নিতে পারে।
জিআই সনদ পেলে কী সুবিধা?
কোনো অঞ্চলের পরিবেশ, জলবায়ু ও সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলো যখন কোনো পণ্য উৎপাদনে ভূমিকা রাখে এবং ভৌগোলিক ও ঐতিহ্যগতভাবে ওই পণ্যকে নিজস্ব হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যায়, তাহলে সেটিকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সাধারণত দেশের অধিকারে জিআই স্বত্ব থাকে।
কোনো পণ্য জিআই স্বীকৃতি পেলে সেটিকে বৈশ্বিকভাবে বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ডিং করা সহজ হয়। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারে ওই পণ্যের বাড়তি কদর তৈরি করা সম্ভব হয়। এর ফলে বাড়তি চাহিদা তৈরি হলে ওই পণ্যের উৎপাদনও বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হয়।
জিআই সনদ থাকলে সেই পণ্যের বাণিজ্যিক উৎপাদনের অধিকার ও আইনি সুরক্ষাও ওই দেশের অধীনেই থাকে। অন্য কোনো দেশ তখন ওই পণ্যের মালিকানা বা স্বত্ব দাবি করার সুযোগ পায় না। ফলে উৎপাদকের বাণিজ্যিক বা আর্থিক নিরাপত্তাও নিশ্চিত হয়।
জিআই সনদ পেতে হয় যেভাবে
ডব্লিউআইপিওর নিয়ম অনুসরণ করে বাংলাদেশে ২০১৩ সালে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন প্রণয়ন করা হয়। ২০১৫ সালে তৈরি হয় সেই আইনের বিধিমালা। এই আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী জিআই পণ্যের নিবন্ধনের জন্য কোনো ব্যক্তিসংঘ, প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনকে আবেদন করতে হয় ডিপিডিটিতে। ওই পণ্যটি কেন জিআই পাওয়ার উপযুক্ত, সে সম্পর্কিত পর্যাপ্ত প্রমাণ ও তথ্য-উপাত্ত সংযুক্ত করতে হয় আবেদনের সঙ্গে।
আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পর তা যাচাই-বাছাই ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ডিপিডিটি। আবেদনের মধ্যে কোনো ভুল থাকলে তা পরিবর্তন বা সংশোধনের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয় আবেদনকারীকে। এইসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আবেদনটি গ্রহণযোগ্য মনে করলে ডিপিডিটি সেই আবেদন প্রকাশ করে জিআই জার্নালে।
এরপর অপেক্ষা দুই মাসের। এই সময়ের মধ্যে ওই পণ্যের আবেদনকে চ্যালেঞ্জ বা সেই আবেদনের বিরোধিতা করার সুযোগ থাকে। বিরোধিতা বা চ্যালেঞ্জ হলে সেটি বিবেচনায় নিয়ে আবেদন নতুন করে পর্যালোচনা করা হয়। বিরোধিতা গ্রহণযোগ্য হলে আবেদন বাতিল করা হয়। আর তা না হলে কিংবা কোনো বিরোধিতা না থাকলে দুই মাস পর ওই পণ্যটিকে জিআই সনদ দেওয়া হয়, যা তার জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্তির চূড়ান্ত ধাপ। এ সময় পণ্যটি জিআই স্বীকৃতি পেয়ে যায়।
দেশের ২১ পণ্য পেয়েছে জিআই স্বীকৃতি
২০১৬ সালে জামদানি শাড়ি দেশের প্রথম পণ্য হিসেবে জিআই স্বীকৃতি পায়, তা আগেই বলা হয়েছে। এরপর সেটিসহ এখন পর্যন্ত ২১টি পণ্যকে জিআই স্বীকৃতি দিয়েছে ডিপিডিটি। এই তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের ইলিশ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আম, বিজয়পুরের সাদামাটি, দিনাজপুরের কাটারিভোগ, বাংলাদেশের কালোজিরা, রংপুরের শতরঞ্জি, রাজশাহীর সিল্ক, ঢাকার মসলিন, বাংলাদেশের বাগদা চিংড়ি, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম, বাংলাদেশের শীতলপাটি।
জিআই স্বীকৃতি পাওয়া পণ্যের মধ্যে আরও রয়েছে— বগুড়ার দই, শেরপুরের তুলসীমালা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া আম, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আশ্বিনা আম, বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, নাটোরের কাঁচাগোল্লা, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম, কুমিল্লার রসমালাই, কুষ্টিয়ার তিলের খাজা।
জিআই পণ্যের তালিকা সমৃদ্ধ হচ্ছে
ধীরে ধীরে দেশের জিআই পণ্যের তালিকা সমৃদ্ধ করার দিকে মনোযোগী হয়েছে সরকার। সম্প্রতি দেশের সব জেলার জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তারা যেন তাদের নিজ নিজ জেলার উপযুক্ত পণ্যগুলোর জিআই স্বীকৃতির জন্য আবেদন করেন। এ নির্দেশনার পর আবেদনের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে।
ডিপিডিটির তথ্য বলছে, কয়েকটি পণ্যের জিআই স্বীকৃতির আবেদন তাদের কাছে জমা রয়েছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। এর মধ্যে রয়েছে যশোরের খেজুর গুড়, গোপালগঞ্জের রসগোল্লা, নরসিংদীর অমৃত সাগর কলা, নরসিংদীর লটকন ও রাজশাহীর মিষ্টি পান। এই পণ্যগুলোও শিগগিরই জিআই স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে।
এর বাইরেও জিআই পণ্যের স্বীকৃতির জন্য আবেদন জমা পড়েছে আরও কয়েকটি পণ্যের। সেগুলো হলো— জামালপুরের নকশীকাঁথা, মধুপুরের আনারস, সুন্দরবনের মধু, মৌলভীবাজারের আগর-আতর, রংপুরের হাড়িভাঙ্গা আম, মুক্তাগাছার মণ্ডা, শেরপুরের ছানার পায়েস, ভোলার মহিষের কাঁচা দুধ ও নওগাঁর নাগ ফজলি আম। দিনাজপুরের লিচুও আবেদনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
ডিপিডিটির মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসান গণমাধ্যমকে বলেছেন, ডিপিডিটির উদ্যোগের কারণে এখন জিআই পণ্যের জন্য আবেদনের সংখ্যা বেড়েছে। আমাদের লক্ষ্য, এ বছর জিআই পণ্যের তালিকাকে ১০০-তে নিয়ে যাওয়া।
সারাবাংলা/আইই/টিআর
জিআই পণ্য জিআই স্বীকৃতি টাঙ্গাইল শাড়ি ডিপিডিটি ফজলি আম বাংলাদেশের ইলিশ ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য