Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘মিয়ানমারের ১৪ সীমান্তরক্ষী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৬:১৯

ঢাকা: বান্দরবানের তমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে ভয়াবহ যুদ্ধ চলছে। বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধে কোণঠাসা হয়ে মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর ১৪ জন সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। তারা যুদ্ধ নয়, আত্মরক্ষার জন্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

বাংলাদেশ যুদ্ধ চায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যদি তারা গায়ে এসে পড়ে, তাহলে আমরাও ছেড়ে দেব না। বর্তমান পরিস্থিতিতে সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কোস্টগার্ড ও পুলিশ বাহিনীকেও।’

বিজ্ঞাপন

রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমারে নানা ধরনের বিদ্রোহ লেগেই আছে। সম্প্রতি আমরা দেখছি ‘আরাকান আর্মি’ নামের এক বিদ্রোহী গ্রুপ রাখাইন থেকে শুরু করে একে একে সেনাবাহিনীর অনেক স্থান দখল করে নিয়েছে। ক্রমাগত তারা শক্তিশালী হয়ে আরও সামনের দিকে যাচ্ছেন এটা আমরা শুনেছি। সেখানে আর্মির সঙ্গে ‘আরাকান আর্মি’র যুদ্ধ চলছে।”

‘এদিকে মিয়ানমারের যে বর্ডার গার্ড সেটা মিয়ানমার সরকার তাদের বর্ডার গার্ড পুলিশ বলে। সে পুলিশ মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষা করে চলে। তাদের ঘাঁটিগুলোও একের পর এক আরাকান আর্মি দখল করে নিচ্ছে। আমাদের সীমান্তের সঙ্গে যেটা ছিলো সেগুলোও দখল করে নিয়েছে। আত্মরক্ষার্থে তাদের বর্ডার গার্ড পুলিশ আমাদের সীমানায় ঢুকে আমাদের কাছে আশ্রয় নিয়ে সহযোগিতা চেয়েছে। আমাদের বিজিবি তাদের অস্ত্র জমা রেখে তাদের আটক রেখেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে, যাতে তারা তাদের পুলিশ সদস্যদের নিয়ে যায়।’

বিজ্ঞাপন

বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের নিরাপত্তার জন্য কতটা ঝুঁকি, এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দেখুন আমরা কোনো যুদ্ধে জড়াতে চাই না। আমরা যুদ্ধ চাই না, প্রধানমন্ত্রী সব সময় সেই নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। তার মানে এই নয়, আমাদের গায়ের ওপরে পড়ে যাবে আর আমরা ছেড়ে দেবো সেটা নয়। আমাদের সব সময় তৈরি আছি। সীমান্তে আমাদের বিজিবির শক্তি বাড়ানো হয়েছে। আমাদের পুলিশ বাহিনীকেও বলে দিয়েছি, আমাদের কোস্টগার্ডকেও নির্দেশনা দিয়েছি যাতে কোনোভাবে আর কেউ আমাদের সীমানায় অনুপ্রবেশ না করতে পারে। সে বিষয়ে আমরা সতর্ক রয়েছি।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমারে যে যুদ্ধ চলছে, এখন এই যুদ্ধ কতদিন চলবে জানি না। তবে যাতে আমাদের সীমানা ক্রস করে কেউ আসতে না পারে বিজিবিকে আমরা সেই নির্দেশনা দিয়েছি।’

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সেনাদের অস্ত্র জমা নিয়েছেন বিজিবি সদস্যরা

মিয়ানমারের যে ১৪ বিপিজি সদস্য বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করেছে তারা কীভাবে এসেছে এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘অস্ত্র হাতে নিয়েই তারা ঢুকেছে। আত্মরক্ষার্থে তারা ঢুকেছে। এটা হতেই পারে। তারা আত্মরক্ষার্থে বাংলাদেশ সীমান্তে ঢুকেছে, কোনো যুদ্ধ করতে আসেনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘তাদের ফেরত পাঠাতে এরই মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। তবে যুদ্ধের সময় অন্য কেউ যদি এভাবে বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করে, তাহলে তাদের আটক রেখে ফেরত পাঠাতে হবে। কেউ ঢুকে গেলে ফেরত পাঠানো ছাড়া তো আর কোনো করণীয় কিছু থাকে না। আমাদের সিদ্ধান্ত হলো এই সীমানায় এখন যুদ্ধ চলছে। এখানে কারও আসা উচিত হবে না। এখানে আর কাউকে ঢুকতে দেবো না। এখানে মানবাধিকারের কোনো প্রশ্নও আসে না, কারণ এ সীমানায় যুদ্ধ চলছে। আমরা তো কাউকে চিনি না, যে প্রবেশ করবে তাকেই আমরা আটক করে ফেরত পাঠাবো।‘

রোহিঙ্গাদের মতো মিয়ানমার সরকার যদি তাদেরও (১৪ সেনাসদস্য) ফেরত না নেয় তাহলে কী করণীয়, এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘কেন ফেরত নেবে না। তারা তো সরকারের ফোর্স, অবশ্যই ফেরত নেবে। আমরা এরই মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছি। আশা করছি দ্রুতই তাদের পাঠিয়ে দিতে পারবো।’

মিয়ানমানের বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বাধাগ্রস্ত হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সেটা হতেই পারে। একটা অস্থির পরিবেশ সেখানে চলছে। প্রক্রিয়া যেটা চলছে সেটাও বিভিন্ন কারণে দেরি হয়েছে। এরসঙ্গে এই বিষয়টাও যোগ হচ্ছে, এটা বুঝতে পারছি। কিন্তু আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি, সবর্ত্র সেটা বলছি। এ বিষয়ে আমরা কোনো চেষ্টা বাদ রাখিনি।’

সারাবাংলা/জেআর/এমও

তমব্রু সীমান্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর