Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাজার নিয়ন্ত্রণ, দুর্নীতি দমনসহ সচিবদের প্রতি একগুচ্ছ নির্দেশ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:১১

ঢাকা: আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, দুর্নীতি দমন ও বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণসহ সচিবদের প্রতি একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছেন নির্বাহী বিভাগের প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা সচিবদের নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ সব নির্দেশনা দেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। আজকের বৈঠকে ১৫ থেকে ১৬ জন সচিব বক্তব্য দেন। তাদের মধ্যে ১১ জন সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর আলোচনা করেন।

বিজ্ঞাপন

বিকেলে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বৈঠকের বিষয়বস্তু সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। তিনি বলেন, “দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী ‘জিরো টলারেন্সের’ কথা বলেছেন। দুর্নীতি দমনের দায়িত্ব শুধু দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) না। দুর্নীতি নিরসন ও প্রতিরোধের দায়িত্ব প্রতিটি মন্ত্রণালয়েরও। তাই যেখানে যেখানে ‘সার্ভিস পয়েন্ট’ আছে, সেখানে নজরদারি বা ভিন্নতর কৌশল অবলম্বন করে যে প্রক্রিয়া নেওয়া দরকার, তা নিয়ে দুর্নীতি দমনকে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।”

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখার পাশাপাশি বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী নজরদারি করতে বলেছেন। নজরদারির ক্ষেত্রে তিনি একটা সুনির্দিষ্ট এরিয়ার কথা বলেছেন যে, অনেক সময় আমাদের দ্রব্যমূল্যের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন পর্যায়ে চাঁদাবাজির প্রসঙ্গ আসে, নিউজ আসে। এটির ক্ষেত্রে তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে খুবই শক্তভাবে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন, যেন এটি কোথাও না হয়।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে একটি বিষয়ের দিকে নজর দিতে বলেছেন। বিশেষ করে ছিনতাই, কিশোরগ্যাং বা এ রকম যেসব অপরাধ হচ্ছে সেক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে কমিটি গঠন করে নজর দিতে বলেছেন।’

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় যেন অহেতুক না বাড়ে। সেজন্য আগে থেকেই পূর্ণাঙ্গ প্ল্যান করে প্রকল্প নিতে হবে। প্ল্যানিং কমিশন একটি নতুন সফটওয়্যার করে সেটির পাইলটিং করছে। পাইলটিং শেষ করে দ্রুত যেন এই সফটওয়্যারের আওতায় যেন প্রকল্প নেওয়া হয় সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন।

প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যে প্রকল্পগুলো জনগণের কল্যাণে ব্যবহৃত হবে, জনগণ উপকার পাবে সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে। তিনি বলেছেন যে, তার মূল লক্ষ্য হলো জনমানুষের অবস্থার উন্নতি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মুদ্রাস্ফীতি জিডিপি গ্রোথের নিচে থাকতে। এটি নিয়ে কাজ করতে হবে। এখনও বিরাট সংখ্যক ব্যক্তি যাদের আয়কর দেওয়ার কথা তারা আয়করের আওতায় আসেনি। তারা যেন আয়করের আওতায় আসে।’

বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য প্রধানমন্ত্রী পদক্ষেপ নিতে বলেছেন জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘অহেতুক যেন তারা হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে নজর রাখতে বলেছেন। বিনিয়োগ আসতে কোনো জটিলতা হলে তা যেন নজরে নেওয়া হয়। কোনো কারণে যদি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) ভালোভাবে নেবেন না। মধ্যপ্রাচ্য, পূর্ব ইউরোপ, পূর্ব এশিয়া এবং আফ্রিকায় নতুন বাজার খোঁজার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এক্ষেত্রে সহযোগিতার প্রয়োজন হলে যেন তা দেওয়া হয়।’

‘বিদ্যুৎ, জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য বলেছেন। বিশেষ করে সেচ মৌসুমে সতর্কতার সাথে ব্যবহার করতে বলেছেন। কোনোভাবে যেন সেচ মৌসুম বাধাগ্রস্ত না হয় সেটির খেয়াল রাখতে বলেছেন। সেচের ক্ষেত্রে সোলার এনার্জি ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়েছেন।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এরইমধ্যে তিনি যে উন্নয়ন করেছেন সেটির যেন ধারাবাহিকতা থাকে, সাসটেইন থাকে। এটির দিকে খেয়াল রেখে নতুন প্রকল্প বা কার্যক্রম নিতে বলেছেন। এরইমধ্যে যে উন্নয়ন করেছেন সেটি যেন হারিয়ে না যায়। নতুন পাঠ্যক্রমের বিষয়ে বলেছেন, নতুন যে শিক্ষাক্রম নেওয়া হয়েছে তা প্রচলিত শিক্ষাক্রম নয়। এই বাস্তবতা আমাদেরকে মানতে হবে। আমরা যারা বিশেষজ্ঞ তারা প্রচলিত পাঠ্যক্রমে শিক্ষা পেয়েছি। নতুন যে পাঠ্যক্রম রচনা করতে হবে সে ব্যাপারে প্রশিক্ষত লোক খুব বেশি আছে তা কিন্তু নয়। যারা আছেন, তাদের কাজ হচ্ছে- উনি বলেছেন, যদি কোনো ভুলভ্রান্তি, যদি কোনো তথ্যগত বা কোনো একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় তাহলে দ্রুত যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়। উনি বলেছেন, কোনো গ্যাপ তৈরি হলে যেন যথাযথভাবে পর্যালোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। গার্মেন্টেসের মতো সুযোগ-সুবিধা কৃষিজাত পণ্য, চামড়া এবং পাটজাত পণ্যে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।’

এ ছাড়া সরকারি অর্থ ব্যয়ে মিতব্যয়ী হওয়া ও অহেতুক ব্যয় না করা, কারিগরি শিক্ষায় গুরুত্ব দেওয়া, খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো, সার্ভিস সেক্টরে প্রশিক্ষণ, বই মেলা উপজেলা পর্যায়ে নেওয়া, সরকারি চাকরিতে শূন্য পদ পূরণ ও সময়মতো পদোন্নতি, খাদ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা উন্নতকরণ, তিন ফসলি জমি কোনো অবস্থাতেই নষ্ট না করা, জলাধার ভরাট না করা, কোনো অবস্থাতেই নদীর প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত না করা, সেচে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহার, সামুদ্রিক ব্লকে গ্যাস অনুসন্ধান এবং পর্যটন শিল্পের প্রসারে পদক্ষেপ নিতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

সকাল ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত সচিবদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। এতে সব সচিব এবং সচিব পদর্যাদার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ১৫/১৬ জন সচিব আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। ১১ জন সচিব সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।

‘সভার নির্দিষ্ট কোনো আলোচ্যসূচি ছিল না। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাশা আমরা শুনতে চেয়েছি। আমাদের জন্য তার নির্দেশনা সেটি জানতে চেয়েছি।’

মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও সচিব এবং জনপ্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। এ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা সুসংহত হয়েছে।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, সভার প্রথমে নির্বাচনি ইশতেহার নিয়ে আলোচনা হয়। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও আসন্ন রমজানের প্রস্তুতি নিয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছি। এ ছাড়া খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি, কৃষি উৎপাদন ও সার ব্যবস্থাপনা; কর্মমূখী শিক্ষা, নতুন পাঠ্যক্রম ও কর্মসংস্থান; বিদ্যুৎ সরবরাহ ও জ্বালানি নিরাপত্তা, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ, উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও আর্থিকখাতের দক্ষতা বৃদ্ধি নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে।

এ সব আলোচনায় অংশ নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী সচিবদের উদ্দেশ্যে সুনির্দিষ্টভাবে নির্দেশনা দেন বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘জনগণ রায় দিয়েছে, দল নির্বাচিত হয়েছে, তিনি সরকার গঠন করেছেন তাই নির্বাচনি ইশতেহারটাই হবে ৫ বছর সরকার পরিচালনার মূলনীতি, দলিল। এই দলিল বাস্তবায়নের জন্য উনি আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন।’

মাহবুব হোসেন বলেন, ‘ইশতেহার বাস্তবায়ন সমন্বয়ের দায়িত্ব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ করবে। নির্বাচনি ইশতেহারে ১১টি অগ্রাধিকার কার্যক্রম আছে, ৩০০টির বেশি অঙ্গীকার আছে, সেটিকে ম্যাপিং করা হবে। এরপর কোন মন্ত্রণালয়ের কী কাজ সেটি চিহ্নিত করা হবে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সেই কাজগুলো করবে। কাজগুলো যেন ঠিকমতো মনিটর করা হয় সেজন্য বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি, সিটিজেন চার্টার, রাইট টু ইনফরমেশন এবং সুশাসনের যে সব টুলস আছে সেখানে নির্বাচনি ইশতেহারের অঙ্গীকারগুলো ইন্টিগেট করতে বলা হয়েছে। যেন বাৎসরিকভিত্তিতে মনিটরিং করতে সুবিধা হয়।’

সারাবাংলা/জেআর/একে

আওয়ামী লীগ দুর্নীতি দমন প্রধানমন্ত্রী বাজার নিয়ন্ত্রণ শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর