জাবিতে ধর্ষণের ঘটনায় নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ গঠন
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:১৬
ঢাকা: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) এক দম্পতিকে ডেকে নিয়ে স্বামীকে মীর মশাররফ হোসেন হলের একটি কক্ষে আটকে রেখে হলের পাশের জঙ্গলে স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিচার সুনিশ্চিত করতে “নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ” নামে প্ল্যাটফর্ম ঘোষণা করেন আন্দোলনরত শিক্ষক—শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ধর্ষণ ও নিপীড়ন বিরোধী গণ পোস্টারিং করা হয়। এসময় ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের আহ্বায়ক আলিফ মাহমুদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের ঘটনার আগেও বহু নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিপীড়কদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই আছে। আমরা ধর্ষকদের শাস্তি নিশ্চিত করাসহ এর আগের নিপীড়নের অমিমাংসিত ঘটনাগুলোর বিচার নিশ্চিত চাই।’
এরপর দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের সামনে মানববন্ধন করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা ও মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে যায়। সেখানে কিছুক্ষণ নিপীড়নবিরোধী শ্লোগান দেয় শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে নতুন কলা ভবনের সামনে গিয়ে মিছিলটি শেষ হয়।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে শিক্ষার্থীরা ধর্ষণ ও নিপীড়ন বিরোধী স্লোগান দেন। এসময় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম মৃধা বলেন, “যারা ধর্ষকদের আশ্রয় ও প্রশ্রয়দাতা তাদের আমরা হুঁশিয়ার করে দিতে চাই। এ ধরনের ঘটনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়েছে। প্রশাসনের কাছে দাবি থাকবে যে, যেসব শাস্তি ধর্ষকদের দেওয়া হয়েছে তার যেন যথাযথ বাস্তবায়ন হয়। তা নাহলে আরও কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
সজিবুর রহমান সজীব নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বহিরাগতের প্রবেশে যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে সেটি যেন বাস্তবে প্রতিফলন দেখা যায়। হল থেকে দ্রুততম সময়ে অছাত্রদের বের করতে হবে।’
এদিকে, দুপুর দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষক—শিক্ষার্থীরা আলোচনা করেন। সেখানে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ধর্ষণ ও নিপীড়নমূলক ঘটনাগুলোর বিচার নিশ্চিতে আন্দোলনের রূপরেখা বাস্তবায়নে “নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ” নামে প্ল্যাটফর্ম ঘোষণা করা হয়।
এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানানো হবে।
শনিবার রাতের এ ধর্ষণের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন শুরু হলে গতকাল রোববার বিকেলে জরুরি সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করে প্রশাসন। সেখানে তিন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার ও তাদের সনদ স্থগিত করা হয়। পাশাপাশি এই তিনজনসহ আরও তিন শিক্ষার্থীর সনদ স্থগিত ও তাদেরকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। এছাড়া ধর্ষণে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্তও নেয় প্রশাসন।
এদিকে, সোমবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে রেজিস্ট্রার মো. আবু হাসান ধর্ষণে অভিযুক্ত ও তাদের পালাতে সহায়তাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে আশুলিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
সারাবাংলা/একে