Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চবি শিক্ষক সমিতির কর্মবিরতি, প্রত্যাখান একাংশের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:২৫

চট্টগ্রাম ব্যুরো: উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যেরের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে পদত্যাগের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শিক্ষক সমিতির নেতারা। তবে শিক্ষক সমিতির এ কর্মবিরতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে শিক্ষকদের একাংশ।

শিক্ষকদের একাংশ দাবি বর্তমান শিক্ষক সমিতি আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি তাদের নির্ধারিত এক বছরের দায়িত্ব শেষ করতে যাচ্ছে। তাই নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য নির্বাচনকে প্রলম্বিত করতে তারা এ আন্দোলন করছে।

সোমবার (৫ ফ্রেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় জাতীয়তাবাদ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের (হলুদ দল) আহ্বায়ক আবদুল্লাহ মামুন স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞাপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গত ৪ ফেব্রুয়ারি চবি শিক্ষক সমিতির একাংশের সংবাদ সম্মেলন থেকে শিক্ষকদের কর্মবিরতি সম্পর্কিত যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আমরা তা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। শিক্ষক সমিতি কোন সাধারণ সভা আহবান না করে, এমনকি সমিতির কার্যনির্বাহী পর্ষদের মতামত ছাড়া, একাংশের উদ্যোগে কর্মবিরতির মতো হঠকারী সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।’

‘আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছি, সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আইনের শাসন’ এবং ‘ভাবমূর্তি রক্ষা’র নামে শিক্ষক সমিতির একাংশ স্বেচ্ছাচারীভাবে যে ধরণের কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে, তা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত ও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।’

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা মনে করি, শিক্ষকদের মূল কাজ হচ্ছে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠদান এবং শাস্ত্রীয় গবেষণা করা। সেই সঙ্গে নির্দিষ্ট সময়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাসমাপনে সক্রিয় ভূমিকা রাখা। এক্ষেত্রে কর্মবিরতির মত সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের দারুণভাবে হতাশ করবে এবং তাদের শিক্ষা কার্যক্রমকে চরমভাবে ব্যাহত করবে।’

‘আমরা এটাও মনে করি যে, বর্তমান শিক্ষক সমিতি যেহেতু আগামী ৭ ফেব্রুয়ারী তাদের নির্ধারিত এক বছরের দায়িত্ব শেষ করতে যাচ্ছেন, সেহেতু তাদের পরবর্তী নির্বাচনের দিকে মনযোগ নিবন্ধ করা অধিকতর জরুরি ছিল। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, তারা পরিকল্পিতভাবে নিজস্ব কায়েমী স্বার্থ হাসিলের জন্য নির্বাচনকে প্রলম্বিত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছেন।’

তারা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষকদের মূল্যবান ভোটে নির্বাচিত শিক্ষক প্রতিনিধিদের একাংশের এধরণের কার্যকলাপ কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তারা যে ভাবমূর্তির বিষয়টি বারবার উচ্চারণ করছেন, আমরা মনে করি তাদের এ ধরণের কর্মকাণ্ডই সত্যিকার অর্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করছে।’

‘সর্বোপরি, তাদের আন্দোলনের পুরো সময়জুড়েই শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের বিষয়গুলো ক্রমাগতভাবে উপেক্ষিত হয়েছে।’

এদিকে সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, শিক্ষক সমিতির শিক্ষকরা তাদের ক্লাস কার্যক্রম বিরত রেখেছেন। অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনপন্থী বলে খ্যাত শিক্ষকরা তাদের ক্লাস কার্যক্রম চলমান রেখেছেন। এরমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান, লোকপ্রশাসন, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে কোনো ক্লাস হতে দেখা যায়নি।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষকদের থেকে প্রাপ্ত তথ‍্য অনুযায়ী আজ (সোমবার) সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চবি শিক্ষক সমিতি ঘোষিত কর্মবিরতি কর্মসূচিতে সাড়া দিয়ে প্রায় ৯০ শতাংশ শিক্ষক কোনো ক্লাস নেননি।’

‘আমাদের জানামতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে কর্মবিরতি চলাকালীন সময়ে কোন ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে প্রশাসনের বিভিন্ন পদে দায়িত্বরত এবং প্রশাসন থেকে নানান ধরনের সুবিধাভোগী কিছু শিক্ষক যা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ তারা কর্মসূচি চলাকালে ক্লাস নিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষক, হল প্রভোস্ট, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যসহ এরকম কমপক্ষে ১০০ জন শিক্ষক কর্মবিরতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য ক্লাস নিয়েছেন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ফরিদুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের ডিপার্টমেন্টে এ কর্মবিরতির কোন প্রভাব পড়েনি। ক্লাস কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই হয়েছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কোনো ডিপার্টমেন্ট নেই যেখানে কোনো ক্লাস কার্যক্রম বিরত থাকেনি।’

তিনি শিক্ষক সমিতির এ কর্মবিরতিকে অযৌক্তিক বলে দাবি করেছেন।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজ (সোমবার) আমাদের ক্লাস হওয়ার কথা ছিল ছয়টি কিন্তু প্রথম দুটি ক্লাস হওয়ার পর আমরা বাকি চারটি ক্লাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম কোন শিক্ষকের সাড়া না পেয়ে আমরা বাসায় ফিরে এসেছি।’

প্রসঙ্গত গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর চবির আইন বিভাগের ও ১৮ ডিসেম্বর বাংলা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে সংক্রান্ত নির্বাচনি বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সেই সভা বাতিলের দাবি জানাতে ১৭ ডিসেম্বর দুপুরে উপাচার্যের কাছে যান চবি শিক্ষক সমিতির নেতারা। তারা আইন ও বাংলা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের নির্বাচনি বোর্ড (নিয়োগ বোর্ড) সভা বাতিলের দাবিতে উপাচার্যকে চিঠি দেন।

ওই সময় উপাচার্য ও শিক্ষক সমিতির নেতাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে উপাচার্য কক্ষ ছেড়ে কনফারেন্স রুমে চলে যান। উপাচার্যের সঙ্গে কোনো আলোচনা না হওয়ায় ওই দিনই নির্বাচন বোর্ড বাতিলের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে শিক্ষক সমিতি।

সর্বশেষ গতকাল (রোববার) উপাচার্য ও উপউপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কর্মবিরতির ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি।

সারাবাংলা/আইসি/একে

আন্দোলন কর্মবিরতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় টপ নিউজ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার শাজাহান খান
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০২:৪৫

সম্পর্কিত খবর