‘দেশে খাদ্য নিরাপত্তা সুরক্ষিত রয়েছে’
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৭:৪৬
ঢাকা: কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুস শহীদ বলেছেন, সরকার খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে সার ব্যবস্থাপনা সংস্কার, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে প্রণোদনা, সারসহ কৃষি উপকরণ ও কৃষিযন্ত্রে উন্নয়ন সহায়তা প্রদান এবং স্বল্প সুদে কৃষি ঋণের ব্যবস্থা গ্রহণ করে আসছে।
তিনি বলেন, একই সঙ্গে উন্নত জাত উদ্ভাবন, মানসম্পন্ন বীজ সরবরাহ ও সেচ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ, সমলয় চাষাবাদ, পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন, উত্তম কৃষি চর্চা এবং বায়োটেকনোলজি ও অন্যান্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব ও বৈশ্বিক সংকট সত্ত্বেও দেশে খাদ্য নিরাপত্তা সুরক্ষিত রয়েছে।
মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুলের এক প্রশ্নের জবাবে সংসদে এ তথ্য জানান কৃষিমন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, সার ব্যবস্থাপনার সংস্কার করা হয়েছে। যা কৃষকের দোরগোড়ায় সার প্রাপ্তি নিশ্চিত এবং ভোগান্তির অবসানে সহায়ক হয়েছে।
তিনি জানান, কৃষকের উৎপাদন খরচ নিম্ন পর্যায়ে রাখতে সার ও সেচ কাজে ব্যবহৃত বিদ্যুতে উন্নয়ন সহায়তা অব্যাহত রাখা হয়েছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ খাতে ১৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) মাধ্যমে ৫,০০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮৩টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের আওতায় হাওর ও উপকূলীয় এলাকায় ৭০% এবং অন্যান্য এলাকায় ৫০% উন্নয়ন সহায়তায় ৫১ হাজার ৩০০টি কৃষিযন্ত্র বিতরণ চলমান আছে।
তিনি আরও জানান, অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনার লক্ষ্যে ৪৩৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা বরাদ্দে পারিবারিক পুষ্টি বাগান প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। উক্ত প্রকল্পের আওতায় মোট ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৪০০টি পারিবারিক সবজি বাগানের প্রদর্শনী স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া কৃষি গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করে উন্নত, উচ্চফলশীল ও প্রতিকূলতা সহনশীল জাত উদ্ভাবন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৭টি জাত ও ৬৬টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, লবণ সহিষ্ণু জাত সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশের মোট লবণাক্ত এলাকার প্রায় ৩২ ভাগ ধান চাষের আওতায় এসেছে এবং এ থেকে উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৮%। খরাপ্রবণ এলাকায় খরাসহিষ্ণু জাতগুলো সম্প্রসারণের মাধ্যমে ৫% আবাদ এলাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। জলমগ্নতা সহনশীল জাতগুলো সম্প্রসারণের মাধ্যমে ২৪% এলাকা চাষের আওতায় এসেছে এবং উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।আধুনিক নতুন জাত ও প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে দ্রুত পৌঁছানোর লক্ষ্যে প্রকল্প ছাড়াও রাজস্ব বাজেটে মাধ্যমে ২০১৬-১৭ অর্থ বছর হতে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শুরু থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত রাজস্ব বাজেটে প্রায় আরবিএস কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সারাদেশে সাশ্রয়ী মূল্যে সেচসুবিধা প্রদান এবং মানসম্পন্ন বীজ সরবরাহ করা হচ্ছে।২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রায় ২৭ লাখ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিকে প্রায় ২২ হাজার ৪০২ কোটি টাকা আমানতবিহীন কৃষি ঋণ প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক কৃষি ও পল্লী ঋণ খাতে চলতি বছরে ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে।
এছাড়া কৃষকের উৎপাদিত ফসল সুষ্ঠুভাবে বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে এ পর্যন্ত মোট ২৩টি এসেম্বল সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় ২১টি পাইকারী বাজার, ৬০ টি গ্রোয়ার্স মার্কেট, ১২ টি প্রক্রিয়াজাতকরণ ও আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ডধারী কৃষকের সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। সকল কৃষককে স্মার্ট কৃষি কার্ড প্রদানের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
সরকারের বিশেষ সুবিধার আওতায় কৃষি উপকরণ কার্ডের মাধ্যমে খোলা ১০ টাকার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা প্রায় এক কোটি। যার মাধ্যমে কৃষকগণ ফসল উৎপাদনের ঋণ এবং কৃষি উপকরণ সহায়তা পেয়ে থাকেন।
তিনি বলেন, দক্ষিণ অঞ্চলে ভাসমান চাষাবাদ প্রযুক্তি ব্যবহার করে শাক-সবজি ও মসলা উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। শস্য বহুমুখীকরণের লক্ষ্যে দক্ষিণাঞ্চলে মুগ, খেসারী, মসুর, সরিষা, তিসি, সূর্যমুখী, সয়াবিন ও চিনাবাদাম এবং বিভিন্ন ডাল, তেল ও মসলা ফসলের আবাদের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।কৃষি সেবাকে সহজে কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য “কৃষি বাতায়ন”সহ বিভিন্ন ই-কৃষি কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। যে কোনো ফোন থেকে কৃষি কল সেন্টারের ১৬১২৩ নম্বরে যোগাযোগ করে কৃষকগণ কৃষিতথ্য সেবা গ্রহণ করছে।
সরকারের কৃষিবান্ধব নীতি তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে খাদ্যশস্য উৎপাদনে দেশ প্রয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ধান, ভুট্টা, আলু, সবজি ও ফলসহ অন্যান্য ফসলেও রাবাহিকভাবে উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্বে চাল উৎপাদনে ৩য় স্থা ভীত হয়েছে। এছাড়া, সবজি উৎপাদনে ৩য়, এবং আলু ও আম উৎপাদনে সপ্তম স্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ ২২টি কৃষিপণ্য উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে রয়েছে।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/এনইউ