জঙ্গি হামলার মধ্যেই পাকিস্তানে ভোট, হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:০৪
ক্রমবর্ধমান জঙ্গি হামলা, অর্থনৈতিক সংকট এবং রাজনৈতিক মেরুকরণের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে পাকিস্তানে। বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। তবে এই নির্বাচনে কোনো দল এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারে না বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক। খবর এনডিটিভ।
নির্বাচনে কারাবন্দি দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত জাতীয় নির্বাচনে তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) জয়ী হয়েছিল। এছাড়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রীর পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএল-এন) নওয়াজ শরিফকে এবার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত বেনজির ভুট্টোর ৩৫ বছর বয়সী ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারিও দেশটির শীর্ষ পদের জন্য আক্রমণাত্মক প্রচার চালিয়েছেন।
নির্বাচনের বিষয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, কোনো দল এককভাবে বিজয়ী নাও হতে পারে। তবে পাকিস্তানের শক্তিশালী জেনারেলরা ভূমিকা রাখতে পারেন।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী তার স্বাধীনতার ৭৬ বছরে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশটিতে আধিপত্য বিস্তার করেছে। তবে কয়েক বছর ধরে তারা দেশটির রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে না বিষয়টি বজায় রেখেছেন।
লেখক আব্বাস নাসির বলেন, ‘মূল বিষয় হলো শক্তিশালী সামরিক বাহিনী এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলো কোন দিকে আছে। এক্ষেত্রে পিটিআই’র পক্ষে বিপুল ভোটই শুধুমাত্র দলটির ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে।’
ইমরান খান বিশ্বাস করেন, তার দলের অস্তিত্ব বিলীন করতে দেশটির সেনাবাহিনীর হাত রয়েছে। অন্যদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং বিরোধীরা বলছেন, জেনারেলরা নওয়াজ শরিফকে সমর্থন দিয়েছেন।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে দুইজন প্রধানমন্ত্রীর স্থান পরিবর্তন করেছেন। ওই সময় ইমরান খান সেনাবাহিনীর সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করেছিলেন মনে করা হয়েছিল। আর নওয়াজ শরিফ দুর্নীতির অভিযোগে কারাগারে ছিলেন।
আব্বাস নাসির বলেন, ‘নির্বাচনি ব্যবস্থা দেশে স্থিতিশীলতা তৈরি করেনি। অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো এতই গুরুতর ও গভীর যে, এর সমাধানগুলোও ততোই কঠিন। তাই আমি নিশ্চিত নই, কেউ ক্ষমতায় এসে কীভাবে জাহাজটিকে স্থির রাখবে।’
নির্বাচনে কোনো দল এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে দেশটির সামনে থাকা একাধিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা কঠিন হবে বলে বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আগামী মার্চে বর্তমান মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ পরিশোধের জন্য নতুন করে সময় চাওয়া।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় ভোট শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রাথমিক ফলাফল ঘোষণা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর আগামীকাল শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকালের মধ্যে ফলাফলের প্রকৃত চিত্র উঠে আসতে পারে।
৩৩৬ আসনের দেশটির জাতীয় পরিষদে সরকার গঠন করতে ১৬৯টি আসনের প্রয়োজন। এমন একটি সরকার গঠনে ছোট রাজনৈতিক দলগুলোও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে ভোটাররা সরাসরি ২৬৬ জন সদস্যকে নির্বাচিত করতে পারেন। আর বাকি ৭০টি আসন সংরক্ষিত। এর মধ্যে ৬০টি নারী ও ১০টি অমুসলিমদের জন্য। নির্বাচনে প্রতিটি দলের জয়ী সদস্যদের সংখ্যার অনুপাতে এই সংরক্ষিত আসনগুলো বরাদ্দ করা হয়।
নির্বাচনে অংশ নেওয়া অনেক স্বতন্ত্রপ্রার্থীর প্রতি ইমরান খানের সমর্থন রয়েছে। তারা জিতলে যেকোনো দলে যোগ দিতে পারবেন। যা ভোটের পর ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে। তবে ইমরান খান বলেছেন, তার প্রার্থীরা শরীফ বা ভুট্টো জারদারিকে সমর্থন করবে না।
ক্রমবর্ধমান জঙ্গি হামলার মধ্যেই পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচনের আগে দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বেলুচিস্তান প্রদেশে নির্বাচনি অফিসে দুটি বিস্ফোরণে ২৬ জন নিহত হয়েছেন।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটকেন্দ্রে সেনা মোতায়েনসহ দেশটিতে সর্বোচ্চ সতর্কতা নিশ্চিত করা হয়েছে। সারাদেশে কয়েক হাজার সেনা ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিবেশী দেশ ইরান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তান।
সারাবাংলা/এনএস