Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চাচাতো ভাইকে খুন: যুবকের আমৃত্যু কারাদণ্ড

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৬:০৭

চট্টগ্রাম ব্যুরো: কিশোর বয়সী চাচাতো ভাইকে খুনের পর লাশ গুমের অপরাধে এক যুবককে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২’র বিচারক জান্নাতুল ফেরদৌস এ রায় দিয়েছেন। রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি এম এ নাসের এ তথ্য জানান।

দণ্ডিত হৃদয় আলী মল্লিক (৩১) নগরীর পাহাড়তলী থানার ফইল্যাতলী এলাকার বাসিন্দা মফিজুল আলম মল্লিকের ছেলে। তাদের বাড়ি দিনাজপুর জেলায়।

২০১৬ সালের ৮ মে পাহাড়তলী থানার সাগরিকা স্টেডিয়ামের পেছনে জেলেপাড়ার পাশে জোড়াখাল থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় ফিরোজ আলম বাঁধন নামে ১৩ বছর বয়সী কিশোরের লাশ উদ্ধার করা হয়। বাঁধন ফইল্যাতলী এলাকার বাসিন্দা রঙমিস্ত্রি রমজান আলী মল্লিক ও পোশাক কর্মী বেগম আক্তারের একমাত্র ছেলে ছিল। স্থানীয় প্রাণহরি (পিএইচ) আমিন একাডেমির অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিল।

মামলার নথিপত্র পর্যালোচনায় জানা গেছে, দুই ভাই মফিজুল আলম মল্লিক ও রমজান আলী মল্লিক ফইল্যাতলী এলাকায় পাশাপাশি বাসায় ভাড়া থাকতেন। ২০১৬ সালের ৩ মে রমজানের ছেলে বাঁধন নিখোঁজ হয়। ছেলের সন্ধানে রমজান পাহাড়তলী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। নিখোঁজ বাঁধনকে উদ্ধারে অভিযানে নামে নগর গোয়েন্দা পুলিশের টিম (ডিবি)।

তিনদিনেও উদ্ধার না হওয়ায় ৭ মে পাহাড়তলী থানায় অপহরণের মামলা করেন রমজান। এতে উল্লেখ করা হয়, অজ্ঞাত নম্বর থেকে তাকে ফোন করে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে, অন্যথায় বাঁধনকে হত্যার হুমকি দিয়েছে। সন্দেহের বশে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি আটক করে হৃদয় মল্লিককে। পাঁচদিন পর তার দেওয়া তথ্যে বাঁধনের লাশ উদ্ধার হয়।

বিজ্ঞাপন

বাঁধনের নিখোঁজ রহস্য উদঘাটনের দায়িত্বে ছিলেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও বর্তমানে পাঁচলাইশ থানার ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা। লাশ উদ্ধারের পর তিনি জানিয়েছিলেন, ৩ মে বাঁধনকে খুনের পরিকল্পনা করে হৃদয়। বাজার থেকে দশটি ঘুমের ট্যাবলেট কিনে আনে।

৪ মে সকালে বাঁধন ও হৃদয়ের বাবা-মা কর্মস্থলে চলে যান। বাসায় ছিল শুধুমাত্র হৃদয় ও বাঁধন। হৃদয় প্রথমে টাইগার এনার্জি ড্রিংকের ভেতরে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে সেগুলো বাঁধনকে খাইয়ে অজ্ঞান করে। তারপর গামছা গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। সন্ধ্যায় রমজানের মোবাইলে ফোন করে মুক্তিপণ চাওয়া হয়। এরপর রমজান বাসায় ফিরে হৃদয়কে পেয়ে ছেলের কথা জিজ্ঞেস করেন। হৃদয় থানায় গিয়ে জিডি করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বাঁধনের সন্ধান পাবার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলাম। সেসময় হৃদয় আমাদের সঙ্গে ছিল এবং বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহায়তা করছিল। কিন্তু শুরু থেকেই তাকে আমাদের সন্দেহ হচ্ছিল। এক পর্যায়ে বাঁধনের বাবাকে যে মোবাইল নম্বর থেকে ফোন করে মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছিল সেটি এবং হৃদয়ের মোবাইল নম্বর আমরা তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে অনুসরণ করা শুরু করি। সেখানেই মূলত রহস্যের জট খোলে। তারপর জেরার একপর্যায়ে হৃদয় জানায়, বাঁধনকে হত্যা করে সে আলুর বস্তায় ভরে লাশ খালে ফেলে দিয়েছে।’

ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এম এ নাসের সারাবাংলাকে জানান, পাহাড়তলী থানায় রমজান আলীর দায়ের করা অপহরণের মামলা পরবর্তীতে হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়। পুলিশ তদন্ত করে ২০১৬ সালের ২২ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এতে হৃদয় আলী মল্লিকের বিরুদ্ধে মুক্তিপণের জন্য কিশোরকে অপহরণ, হত্যা এবং লাশ গুমের অভিযোগ আনা হয়।

বিজ্ঞাপন

২০১৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি আসামির বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৮ এবং দণ্ডবিধির ৩০২, ৩৮৫, ৩২৮ ও ২০১ ধারায় অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। মোট ৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ট্রাইব্যুনাল দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন। একই রায়ে আদালত তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করেন।

আসামি হৃদয় আলী মল্লিক রায় ঘোষণার সময় আদালতে হাজির ছিলেন। পরে সাজামূলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে পিপি এম এ নাসের জানিয়েছেন।

সারাবাংলা/আরডি/এনএস

চট্টগ্রাম চাচাতো ভাইকে খুন টপ নিউজ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর