টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বীকৃতির আবেদন প্রকাশ পেল জার্নালে
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২০:৫৬
ঢাকা: ‘টাঙ্গাইল শাড়ি’কে ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিতে জেলা প্রশাসনের আবেদন জিআই জার্নালে প্রকাশ করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন প্যাটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদফতর (ডিপিডিটি)। দুই মাসের মধ্যে এই আবেদনের বিরুদ্ধে কোনো আমলযোগ্য অভিযোগ না পাওয়া গেলে এটি জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির সনদ পাবে।
বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ডিপিডিটি টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বীকৃতির আবেদনটি জার্নাল আকারে প্রকাশ করেছে।
অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে অধিদফতরের জিআই ইউনিটের পরিচালকের দায়িত্বে থাকা ড. কায়সার মুহাম্মদ মঈনুল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, “টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ‘টাঙ্গাইল শাড়ি’র জিআই পণ্যের স্বীকৃতির আবেদন করেছিলেন। যাচাই-বাছাই করে আবেদনটি জিআই জার্নালে প্রকাশ করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী আগামী দুই মাসের মধ্যে এই আবেদনকে চ্যালেঞ্জ না করলে কিংবা এর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না দিলে আমরা এর জিআই স্বীকৃতির সনদ ইস্যু করব। তখন ‘টাঙ্গাইল শাড়ি’ জিআই পণ্য হিসেবে চূড়ান্ত স্বীকৃতি পাবে।”
ডিপিডিটির এই কর্মকর্তা জানান, যেকোনো জিআই পণ্যের আবেদনই যাচাই-বাছাই করেই জার্নালে প্রকাশ করা হয়। এরপর এর সনদ ইস্যুর ধাপটি মূলত আনুষ্ঠানিকতামাত্র।
আরও পড়ুন- জিআই সনদ পাচ্ছে টাঙ্গাইল শাড়িসহ ৬ পণ্য
সম্প্রতি ভারতের শিল্প মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ‘টাঙ্গাইল শাড়ি অব বেঙ্গল’ বা ‘বাংলার টাঙ্গাইল শাড়ি’কে জিআই পণ্যের স্বীকৃতি দেয়। এই স্বীকৃতির ফলে টাঙ্গাইল শাড়ির ভৌগলিক নির্দেশক স্বত্বের দাবিদার হয় ভারত। কিন্তু টাঙ্গাইল শাড়ি বাংলাদেশের নিজস্ব পণ্য হওয়ায় একে ভারত জিআই পণ্যের স্বীকৃতি দিলে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়।
ওই খবর ছড়িয়ে পড়লে বাংলাদেশ থেকে টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই পণ্য স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি ওঠে। টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসন দ্রুতই ডিপিডিটিতে আবেদন করে। ডিপিডিটি-ও দ্রুতই সেই আবেদন গ্রহণ করে জিআই জার্নাল প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয়। আজ সেই জার্নাল প্রকাশ পেল।
এদিকে ডিপিডিটি ‘টাঙ্গাইল শাড়ি’কে জিআই পণ্যের স্বীকৃতি দিলে একই পণ্যের জিআই স্বীকৃতি ভারত ও বাংলাদেশ দুই দেশের নামেই চলে আসবে। এ ক্ষেত্রে ভারতের জিআই স্বীকৃতির আবেদনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ আবেদন করবে কি না— এমন প্রশ্নও উঠেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিপিডিটির পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) আলেয়া খাতুন সারাবাংলাকে বলেন, “ভারত তাদের পণ্যটিকে বলছে ‘টাঙ্গাইল শাড়ি অব বেঙ্গল’। আমরা বলছি ‘টাঙ্গাইল শাড়ি’। তবে টাঙ্গাইল আমাদের বাংলাদেশের জেলা। টাঙ্গাইল শাড়ি বাংলাদেশেরই পণ্য। তাই ভারতের জিআই স্বীকৃতির সনদের বিরুদ্ধে আমাদের আপিল করতে হবে।”
আরও পড়ুন- টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বীকৃতি পেতে আবেদন
আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব বিষয়ক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি রাইটস অরগানাইজেশনের (ডব্লিউআইপিও) নিয়ম মেনেই সব দেশকে জিআই পণ্যের স্বীকৃতি দিতে হয়। জিআই পণ্যের স্বীকৃতি নিয়ে কোনো বিবাদ হলেও তার সমাধানের জন্য যেতে হয় এই সংস্থার কাছেই। আলেয়া খাতুন জানান, ভারতের ‘টাঙ্গাইল শাড়ি অব বেঙ্গলে’র জিআই পণ্যের স্বীকৃতির বিরুদ্ধে এই ডব্লিউআইপিওতেই আবেদন করা হবে। সেখানে টাঙ্গাইল শাড়ির একক জিআই পণ্যের স্বীকৃতি বাংলাদেশের পক্ষেই আসবে বলে আত্মবিশ্বাসী তিনি।
২০১৬ সালে বাংলাদেশের প্রথম কোনো পণ্য হিসেবে জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায় জামদানি শাড়ি। এরপর এখন পর্যন্ত ২১টি পণ্য এই স্বীকৃতি পেয়েছে। এই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন কুষ্টিয়ার তিলের খাজা। টাঙ্গাইল শাড়ি ছাড়াও আরও ১৪টি পণ্যের জিআই স্বীকৃতির আবেদন জমা রয়েছে ডিপিডিটিতে।
সারাবাংলা/টিআর