Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘বিশ্ব বাণিজ্যে সুবিধা পেতে এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:২১

ঢাকা: বিশ্ব বাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দৃঢ় করতে এখনই প্রস্তুতি নিয়ে অগ্রসর হতে হবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সুবিধা ধরে রাখতে সম্মিলিত প্রস্তুতি প্রয়োজন। বিশেষ করে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ১৩তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের আলোচনায় এলডিসি থেকে উত্তরণ পর্যায়ে সুবিধা আদায় এবং ভবিষ্যৎ উন্নয়শীল দেশের সুবিধার দিকে নজর দিতে হবে বাংলাদেশকে।

বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর জতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ১৩তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন: বাংলাদেশের ভাগ্যে কী থাকছে?’ শীর্ষক আলোচনায় এসব কথা বলেন বক্তারা। এফসিডিও’র সহযোগিতায় বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টারগ্রাশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র‌্যাপিড) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। র‌্যাপিড চেয়ারম্যন ড. আব্দুর রাজ্জাকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান।

বিজ্ঞাপন

মশিউর রহমান বলেন, ‘ডব্লিউটিও মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে ত্রি-মাত্রিক দিক থেকে নজর দিতে হবে এটা সত্যি। তবে বাংলাদেশ যে অবস্থানে পৌঁছেছে সেখান থেকে পেছেনে হটার সুযোগ নেই। সামনের দিতে এগিয়ে যেতে জায়গা করে নিতে হবে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। এর জন্য সময় নিলে পিছিয়ে পড়তে হবে। বিশ্ব বাণিজ্যে সামনে এগিয়ে যেতে সবাই মিলে কাজ করতে হবে। চেষ্টা এমন থাকতে হবে যাতে সঠিকভাবে সামনে এগিয়ে যেতে পারি।’

অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক সচিব শরিফা খান বলেন, ‘এলডিসি থেকে উত্তরণ পর্যায়ে তিন বছর বাণিজ্য সুবিধা অব্যহত রাখবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা ও যুক্তরাজ্য। তবে ২০২৯ সাল থেকে আর এই সুবিধা থাকবে না। এ জন্য এখনই ডব্লিউটিও মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনায় জোরালো অবস্থান রাখতে প্রস্তুতি নিতে হবে। যাতে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে গেলে তখন প্রধান রফতানিপণ্য তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য পণ্যে জিএসপি প্লাসের মতো বাণিজ্য সুবিধা নেওয়া যায়। তাছাড়া ট্রিপস সুবিধা থাকবে না, এর জন্য আমাদের প্রস্তুত হতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ডব্লিউটিওর মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে বাংলাদেশকে তিনটি স্বার্থ নিয়ে কাজ করতে হবে। ২০২৬ সাল পর্যন্ত এলডিসির কাতারের সুবিধা পাওয়া, এর পর আরও তিন বছর এলডিসি থেকে উত্তরণ পর্যায়ে সুবিধা পাওয়া এবং ভবিষ্যতে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাওয়ার ক্ষেত্রে এখন প্রস্তুতি নেওয়া। এখন মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনায় খেয়াল রাখতে হবে উন্নয়নশীল দেশের জন্য কী কী সুবিধা আসছে।’

তিনি বলেন, ‘২০২৬ সারের পর ট্রিপস সুবিধা থাকবে না। ফলে ২০ শতাংশ ওষুধের প্যাটেন্ট দিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এতে দাম বেড়ে যাবে।’

প্রবন্ধ উপস্থাপনায় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য মোস্তাফা আবিদ খান বলেন, ‘ফিশারিজ সাবসিডির ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। ইলিশ বেশিরভাগ নদীতে উৎপাদন হচ্ছে এটা দেখানো উচিত। এতে সুমুদ্রে মৎস্য খাতের ভর্তুকি কমানোর চাপ থাকবে না। মৎস্য খাতে দশমিক ৮ শতাংশ ভতুর্কি আছে। ইলিশ যুক্ত হলে এক শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।’

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এলডিসি থেকে উত্তরণের পর কৃষি ও মৎস্য খাতে ভর্তুকি নিয়ে চাপ থাকবে। বিশেষ করে সমুদ্রে মৎস্য আহরণের ক্ষেত্রে। তবে কৃষিক্ষেত্রে পণ্যের মূল্যের ১০ শতাংশ দেওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ২ শতাংশের কম দিচ্ছে।’

প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন মাসুম, ফিন্যানসিয়াল এক্সপ্রেসের প্ল্যানিং এডিটর আসজাদুল কিবরিয়া ও র‌্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর এম আবু ইউসুফসহ অতিথিরাও আলোচনায় অংশ নেন।

উল্লেখ্য, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ত্রয়োদশ মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন আগামী ২৬ থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে, করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় কয়েক দফা স্থগিত থাকা দ্বাদশ মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন ২০২২ সালের জুনে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

বর্তমানে ১৬৪টি দেশ ডব্লিউটিও’র সদস্য। এই সংস্থার এলডিসি গ্রুপের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ বাংলাদেশ। এলডিসি থেকে উত্তরণ পর্যায়ে থাকায় এবারের সম্মেলনও বাংলাদেশের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ১৩তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের চেয়ার হিসেবে থাকবেন ইউএইর- বিদেশি বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী ড. থানি বিন আহমেদ আল জাইউদি।

সম্মেলনে বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থার কর্মক্ষমতা পর্যালোচনা করবে, ডব্লিউটিওর ভবিষ্যত কাজের বিষয়ের সিদ্ধান্ত নেবে এবং ১৪তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের রোডম্যাপ পথনকশা তৈরি করা হবে। এ সব বিবেচনায় এবারের সম্মেলনকে বাংলাদেশ খুবই গুরুত্ব দেবে।

সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম

ডব্লিউটিও বিশ্ব বাণিজ্য সম্মেলন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর