সংরক্ষিত এমপির দৌড়ে ১৫৪৯ নারী, ভাগ্য খুলবে দুর্দিনের সহযাত্রীদের
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০০:০২
ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশার দৌড়ে আছেন ১৫৪৯ জন নারী। দলটির বিভিন্স স্তরের নেত্রীসহ মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সহধর্মিণী, বিভিন্ন পেশাজীবী, অভিনেত্রীসহ বিভিন্ন পেশার নারীরা আছেন এই দৌড়ে। তবে আওয়ামী লীগের সূত্র জানিয়েছে, দলের দুর্দিনে সহযাত্রী ছিলেন, ত্যাগ স্বীকার করেছেন এমন ৪৮ জনকে দেওয়া হবে চূড়ান্ত মনোনয়ন।
সংরক্ষিত মহিলা আসনের জন্য মনোনয়ন বিক্রি করে আওয়ামী লীগের আয় হয়েছে ৭ কোটি ৭৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এবার সংরক্ষিত আসনে দলের প্রতিটি মনোনয়ন ফরমের মূল্য ৫০ হাজার টাকা, যা একাদশ জাতীয় সংসদের ক্ষেত্রে ছিল ৩০ হাজার টাকা।
বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘গত তিন দিনে মোট মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে ১৫৪৯টি। এতে দলের আয় হয়েছে ৭ কোটি ৭৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা ‘
তিনি জানান, ১৪ ফেব্রুয়ারি গণভবনে দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা।
সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য হিসাবে মনোনয়ন প্রত্যাশায় বিপুল সংখ্যক আগ্রহীদের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এত বিপুল সংখ্যক প্রার্থী! আপনার কি মনে আছে গত নির্বাচনের সময় কত হয়েছিল? সেটি আমরা মোকাবিলা করিনি। তখনও আমরা প্রার্থিতা দিয়েছি। আসন আরও কম ছিল। এখন আসন আরও বেশি আছে। আসন ৪৮টি। তখন আসন ছিল ৪৩টি।’
ফরম বিক্রির প্রথম দিনে ফরম সংগ্রহ করেন ৮১০ জন প্রত্যাশী। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সাবেক ও বর্তমান নারী নেত্রীরা ছিলেন।
মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমা দেওয়ার প্রথম দিন ছিল। এদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ফরম বিক্রি ও জমাদান শুরু হয়।
মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান জানান, দলীয় মনোনয়নপত্র বিক্রির প্রথম দিন ফরম সংগ্রহ করেছেন ৮১০ জন। এতে আয় হয় ৪ কোটি ৫ লাখ টাকা।
ফরম বিক্রির দ্বিতীয় দিন বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) ৫২২ জন ফরম সংগ্রহ করেন। এতে দলটির আয় হয় ২ কোটি ৬১ লাখ টাকা। ফলে দুই দিনে সংরক্ষিত মহিলা আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন ১৩৩২ জন। এতে দলটির আয় হয় ৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।
বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মনোনয়ন বিক্রি শেষে এ সব তথ্য জানান দলের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।
বৃহস্পতিবার শেষ দিনে ২১৭টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়। বিপরীতে আয় করে ১ কোটি ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্যের বিপুল সংখ্যক মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ফরম সংগ্রহের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক সারাবাংলাকে বলেন, ‘মাননীয় নেত্রী সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই ১৫ বছর দেশ পরিচালনা হয়েছে। দেশ পরিচালনায় নারীর নেতৃত্বের বিকাশের জন্য তিনি সমস্ত পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। আর এই পরিবেশের মধ্য দিয়ে একটি নারীর স্বাধীনতা নারীর ক্ষমতায়নের রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। এই বিপুল সংখ্যক নারীর আবেদন করার যে প্রবণতা এটি দেশের জন্য একটি সুখকর শুভ সংবাদ। আর নারী নেতৃত্বের বিকাশ হয়েছে আমরা মনে করি নারী নেতৃত্ব যত বেশি এগিয়ে আসবেন, ততবেশি দেশ এগিয়ে যাবে।’
দলের মনোনয়নে কাদের মূল্যায়ন করা হবে এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনা গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নের সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে আমরা বুঝতে পারি তিনি দলের পোড়খাওয়া ত্যাগী নেতাকর্মীদের তিনি খুঁজে নিচ্ছেন এবং তাদেরকে মূল্যায়ন করছেন। কাজেই আমরা মনে করি, যে নারীরা রাষ্ট্র সমাজের বিভিন্ন স্তরে দায়িত্ব পালন করছেন দেশসেবায়। তাদের মধ্য থেকেই আনবেন। সেক্ষেত্রে শিক্ষক, সাংস্কৃতিকমনা রাজনৈতিক নেত্রী যারা, দুঃসময় দুর্দিনে এই দলের জন্য ঘর সংসারও ত্যাগ করেছেন। কারাগারে গিয়েছেন। এই ধরনের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের নারী নেতৃত্বকেই তিনি খুঁজে বের করে তাদেরকে মনোনয়ন দেবেন বলে মনে করি।’
টাঙ্গাইল থেকে সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন দলটির শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক শামসুন্নাহার চাঁপা, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুর নাহার লাইলী, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য সফুরা বেগম, মারুফা আক্তার পপি, আব্দুল মতিন খসরুর স্ত্রী সেলিমা সোবহান খসরু, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেত্রী শ্যামলি আক্তার, যুব নারী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল, যুব মহিলা লীগের সাবেক সভাপতি নাজমা আকতার, মুন্সীগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও লৌহজং উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট রানু আখতার, সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী ফরিদা পারভীন, আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী চৈত্রী বিশ্বাসসহ অনেকে।
সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য মনোনয়ন প্রত্যাশায় ফরম সংগ্রহ করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মহিলাবিষয়ক সম্পাদক জাহানারা বেগম, গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক তাসলিমা রহমান লাভলি। তিনি এর আগে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। গাজীপুর জেলা যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক শর্মিলী দাস মিলি। তিনি এর আগে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আলোচনায় আছেন গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রীনা পারভীন। তিনি ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের কক্ষ সম্পাদক ও জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আরও ফরম সংগ্রহ করেছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চেমন আরা তৈয়ব, সাধারণ সম্পাদক শামীমা হারুণ লুবনা, উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট বাসন্তী পালিত, প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা মোছলেম উদ্দীন আহমদের স্ত্রী শিরিন আহমেদ, ডা. আফসারুল আমীনের স্ত্রী কামরুন্নেছা, অ্যাডভোকেট জিনাত সোহানা চৌধুরী, সাবেক কাউন্সিলর রেখা আলম চৌধুরী।
সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে পিছিয়ে নেই সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অভিনেত্রীরা। অভিনেত্রীদের মধ্যে নিপুণ আক্তার, অপু বিশ্বাস, রোকেয়া প্রাচী, মেহের আফরোজ শাওন, ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর, তানভীন সুইটি, জাকিয়া মুন, সৈয়দা কামরুন নাহার শাহনূর, শামীমা তুষ্টি, তারিন জাহান, সোহানা সাবাসহ আরও কয়েকজন অভিনেত্রী।
আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুর নাহার লাইলী বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার স্বপ্ন বাস্তবায়নের সারথী হতে সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছি। দীর্ঘ রাজনৈতিক পথ চলায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে দেশের সর্বস্তরের মানুষের জন্য কাজ করে এসেছি এবং ভবিষ্যতেও করে যাবো সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে। এলাকায় গিয়ে মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করতে পারব।’
মঙ্গলবার রংপুর থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন তৃতীয় লিঙ্গের আনোয়ারা ইসলাম রানী। তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৩ (সদর ও সিটি করপোরেশন) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদেরের (লাঙ্গল) কাছে পরাজিত হন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী জি এম কাদের ৮১ হাজার ৮৬৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ারা ইসলাম রানী (ঈগল) পান ২৩ হাজার ৩২৬ ভোট।
গণমাধ্যমকে আনোয়ারা ইসলাম রানী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিলে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্য কাজ করতে পারব। সেইসঙ্গে সমাজের অবহেলিত মানুষের জন্য কাজ করতে চাই।’
দফতর থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে স্থাপিত প্রশাসনিক বিভাগ অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট বুথে গিয়ে ফরম সংগ্রহ এবং জমা দেওয়া যাবে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগ এবং তৃতীয় তলায় রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের মনোনয়ন ফরম বিতরণ করা হবে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় সব বিভাগের মনোনয়ন ফরম জমা নেওয়া হবে।
এবার আওয়ামী লীগ দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তাদের অংশের নারী প্রার্থীর মনোনয়ন দেওয়ার এখতিয়ার দলটির সভাপতি শেখ হাসিনার ওপর ন্যস্ত করেছেন। তবে জাতীয় পার্টি তাদের ১১টি আসনে এককভাবে নির্বাচন করবে। তাই আইন অনুযায়ী জাতীয় পার্টি ২টি আসন এবং আওয়ামী লীগ, স্বতন্ত্র ও তাদের ১৪ দলীয় জোট মিলিয়ে মোট ৪৮টি আসনে মনোনয়ন প্রদান করতে পারবে।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, দ্বাদশ সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তারিখ আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি রোববার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। মনোনয়নপত্র বাছাই করা হবে ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারি। আপিল দায়ের ২২ ফেব্রুয়ারি। আপিল নিষ্পত্তি ২৪ ফেব্রুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ ফেব্রুয়ারি। প্রতীক বরাদ্দ ২৭ ফেব্রুয়ারি। ভোটগ্রহণ হবে ১৪ মার্চ।
ভোটগ্রহণ চলবে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব মনিরুজ্জামান এ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন।
সারাবাংলা/এনআর/একে