Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শতবর্ষের যশোর জেলা পরিষদ ভবন ভাঙতে ফের তৎপরতা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:১১

যশোর: ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্মারক যশোরের জেলা পরিষদ ভবনটি আবারও ভেঙে ফেলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি এক চিঠিতে শতবর্ষী এই লাল দালানকে ‘পুরাতন জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ’ উল্লেখ করে তা ভেঙে ফেলার অনুমতি দিয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। সিনিয়র সহকারী সচিব জেসমিন প্রধানের সই করা এক চিঠিতে ভবনটিকে অকেজো ঘোষণা করে তা নিলামে বিক্রি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে সচেতন যশোরবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এর আগে, ২০১৯ সালেও এই ভবনটি ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তখন যশোরের সচেতন নাগরিকরা তার প্রতিবাদে রাজপথে নামেন। ফলে ওই সময় বিষয়টি নিয়ে আর অগ্রসর হয়নি প্রশাসন। পাঁচ বছর পর আবারও এই ভবনটি ভাঙতে সক্রিয় হয়েছে প্রশাসন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ব্রিটিশ ভারতের প্রথম জেলা যশোর। যা ১৭৮১ সালে গঠন করা হয়। আর অবিভক্ত বাংলায় ১৮৮৫ সালে সেলফ গভর্নমেন্ট অ্যাক্টের আওতায় যশোর ডিস্ট্রিক্ট বোর্ড প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকেই (১৮৮৬ সালে) যশোর ডিস্ট্রিক্ট বোর্ড প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৫৯ সালে তা পরিবর্তন করে ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল করা হয় এবং ১৯৭৬ সালে স্থানীয় সরকার আইনে করা হয় জেলা পরিষদ। যশোর ডিস্ট্রিক্ট বোর্ড প্রতিষ্ঠার ২৭ বছর পর ১৯১৩ সালে নিজস্ব ভবন স্থাপন করা হয়। ওই বছর ১৩ মার্চ ভবনের উদ্বোধন করেন ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান। এখনো অবিকৃত অবস্থায় সেই ভবনটি দাঁড়িয়ে আছে। এটি এখন কালের সাক্ষী।

সূত্র আরও জানায়, যশোরে যে ক’টি পুরনো ভবন ঐতিহ্যের চিহ্ন হিসেবে টিকে আছে তার মধ্যে জেলা পরিষদ ভবন অন্যতম। তবে বর্তমানে দাফতরিক কার্যক্রম চালানো এই প্রাচীন ভবনটি ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি জেলা কনডেমনেশন কমিটির সভায় পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।

মুজিব সড়কে জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে ঐতিহ্যবাহী এই ভবনটি ভেঙে সেখানে একটি বহুতল ভবন নির্মাণের সুপারিশ করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আওয়াল। এ জন্য ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিষদ যশোর যৌথভাবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবারও চিঠি দেয়। সেই চিঠির প্রেক্ষিতে চলতি বছরের গত ৫ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জেসমিন প্রধানের সই করা এক চিঠিতে ভবনটিকে অকেজো ঘোষণা করে তা নিলামে বিক্রি করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘জেলা কনডেমনেশন কমিটির সুপারিশ এবং জেলা পরিষদ যশোরের প্রস্তাবের পরিপেক্ষিতে যশোর জেলা পরিষদের ১৯১৩ সালের নির্মিত অতীব পুরাতন জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ জেলা পরিষদের অফিস ভবন’ পরিত্যক্ত ঘোষণা এবং ২৩ লাখ ১৩ হাজার ৮৮৭ টাকা (ভাঙার খরচ বাদে) টাকার প্রাক্কলন অনুযায়ী নিলামে বিক্রয়ের প্রশাসনিক অনুমতি নির্দেশক্রমে প্রদান করা হলো।’

যশোরের ঐতিহ্যের স্মারক এই ভবনটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন যশোরের সচেতন মহল। যশোরের ঐতিহ্য রক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক প্রবীণ সাংবাদিক মুক্তিযোদ্ধা রুকুনউদ্দৌলাহ বলেন, ‘যশোরের রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস। এই ভবনটি যশোরের ইতিহাস-ঐতিহ্যর একটি অংশ। এটা যদি ভেঙে ফেলা হয়, লোকে চিনবে কি করে যে যশোর প্রাচীন শহর। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ইতিহাস জানার জন্য এই ভবনটি রাখা উচিত।’

অদূরদর্শিতা ও স্বার্থপ্রীতির কারণে আজ আমাদের ঐতিহ্যের স্মারকগুলো একের পর এক ধ্বংস করা হচ্ছে বলে মনে করেন রুকুনউদ্দৌলাহ। জেলা পরিষদের এই ভবন ভাঙার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা না হলে বৃহৎ আন্দোলনের ডাক দেওয়ারও ঘোষণা দেন জেলার ঐতিহ্য রক্ষার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনে ভূমিকা রাখা এই নেতা।

জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘৫ তারিখে মন্ত্রণালয় চিঠি ইস্যু করলেও আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা এখনো পাইনি। তবে ওয়েব সাইট থেকে ৮ ফেব্রুয়ারিতে ডাউন লোড করে দেখেছি। পরবর্তীতে মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’

এই বিষয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল বলেন, ‘আমি এখনো চিঠি পাইনি। চিঠি না দেখে কিছু বলতে পারব না।’

জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, ‘চিঠি পেয়েছি। তবে এখনো টেন্ডার আহ্বান করা হয়নি। সভা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

সারাবাংলা/টিএম/এনএস

যশোর জেলা পরিষদ যশোরের জেলা পরিষদ ভবন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর