Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাবি অধ্যাপকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৭:০৫

ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন এক নারী শিক্ষার্থী। দেড় বছর ধরে তাকে যৌন হয়রানি করা হচ্ছে— এমন অভিযোগ ‍তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে সুরাহা চেয়েছেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী। অধ্যাপক নাদিরের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন তিনি। অভিযোগপত্রের সঙ্গে কল রেকর্ডিং এবং অন্যান্য সহায়ক প্রমাণ যুক্ত করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অধ্যাপক নাদির জুনাইদ। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার বলে সারাবাংলার কাছে দাবি করেছেন। বলেছেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তোলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এর আগে, ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে একটি ব্যাচের ফলাফলে ধস নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল ঢাবি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীরা সে অভিযোগও লিখিত আকারে দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে।

শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) প্রক্টর কার্যালয়ে যৌন হয়রানির লিখিত অভিযোগ দেন ওই শিক্ষার্থী। তাতে তিনি উল্লেখ করেছেন, শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর অঙ্গ নিয়ে মন্তব্য করার পাশাপাশি এসব এড়িয়ে গেলে অধ্যাপক নাদির জুনাইদ রেগে যেতেন। একই কথা রিপিট করতেন। জিজ্ঞাসা করতেন, এসব কথায় কোনো অনুভূতি হয় কি না। সাড়া না দিলে ওই শিক্ষার্থীকে ‘অনুভূতিহীন’, ‘নির্বোধ’, ‘ডাক্তার দেখানো উচিত’— এরকম কথা ওই অধ্যাপক বলতেন বলে উল্লেখ করেছেন শিক্ষার্থী।

একপর্যায়ে অধ্যাপক নাদির ওই শিক্ষার্থীকে বিয়ের প্রস্তাব দেন উল্লেখ করে ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘একপর্যায়ে তিনি তার বিয়ের প্রসঙ্গে কথা বলেন এবং স্পষ্টভাবে আমার দিকে ইঙ্গিত করেন। আমি খুব অবাক হই এবং খুব অস্বস্তিতে পড়ি। তবে আমি কৌশলে তাকে নাকচ করে দিই।’

অধ্যাপক নাদির জুনাইদ বিভিন্ন দ্বৈত-অর্থবোধক (ডাবল মিনিং) কথা বলতেন জানিয়ে ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাকে ওনার সঙ্গে বাজে জিনিস কল্পনা করতে প্ররোচিত করতেন। আমার সঙ্গে ঘন ঘন দেখা করতে চাইতেন এবং তার বাসায় যেতে বলতেন। আমি প্রতিবারই বিভিন্ন অজুহাতে তা নাকচ করতাম।’ অধ্যাপক নাদির আরও অনেক নারী শিক্ষার্থীর ‘অবয়ব নিয়ে নোংরা মন্তব্য’ করতেন এবং আরও অনেক শিক্ষার্থীকেই ‘বিয়ের প্রস্তাব’ দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন ওই শিক্ষার্থী।

এই অধ্যাপক সাংবাদিকতা বিভাগে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে উল্লেখ করে অভিযোগপত্রে শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা নিজ বিভাগে ভয়ের সংস্কৃতির মধ্যে বেড়ে উঠছি, নিজেদের মধ্যে সেলফ সেন্সরশিপ আরোপ করছি। একজন শিক্ষকের কাছে সবাই কোণঠাসা হয়ে পড়লাম, যেখানে উনি উনার মতো একটা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছেন।’

অভিযোগকারী শিক্ষার্থী জানান, অধ্যাপক নাদির জুনাইদের ‘ব্যক্তি-আক্রোশের শিকার’ হওয়ার ভয়ে দেড় বছর ধরে মুখ বুজে সব সহ্য করেছেন তিনি। অভিযোগপত্রে তিনি লিখেছেন, ‘শুধু এই ভয়ে আমার পরিবারের কাছে আমার দেড় বছর আগে থেকে বলতে হচ্ছে যে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করব না। দরকার হলে নিজের টিউশনির টাকা দিয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করব। কারণ আমি অনেক কাছ থেকে দেখেছি একজন শিক্ষকের ব্যক্তিগত আক্রোশ কত ভয়ংকর হতে পারে। সেই ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার হতে পারি বলে আমি গত দেড় বছরের বেশি সময় ধরে নিজের ওপর হওয়া যৌন হয়রানি মুখ বুজে সহ্য করেছি।’

ওই শিক্ষার্থী লিখেছেন, যৌন হয়রানির কারণে এই দেড় বছর ধরে প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাকে। গত বছরের শুরুতে কাউন্সেলিংও নিতে হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে তিনি অধ্যাপক নাদিরের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘লিখিত অভিযোগটি পেয়েছি। এটি দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অধ্যাপক নাদির জুনাইদ। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে একটি ব্যাচকে মৌখিক পরীক্ষায় নম্বর কম দেওয়ার যে অভিযোগ, তার সূত্র ধরেই যৌন হয়রানির অভিযোগ করা হয়েছে বলেও মন্তব্য তার।

ড. নাদির জুনাইদ সারাবাংলাকে বলেন, ভাইভা পরীক্ষার নম্বর কম দেওয়ার অভিযোগকে ইস্যু করে করে গত ৭ তারিখ (৭ ফেব্রুয়ারি) থেকেই আমার কাছে খবর আসতে থাকে যে তারা আমার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির আনার চেষ্টা করছেন। ৮ ফেব্রুয়ারি থেকেই এরকম খবর পাচ্ছিলাম। কেউ স্বেচ্ছায় রাজি না হলে বিভিন্নজনকে জোরাজুরিও করা হয়েছে অভিযোগ দিতে। এসব কথা শুনে নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে আমি এরই মধ্যে শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি।

অধ্যাপক নাদির সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি গতকালই (শুক্রবার) থানায় ডায়েরি করেছি। আর আজ আমার শিক্ষার্থীরা আমাকে জানিয়েছেন, আমার বিরুদ্ধে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করা হয়েছে। তাহলে আমি যা শুনেছিলাম, তাই ঠিক? আমার ২৪ বছরের শিক্ষকতা জীবনে এর আগে কখনো এমন অভিযোগ কেউ করেনি। এখন হঠাৎ করে একটি ঘটনা ঘটলো এবং তাকে কেন্দ্র করে এরকম একটি অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে তোলা হলো। অভিযোগ থাকলে তো যেকোনো সময়ই করা যেত। এখনই কেন এই অভিযোগ করতে হবে? একটি চলমান ইস্যুর মধ্যেই এই অভিযোগ সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে করা ছাড়া আর কিছু নয়।’

পরীক্ষায় কম নম্বর দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে ড. নাদির বলেন, ‘সেখানেও আমার কোনো ভূমিকা নেই। চারজন পরীক্ষক। আমি একা তো ছিলাম না। আমি একা তো নম্বর দিইনি। চারজন পরীক্ষক নম্বর দিয়েছেন। সবার নম্বর গড় করে নম্বর দেওয়া হয়েছে। আমার সিংগেল কোর্স বা আমি একা নম্বর দিলে হয়তো এ অভিযোগ করা যেত। এখানে আমার দোষ কোথায়?’

সুনির্দিষ্টভাবে এই ব্যাচের পক্ষ থেকে পরীক্ষায় কম নম্বর দেওয়ার অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে এই শিক্ষক বলেন, ‘আমি সবসময়ই স্ট্রিক্ট নম্বর দিয়ে থাকি। আমি যাদের নম্বর কম দিয়েছি বা বকাঝকা করেছি, তাদের রাগ থাকতে পারে। এই ব্যাচের শিক্ষার্থীদের প্রথম সেমিস্টারেও আমার কোর্স ছিল। তারা রেজাল্ট খারাপ করেছিল। তখন আমি খাতা খুলে দেখিয়েছিলাম কেন তারা নম্বর কম পেয়েছে। ফলে কেউ অভিযোগ করতে পারবে না যে আমি ক্লাসে পড়াইনি বা অযৌক্তিক কারণে নম্বর কম দিয়েছি।’

নিজেকে নির্দোষ দাবি করে অধ্যাপক নাদির বলেন, আমার ২৪ বছরের শিক্ষকতা জীবনে কখনো এমন কোনো অভিযোগের মুখোমুখিই হতে হয়নি। আমি তো শুনছিলামই যে আমার বিরুদ্ধে কাউকে দিয়ে অভিযোগ করানোর চেষ্টা চলছে। এখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ডাকলে আমি আমার জায়গা থেকে জবাব দেবো।

সারাবাংলা/আরএফ/একে

টপ নিউজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঢা‌বি যৌন হয়রানি সাংবাদিকতা বিভাগ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার শাজাহান খান
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০২:৪৫

সম্পর্কিত খবর