Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১০ম দিনে জমজমাট বইমেলা, বেড়েছে বিক্রিও

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২৩:১৪

ঢাকা: অমর একুশে বইমেলা শুরুর পর বরাবরের মতো এবারও ‘প্রস্তুতি’ নিয়ে প্রশ্ন ছিল। মেলার ৫ম দিন পর্যন্তও অনেক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে স্টলের কাজ করতে দেখা গেছে। ফলে প্রথম দিককার সরকারি ছুটির দিনেও জমেনি বইমেলা। কিন্তু ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে দর্শক ও পাঠক সংখ্যা বাড়তে থাকে। সেজন্য পরের সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে মেলা বেশ জমে উঠেছে।

গতকাল শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) ছিল দ্বিতীয় সপ্তাহের সরকারি ছুটির প্রথম দিন। এদিন ছিল শিশুপ্রহরও। তাই বইমেলায় পাঠকের বাড়তি চাপ লক্ষ্য করা যায়। সেই চাপ শনিবারও (১০ ফেব্রুয়ারি) অব্যাহত ছিল। এই চাপের কারণ হিসেবে অনেকেই রাজধানীর নতুন যানবাহন ‘মেট্রোরেল’ চলাচলের সুবিধাকে চিহ্নিত করছেন। এদিন সরেজমিনে অবশ্য এর প্রমাণও পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞাপন

রাজধানীর উত্তরা থেকে সপরিবারে মেলায় এসেছেন ব্যাংক কর্মকর্তা ওয়ালী ফয়সাল। সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘গতকালই মেলায় আসতাম। কিন্তু মেট্রোরেল বন্ধ থাকায় আসতে পারিনি। আজ চালু থাকায় এসেছি। এর আগের বছরগুলোতে অবশ্য বইমেলায় আসতে অনেক প্রিপারেশনের বিষয় থাকতো। এবার সময়ের দূরত্ব কমে আসায় মুহূর্তেই মেলায় চলে এসেছি। আগে পুরো বইমেলায় একবারই আসতে পারতাম। এবার চিন্তা করছি আরও দুয়েকবার আসা যাবে।’ সেক্ষেত্রে তিনি শুক্রবারও মেট্রোরেল চালু রাখার দাবি জানান।

রাত তখন ৮টা ছুঁই ছুঁই। চোখ আটকে গেল এক্সিট গেইটে। বেশ কিছু মানুষ দ্রুত সেই গেইট দিয়ে মেট্রোরেল স্টেশনের দিকে ছুটছেন। তাদের মধ্যেই দু’জনকে দাঁড় করালাম। এক মা আর মেয়ে। মিরপুরের পল্লবীর বাসিন্দা শাহনাজ পারভীন মেয়েকে নিয়ে বইমেলায় এসেছেন দুপুরের পর পর। সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে জানালেন দ্রুত স্টেশনে প্রবেশ করতে হবে। না হলে ট্রেন মিস করতে পারেন। অনুরোধ করায় কথা আরও একটু এগোলো। তিনি বললেন, ‘প্রতিবারই মেলায় আসতে অনেক ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়। এবার সেই ঝামেলা কমেছে মেট্রোরেলের কারণে। সামনের দিনগুলোত ফের আসার চেষ্টা করব।’

বিজ্ঞাপন

শনিবার দুপুরের পর থেকেই মেলায় ভিড় লক্ষ্য করা যায়। তবে সাধারণ স্টলগুলোর চেয়ে প্যাভিলিয়নগুলোতে পাঠকের ভিড় ছিল লক্ষ্য করার মতো। এর মধ্যে অন্য প্রকাশ, সময়, পার্ল, প্রথমা, ইউপিএল ও পাঠক সমাবেশে প্রচুর ভিড় ছিল। অন্যদিকে, সরকারি ছুটির দিন থাকায় শিশু চত্বরের স্টলগুলোতেও প্রচুর ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

সন্ধ্যার দিকে প্রথমা স্টলের একপাশে দাঁড়িয়ে অটোগ্রাফ দিচ্ছিলেন কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। তার নতুন বই ‘কখনো আমার মাকে’ ঘিরে পাঠকদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। আরেক পাশে কথাশিল্পী সুমন্ত আসলামকে ঘিরে জটলা পাকিয়েছিল পাঠকরা। তার নতুন বই ‘অর্ধেক তুমি অর্ধেক বনলতা সেন’ নিয়েও পাঠকের আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। একটু পর ফুরসত পেতেই কথা হলো তার সঙ্গে। সারাবাংলাকে সুমন্ত আসলাম বলেন, ‘পাঠকদের জন্যই মেলায় আসা। এই সময়ের অপেক্ষায় থাকি আমি। আমি তো পাঠকদের উচ্ছ্বাস নিয়েই বাঁচি, অনুপ্রেরণা পাই।’

একটু এগোতেই নজরে আসে অন্যপ্রকাশের স্টল। সেখানে প্রচুর পাঠক বই কিনছেন। সেখানকার এক বিক্রয়কর্মী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগের কয়েকদিনের চেয়ে আজ বিক্রি বেশ ভালো। গল্প ও উপন্যাসের কাটতি বেশি।’ সেখান থেকে একটু এগিয়ে যেতেই দিব্য প্রকাশের স্টল। সেখানকার এক বিক্রয়কর্মী এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমাদের এখানে ইতিহাস-ঐতিহ্যের বই সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। আগের দিনগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে আজ বেচা-বিক্রি ভালো।’

এবার মেলার দক্ষিণ পাশে রাখা হয়েছে শিশুচত্বর। গতকালের মতো আজও শিশু চত্বরে শিশু-কিশোরদের ভিড় ছিল। বিশেষ করে সিসিমপুরের আয়োজনে হালুম, টুকটুকি ও সিকুর পারফরমেন্স শিশুদের আলাদা মজা দিয়েছে। সেখানে অনেক শিশুকে ছবি আঁকতেও দেখা গেছে। এর পাশাপাশি তারা বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে নিজেদের পছন্দ মতো বই কিনছে। সবচেয়ে বেশি ভিড় ছিল সিসিমপুর, ইকরি মিকরি, ডাক ও প্রগতি প্রকাশনীর স্টলে। এর মধ্যে প্রগতি এনেছে থ্রি-ডি বই। যেগুলোর প্রতি শিশুদের আগ্রহ বেশি।

প্রগতির স্টলের সামনে দাঁড়িয়েই কথা হলো শিশু সিয়ামের সঙ্গে। সে এসেছে তার বাবা-মার সঙ্গে। সারাবাংলাকে সিয়াম বলে, ‘মেলায় আসার উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছে। আমি গ্রহ-নক্ষত্রের ত্রি-ডি বই কিনতে চেয়েছিলাম। আজ কিনতে পেরেছি। এখানে আরও অনেক বইয়ের ত্রি-ডি ভার্সন আছে। কিন্তু আমার পছন্দের বিষয় সায়েন্স। তাই সায়েন্সের বইগুলোই কিনলাম।’

বইমেলার বিক্রি নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি মো. আরিফ হোসেনের সঙ্গে। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আগের কয়েকদিনের চেয়ে আজ বিক্রি অনেকটাই বেড়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আমরা আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারব।’ তবে মেলার পরিবেশ নিয়ে তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মেলার সাজসজ্জা ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু হঠাৎ করেই এবারের বইমেলা একেবারেই সাদামাটা আয়োজনে হচ্ছে। কারণ, এবার কোনো ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান সাজসজ্জার দায়িত্বে নেই। বাংলা একাডেমিই এই দায়িত্ব পালন করছে।

অন্যদিকে, এবার খাবারের দোকান বসেছে মেলার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টটিউশনের গেইটের কাছাকাছি। গ্লাস টাওয়ারের লেক পাড় ও খাবারের দোকানগুলো ঘিরেও প্রচুর মানুষের ভিড় ছিল। খাবারের দোকানের পাশেই ওয়াশরুম ও নামাজের জন্য জায়গা তৈরি করা হয়েছে। তবে ওয়াশরুমের ব্যাপারে বিস্তর অভিযোগের কথা জানালেন মেলায় আসা অনেকেই। মেলা শেষ হতে এখনও অনেকদিন বাকি। তাই দ্রুত অব্যবস্থাপনাগুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে মেলা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন লেখক ও পাঠকরা।

উল্লেখ্য, শনিবার মেলায় এসেছে ১৫২টি নতুন বই। আর গেল ১০ দিনে নতুন বইয়ের সংখ্যা ৮২৩টি। একাডেমির তথ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, ২ ফেব্রুয়ারি ৩১টি, ৩ ফেব্রুয়ারি ৭৪টি, ৪ ফেব্রুয়ারি ৬৬টি, ৫ ফেব্রুয়ারি ৭০টি, ৬ ফেব্রুয়ারি ১০৮টি, ৭ ফেব্রুয়ারি ৬৯টি, ৮ ফেব্রুয়ারি ৮০টি ও ৯ ফেব্রুয়ারি ১৭৩টি নতুন বই মেলায় এসেছে।

ছবি: হাবিবুর রহমান, সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট, সারাবাংলা ডটনেট

সারাবাংলা/পিটিএম

অমর একুশ আনিসুল হক পাঠক বইমেলা লেখক সুমন্ত আসলাম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর