‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বিকৃতি রোধে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে হবে’
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০১:১৯
ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বিকৃতি প্রতিরোধের জন্য মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তথ্য অবিকৃত অবস্থায় জনগণের সামনে তুলে ধরা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন রচিত দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ইতিহাস জাতীয় জীবনে যে বিভ্রান্তি তৈরি করে, তার সবচেয়ে বড় শিকার আমাদের তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে যাদের জন্ম মুক্তিযুদ্ধের পরে। তাই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এই বিকৃতি প্রতিরোধের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তথ্য অবিকৃত অবস্থায় জনগণের সামনে তুলে ধরা। আর মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত সঠিক তথ্যের অন্যতম আধার মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে দেশ-বিদেশি প্রকাশিত পত্রিকার বিভিন্ন খবর।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যা বিশ্ব বিবেককে প্রবলভাবে নাড়া দিয়েছিল। ফলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত খবর অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ হতো। সে সময় পত্রিকায় যে খবরগুলো ছাপা হতো তা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনার নির্ভরযোগ্য দলিল। তাই মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ইতিহাস শনাক্ত করতে ১৯৭১ সালে প্রকাশিত সংবাদগুলো অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি উপায়। কিন্তু দেশ-বিদেশের শত শত পত্রিকা থেকে মুক্তিযুদ্ধের খবর বাছাই করা কঠিন কাজ। সেই কাজটিই আমাদের মুনতাসীর মামুনের নেতৃত্বে তার টিম দীর্ঘদিন ধরে করে আসছে।
ওবায়দুল হাসান আরও বলেন, এ পর্যন্ত গ্রন্থমালাটির মোট ৩০টি খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে। আজ সবগুলো গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন হলো। আমার ধারণা, মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত দলিলপত্রের সংখ্যা বিবেচনায় এটিই হয়তো এ সংক্রান্ত সবচেয়ে বৃহত্তর সংকলন। এই গ্রন্থমালায় একদিকে যেমন স্থান পেয়েছে মুক্তাঞ্চল, মুজিবগনর ও অবরুদ্ধ বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত পত্র-পত্রিকার খবর, তেমনি পশ্চিমবাংলা থেকে শুরু করে ত্রিপুরা-আসামের পত্রিকা, দিল্লি থেকে প্রকাশিত ইংরেজি পত্রিকা, এশিয়ার অন্যান্য দেশের পত্রিকা এবং এমনকি সুদূর যুক্তরাজ্যের পত্রিকার খবরও সংকলিত হয়েছে।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, বাংলাদেশকে ৩০ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন করা সত্ত্বেও স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে পারিনি। এটা সত্য, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি তাদের হার অত্যাবশ্যক জেনে মুক্তিযুদ্ধের অনেক দলিল-পত্র ধ্বংস করেছে। কিন্তু এটিও অস্বীকার করার উপায় নেই যে স্বাধীনতা উত্তর বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতে এ বিষয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়ীন।
এর আগে হাসান হাফিজুর রহমানের সম্পাদনায় ১৫ খণ্ডে প্রকাশিত হয় ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র’। প্রধান বিচারপতি বলেন, এর ওপর নির্ভর করেই আমরা এখনো চলছি। কিন্তু এর বাইরে যে বিপুল তথ্য বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে, তা সন্নিবেশ করার উদ্যোগ খুব একটা নেওয়া হয়নি। মুনতাসীর মামুনকে ধন্যবাদ ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই বিশাল কর্মযজ্ঞে নিজেকে সম্পৃক্ত করে আমাদেরকে সেই দায় থেকে মুক্ত করার জন্য। তিনি ২০০২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় দুই যুগ অক্লান্ত পরিশ্রম করে ঐতিহাসিক উপাদানগুলো মলাটবদ্ধ করে চিরস্থায়ী রূপে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলেন। সেগুলোর সদ্ব্যবহার করে তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন আঙ্গিক নিয়ে গবেষণায় নিয়োজিত হবে বলে আমার বিশ্বাস। আর এভাবেই এই গ্রন্থমালা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনায় নতুন দিগন্তের উন্মেষ ঘটাবে।
বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনী আয়োজনে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন রচিত ও সম্পাদিত ‘বঙ্গবন্ধুর জীবন (১৯২০-১৯৭১)’ ও ‘Media and the Liberation War of Bangladesh’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন ও আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব ও প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।
অনুষ্ঠানে বই দুটির লেখক-সম্পাদক বরেণ্য ইতিহাসবিদ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন ছাড়াও আলোচনা সভায় লেখক-সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবর রহমান, তরুণ ইতিহাসবিদ ড. চৌধুরী শহীদ কাদের প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সারাবাংলা/কেআইএফ/টিআর
ওবায়দুল হাসান প্রধান বিচারপতি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুনতাসীর মামুন