Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘ফিলিস্তিন যুদ্ধের চেয়েও বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনায়’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৫:৩৬

ঢাকা: দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা চলমান ইসরাইল-হামাস যুদ্ধে হতাহতের চেয়েও বেশি। বিচ্ছিন্নভাবে এসব তথ্য পাওয়া গেলেও হতাহতের মূল চিত্র জানতে একটি পূর্ণাঙ্গ ডাটা ব্যাংক প্রয়োজন যাতে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কাজ করা যায়।

রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত ‘এসডিজি’র লক্ষ্য অর্জনে সরকারী উদ্যোগে প্রাথমিক উৎস থেকে সড়ক দুর্ঘটনার পুর্ণাঙ্গ ডাটা ব্যাংক চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা উঠে আসে।

আলোচনা সভায় ইসরাইল-হামাস ভয়াবহ যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করে বলা হয়, ফিলিস্তিনের গাজায় এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ২৮ হাজার মানুষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে প্রাণহানি ৩১ হাজার ৫৭৮। যুদ্ধে এ পর্যন্ত আহত হয়েছেন ৫৮ হাজার। দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হচ্ছেন আড়াই থেকে তিন লাখ মানুষ।

সড়ক দুর্ঘটনাকে ভয়াবহ মহামারি উল্লেখ বক্তারা বলেন, প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে সরকারি উদ্যোগে প্রাথমিক উৎস থেকে সড়ক দুর্ঘটনার পুর্ণাঙ্গ ডাটা ব্যাংক চালু করতে হবে। এটি করতে পারে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, সড়ক নিরাপত্তা জোট শ্রোতার সভাপতি, অর্থনীতিবিদ ড.হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি কমাতে সড়কে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। সড়ক দুর্ঘটনা পুর্ণাঙ্গ ডাটা ব্যাংক তৈরির পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা তহবিলের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকতে হবে। একই সঙ্গে মানুষের সচেতনতা, দুর্ঘটনা আক্রান্তদের উদ্ধার তৎপরতায় সাধারণ মানুষদের সম্পৃক্ত করা জরুরি।

তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধের মূল দায়িত্ব সরকারের হলেও তারা এককভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত নন। আমাদের সড়কের অবকাঠামোগত বিস্তার ঘটছে, গাড়ি বাড়ছে, কিন্তু সড়ক নিরাপত্তা ইস্যুটি বরাবরই উপেক্ষিত থাকছে। তাই সুফল পেতে সরকারি-বেসরকারি সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে।

সভায় যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, দেশের সড়কে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ঠেকাতে বিআরটিএর চলমান গতানুগতিক কার্যক্রম অডিট করে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা চিহ্নিত করা, প্রাতিষ্ঠানিক অকার্যকারিতা সংস্কার করা জরুরি। সড়কের দুর্ঘটনা, প্রাণহানির চিত্র দেখলে মনে হয় দেশের সড়কে একটি ভয়াবহ যুদ্ধ চলছে। আমাদের সীমিত সামর্থ্যরে কারণে প্রাথমিক উৎস থেকে সড়ক দুর্ঘটনার ডাটাবেজ সংগ্রহ করা সম্ভব হয় নয়। তাই সংবাদপত্র তথা সেকেন্ডারি উৎস থেকে সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন তৈরি করছি। ফলে সংগঠিত সড়ক দুর্ঘটনার প্রকৃত চিত্র আমাদের প্রতিবেদনে উঠে আসে না।

তিনি বলেন, দেশের গণমাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনার ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত স্থান পায়। সব সংবাদপত্র আমরা মনিটরিং করতে পারি না, তাই ২০ থেকে ২৫ শতাংশের চিত্র তুলে ধরতে পারি। বিআরটিএ এই সেকেন্ডারি সোর্সের তথ্যকে অতিরঞ্জিত বলে বিভিন্ন সময়ে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু প্রাথমিক উৎসগুলোতে সড়ক দুর্ঘটনার প্রকৃত অবস্থা কী বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে সত্যতা কী— তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন মনে করছে না। ফলে সরকারের কাছে সড়ক দুর্ঘটনার সঠিক চিত্র পৌঁছায় না। এ কারণে সরকার সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারছে না।

সভায় বক্তারা বলেন, ২০২৩ সাল থেকে প্রথমবারের মতো বিআরটিএ সড়ক দুর্ঘটনার বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে দেখা গেছে, বিআরটিএ প্রতিবেদনের সঙ্গে পুলিশের প্রতিবেদন ও যাত্রী কল্যাণ সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবেদনের অমিল রয়েছে। বিআরটিএর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার খতিয়ে দেখা ছাড়াই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টকে অবাস্তব, যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদনকে অতিরঞ্জিত বলে দাবি করেছেন। অন্যদিকে, বুয়েটের বিশেষজ্ঞরা নিহত এবং আহতের সংখ্যা কাছাকাছি হওয়ায় বিআরটিএর সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, যাত্রী কল্যাণ সমিতিসহ সড়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যে কোনো দুর্ঘটনায় একজন নিহতের পেছনে তিন থেকে ১০ জন পর্যন্ত আহত হয়, যা বিআরটিএর রিপোর্টে আসেনি। আবার বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন তথা সেকেন্ডারি সোর্সের সমসংখ্যক সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহতের তথ্য বিআরটিএর বার্ষিক সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদনে আসেনি।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব আরও বলেন, বিআরটিএর প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২৩ সালে পাঁচ হাজার ৪৯৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচ হাজার ২৪ জন নিহত এবং সাত হাজার ৪৯৫ জন আহত হয়েছেন। সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য বিআরটিএ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া এবং জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে তৈরি করা হয়েছে বলে দাবি করা হলেও এখানে কোনো হাসপাতালের তথ্য নেওয়া হয়নি। বিআরটিএ তাদের সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান সঠিক এবং নির্ভুল বলে দাবি করেছে। কিন্তু যাত্রী কল্যাণ সমিতি দেশের সাতটি হাসপাতালে ২০২৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে জরুরি বিভাগে ভর্তির তথ্য পেয়েছে ৫৩ হাজার ২০৭ জন যা বিআরটিএর প্রতিবেদনে উপেক্ষিত।

সভায় আরও বক্তব্য দেন গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ আব্দুল হক, সাংবাদিক হারুন অর রশিদ, সাংবাদিক মনজুরুল আলম পান্না, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি তাওহিদুল হক লিটন ও এম মনিরুল হক।

সারাবাংলা/আরএফ/আইই

টপ নিউজ যাত্রী কল্যাণ সমিতি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর