গভীর সাগরে অভিযান, ৩০ ‘জলদস্যু’ গ্রেফতার
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:০৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: গভীর বঙ্গোপসাগরে অভিযান চালিয়ে ৩০ জনকে ধরে এনেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)। বাহিনীটি বলছে, এরা সবাই জলদস্যু। এদের মধ্যে একজন এর আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছিলেন।
র্যাব বলছে, মাছ ধরার ট্রলারে আক্রমণ করে তারা। বাধা দিলে খুন করতেও দ্বিধা করে না। ১০ থেকে ১৫ দিনের টার্গেট নিয়ে তারা সাগরে ডাকাতি করতে নামে। ডাকাতি শেষে লুটপাট করা মাছ ও জাল ভোলা ও বরিশাল অঞ্চলের দিকে বিক্রি করা হয়। এরপর লাভের অংশ আনোয়ারা-কুতুবদিয়া এলাকার ‘জলদস্যু’দের কাছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়।
সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের চট্টগ্রাম জোনের অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল মাহবুব আলম জানিয়েছেন, রোববার রাত থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অভিযান চালিয়ে ৩০ ‘জলদস্যু’কে গ্রেফতার করা হয়েছে, যারা মাছ ধরার ট্রলারে ডাকাতির প্রস্তুতির নিচ্ছিল। এ সময় তাদের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদসহ ডাকাতির সময় ব্যবহার করা দুটি ট্রলারও জব্দ করা হয়।
গ্রেফতার ৩০ জন হলেন— মো. করিম (৩৩), মো. রুবেল (৩৩) মো. জফুর (৩৫), শফি আলম (৪০), আবদুর রহিম (২৫), মো. শামীম (২১), মো. ইউসুফ (২৯), মো. শাজাহান (৩৭), মো. সাহাব উদ্দিন (৩৫), মো. শওকত (৩৭), মো. ইসমাইল (২৬), দেলোয়ার ইসলাম (৪২), নুর মোহাম্মদ (১৭), আব্দুর রহিম সিকদার (৩৪), মফিজুর রহমান (৩০), ফজল হক (৪০), গিয়াস উদ্দিন (২৬), মো. কাছেদ (১৯), আকিদ খান (৩৭), দিদারুল ইসলাম (৩৩), মো. নাইম (১৯), মো. হারুন (৪৪), মো. ইয়াছিন (২৯), খলিলুর রহমান (২৫), মো. ইকবাল হোসেন (২৪), মো. শাহেদ (২২), মো. হোসেন (২৭), মো. আলী হোসেন (২৪), আব্দুল মান্নান (৪০) ও মো. সোলায়মান (৩৮)।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব চট্টগ্রামের প্রধান জানান, গ্রেফতার দস্যুদের তিনটি দল আছে। প্রথম দলের দলনেতা করিম মাঝি। তিনি কুতুবদিয়া এলাকার বাসিন্দা। তার দলের কাজ ছিল ডাকাতি করার জন্য অস্ত্র, বোট, জাল ও আনুষাঙ্গিক সরঞ্জাম সরবরাহ করা। তার দলের সদস্য ৯ জন।
র্যাবের তথ্য বলছে, দ্বিতীয় দলের নেতা ইউসুফ মাঝি। ডাকাতির মূল পরিকল্পনা করাই ছিল তার কাজ ছিল। তিনি প্রথমে ডাকাতির জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নিবার্চন করতেন এবং ডাকাতদের একত্রিত করে নির্দেশনা দিতেন। এরপর ডাকাতির স্থান নির্বাচন করে সশরীরে হাজির থেকে ডাকাতির করতেন। তার দলের সদস্য ১১ জন।
তৃতীয় দলের নেতা করিম মাঝি। তার কাজ ছিল ডাকাতির পরে লুট করা বোট, মাছ, জাল ও অন্যান্য সরঞ্জাম সংগ্রহ করে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা। তার দলের সদস্য ১০ জন। ইউসুফ ও করিম নিজেদের ট্রলার করেই ডাকাতি করতেন বলে জানিয়েছেন লেফট্যানেন্ট কর্নেল মাহবুব আলম।
র্যাবের তথ্য অনুযায়ী, গ্রেফতার আসামিরা শীর্ষ জলদস্যু ও ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। বাঁশখালী, চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া ও মহেশখালী এলাকার মাছ ধরার ট্রলারের ডাকাতির ঘটনায় তাদের সম্পৃক্ততা আছে। এদের মধ্যে একজন আগে আত্মসমর্পণও করেছিল।
সংবাদ সম্মেলনে লেফট্যানেন্ট কর্নেল মাহবুব আলম বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি, ডাকাতি করার জন্য ৩০ থেকে ৪০ জনের একটি ডাকাত দল দুটি ট্রলার নিয়ে পতেঙ্গার ১৫ নম্বর ঘাট এলাকা থেকে ছেড়ে গেছে। খবর পেয়েই দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে (চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল) অভিযান চালায় র্যাব। রোববার রাতেই জলদস্যুদের অবস্থান শনাক্তের পর তাদের দীর্ঘপথ তাড়া করে দুটি ট্রলার থেকে ৩০ জনকে গ্রেফতার করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘অভিযানে দুটি ট্রলার থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহার করা আটটি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, পাঁচটি কার্তুজসহ বেশকিছু ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের মধ্যে ১৪ জনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় মামলা আছে।’
সারাবাংলা/আইসি/টিআর