বেরোবির অবকাঠামো উন্নয়নে ৩৩ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:০৪
ঢাকা: রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) অবকাঠামো উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। প্রকল্পের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি একাডেমিক ভবনকে ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। গবেষণাগার বাড়ানো ও অন্যান্য ভবনের উন্নয়নের পাশাপাশি নতুন কিছু আবাসিক ভবন নির্মাণের প্রস্তাবনাও রয়েছে প্রকল্পে।
‘বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরের একাডেমিক ভবনগুলোর উন্নয়ন ও আবাসিক ভবন স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এর কাজগুলো ২০২৬ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। ২৯ জানুয়ারি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) একটি সভাও হয়েছে।
পিইসি সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) আবদুল বাকী। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ডিপিপি (প্রকল্প প্রস্তাবনা) সংশোধন করে আবার প্রস্তাব পাঠাতে বলা হয়েছে। পিইসি সভায় বেশকিছু সুপারিশও করা হয়েছে। সেসব সুপারিশ প্রতিপালন করে ডিপিপি নতুন করে করলে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করা হবে।’
প্রস্তাবিত প্রকল্পে বেরোবির দুটি একাডেমিক ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি ভবনের ভিত্তি ১২ তলার হলেও সেটি সাত তলা পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়েছিল অন্য একটি প্রকল্পের আওতায়। এবার সেটি ১২ তলা পর্যন্ত সম্প্রসারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটিসহ দুই একাডেমিক ভবনের সম্প্রসারণ করা গেলে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষের সংকট দূর করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি গবেষণাগার বাড়িয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক ও গবেষণা কাজের সুবিধা দেওয়াও সম্ভব হবে।
দুই একাডেমিক ভবনের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ নির্বাহীদের আবাসন সুবিধা তৈরির প্রস্তাবও রয়েছে প্রকল্পে। সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি বলেন, উপউপাচার্য, ট্রেজারার ও রেজিস্ট্রারের বাসভবন কাম গেস্ট হাউজ নির্মাণ করা হবে ছয় তলা ভিতের ওপর ছয় তলা ভবন হিসেবে। এ ছাড়া একাডেমিক ও আবাসিক ভবনের জন্য আসবাবপত্র, এসি, লিফট, জেনারেটরসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কেনার প্রস্তাব রয়েছে প্রকল্পে।
বেরোবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাসিবুর রহমান সভায় বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। তার বিপরীতে শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষকদের অফিস কক্ষের সংখ্যা বাড়েনি। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের বাসভবন থাকলেও উপউপাচার্য, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রারের কোনো বাসভবন নেই। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এসব ব্যক্তিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে থাকতে হয়।
বেরোবি উপাচার্য বলেন, এতে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে অসুবিধা হয়। এমনকি একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজের জন্য শিক্ষক, কর্মকর্তাসহ অন্য অতিথিদের জন্য গেস্ট হাউজ না থাকায় রংপুর শহরে একটি বাড়ি ভাড়া করে গেস্ট হাউজ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ইউজিসি থেকে সেই গেস্ট হাউজের জন্য বরাদ্দ বন্ধেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষ-গবেষণাগার বাড়ানো এবং উপউপাচার্যসহ অন্যদের আবাসনের ব্যবস্থা করা ছাড়াও অতিথিদের জন্য গেস্ট হাউজও জরুরি হয়ে পড়েছে, যা এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
মূল্যায়ন সভায় সংযোজন-বিয়োজন
প্রকল্প প্রস্তাবনায় একাডেমিক ও নন-একাডেমিক ব্যবহারের জন্য রেফ্রিজারেটর, ওয়াটার পিউরিফায়ার ও ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড কেনার কথা উল্লেখ ছিল। এগুলো নিয়ে পিইসি সভায় প্রশ্ন ওঠে। এগুলো প্রকল্প থেকে বাদ দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া প্রস্তাবিত ফটোকপিয়ারের সংখ্যা একাডেমিক ও নন-একাডেমিক উভয় ক্ষেত্রে ১০টি করার বিষয়েও সবাই একমত হয় সভায়।
প্রস্তাবিত প্রকল্পে অফিস সরঞ্জাম ও গবেষণাগার সরঞ্জাম হিসেবে যেসব পণ্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলোর বিপরীতে ব্যয় অনেক বেশি ধরা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় সভায়। এ প্রসঙ্গে সভায় পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮ অনুযায়ী নির্ধারিত যাচাই কমিটি পুনরায় বাজারদর যাচাই করে প্রতিটি আইটেমের সংখ্যা সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণ করে নতুন করে ব্যয় প্রাক্কলনের পরামর্শ দেওয়া হয়।
এ ছাড়া আবাসিক ভবনে ব্যবহারের জন্য এসি কেনার ক্ষেত্রে প্রাপ্যতা অনুযায়ী প্রস্তাব করতে বলা হয়েছে। কোন ধরনের এসি, লিফট বা জেনারেটর কিনতে হবে, সেগুলোর বিস্তারিত তথ্যও উল্লেখ করতে বলা হয়েছে সভা থেকে। প্রকল্পে প্রস্তাবিত পানি, কুরিয়ার, ডাক, সাধারণ সরবরাহ, ব্যবহার্য দ্রব্য ইত্যাদি অঙ্গের ব্যয়ও আবশ্যিকভাবে যৌক্তিক করতে বলা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের মতামত
পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত প্রকল্পটি নেওয়ার যৌক্তিক ও বাস্তব কারণ পুনর্গঠিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (আরডিপিপি) সংযোজন করতে বলা হয়েছে। কমিশন বলছে, প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সুস্পষ্ট করতে হবে।
এই প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণসহ পূর্ত কাজের নকশা, ব্যয় প্রাক্কলনের ভিত্তি ও যৌক্তিকতা পুনর্গঠিত ডিপিপিতে সংযোজন করতে বলেছে কমিশন। এ ছাড়া প্রতিটি আইটেম চলমান রেট শিডিউলের নির্দিষ্ট আইটেম ও কোড উল্লেখ করে প্রকৌশল প্রাক্কলন বিস্তারিতভাবে পুনর্গঠন করে ডিপিপিতে সংযুক্ত করতে বলা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন বলছে, সব সুপারিশ অনুযায়ী প্রকল্পটি পুনর্গঠিত করা হলে প্রকল্পটি অনুমোদন পেতে পারে।
সারাবাংলা/জেজে/টিআর
একাডেমিক ভবন সম্প্রসারণ পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্প প্রস্তাব বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় বেরোবি বেরোবির অবকাঠামো উন্নয়ন