নজর কাড়ছে দৃষ্টিনন্দন স্টল, বই কেনার চেয়ে ছবি তোলার ঝোঁক বেশি
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২২:০২
ঢাকা: দূর থেকে মনে হবে চীন দেশের কোনো এক শহরের লাইব্রেরি বা বুক স্টল। লাল ড্রাগনের মাথার ওপরে ডোর বেল, সঙ্গে চলে মিউজিকও। তার সামনে কেউ বইয়ের পাতা উলটিয়ে দেখছেন, কেউ বই কিনছেন। কেউ কেউ আবার কেবল ছবি তুলেই সরে যাচ্ছেন স্টলটির সামনে থেকে।
অমর একুশে বইমেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের সামনের দিকেই অবস্থান ‘চায়না বুক হাউজ’ নামের এই স্টলের। দৃষ্টিনন্দন সেই স্টলটি আকর্ষণ করছে মেলায় আসা সব দর্শনার্থীর। সবাই সেখানে ভিড় জমাচ্ছেন স্টলটি দেখতে। সেখান থেকে কেউ বই কেনা হোক বা না হোক, ছবি তুলতে ভুল করছেন না কেউ।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বইমেলার ত্রয়োদশ দিনে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, কেবল চায়না বুক হাউজ নয়, অনেক প্রকাশনী ও সংস্থাই বইমেলায় নিজেদের স্টলগুলোকে এরকম দৃষ্টিনন্দন সজ্জায় সাজিয়েছে। সরকারি-বেসরকারি কয়েকটি দফতরও তাদের স্টলগুলোতে রেখেছে ব্যতিক্রমী সাজ। পাঠক-ক্রেতারা সেসব স্টলে ভিড় জমাচ্ছেন ছবি তোলার জন্য। তবে যে পরিমাণ দর্শনার্থীদের ভিড় এসব স্টলে, সে তুলনায় বেচাবিক্রি খানিকটা কমই।
বইমেলার বাংলা একাডেমির মাঠে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি তাদের স্টল সাজিয়েছে আবহমান বাংলার লোকজন সংস্কৃতির নানা সরঞ্জাম দিয়ে। স্টলটিতে শিল্পকলা একাডেমি প্রকাশিত বইগুলোও রাখা হয়েছে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে তৈরি করা হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টল।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের স্টল সাজানো হয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিক আবহে। ধূসর রঙের স্টলটি দর্শনার্থীদের নজর কেড়েছে। স্টলটি চোখে পড়ছে— এমন কেউই তার সামনে একটি ছবি না তুলে যাচ্ছেন না।
স্টলের বিক্রয়কর্মী মো. আকরাম হোসেন জানালেন, প্রত্নতাত্ত্বিক বিভিন্ন গবেষণা ও নিদর্শণের বই রয়েছে তাদের স্টলে। আকরাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে যারা গবেষণা করে থাকেন, মূলত তারাই এসব বইয়ের ক্রেতারা। তারা ঠিকই চলে আসছেন।’
বইমেলার মূল অংশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণ। গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই ঘাসফড়িংয়ের স্টল। সাজসজ্জাতেই যেন নাম ফুটে উঠছে। স্টলের কর্মী সুমাইয়া জানালেন, মূলত শিশুদের বই প্রকাশ করে ঘাসফড়িং। শিশুদের আকৃষ্ট করতেই ঘাসফড়িংয়ের আদলে স্টলটি সাজিয়েছেন তারা।
ময়ুরপঙ্খীর স্টলটি ময়ুরপঙ্খীর আদলে তৈরি না করলেও বাহারি সঙ্গে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। রমনা কালি মন্দিরসংলগ্ন মাঠের পুরোটাজুড়েই বইমেলার শিশু চত্বর। শিশুদের মনোযোগ কাড়তে সেসব স্টল সাজানো হয়েছে বৈচিত্র্যময় সব সাজে। ঝিঙেফুল, ফুলকি, শিশু কানন, ছোটদের মেলা স্টলগুলো সাধারণভাবে তৈরি করা হলেও এই চত্বরের মূল আকর্ষণ সিসিমপুর। স্টলটিতে দাঁড়ালে মনে হয় যেন সিসিমপুরেই আছি!
বরাবরের মতো এবারও স্টল নির্মাণে নিজেদের দৃষ্টিনন্দন দৃষ্টিভঙ্গী ও মননশীলতা ধরে রেখেছে ঐতিহ্য, আগামী প্রকাশনী, বাংলাপ্রকাশ, বিদ্যাপ্রকাশ, স্টুডেন্ট ওয়াচ, অবসর, অনিন্দ্য প্রকাশ, কথাপ্রকাশ, মাওলা ব্রাদার্স ও গ্রন্থিকের মতো প্রকাশনীগুলো। পাঞ্জেরি পাবলিকেশনস, জ্ঞানকোষ প্রকাশনীও আগের মতোই স্টল সাজিয়েছে চমৎকার করেই।
‘আকাশ’ এবার তাদের স্টলটি নির্মাণ করেছে গ্রামের ঘরের আদলে। টিনের চালের সেই ঘরের সামনে রয়েছে ছোট্ট বারান্দাও। স্টলটি নজর কেড়েছে বইমেলায় আসা পাঠক-দর্শনার্থীদের। স্টলের কর্মীরা জানালেন, বই কেনার চেয়ে ছবি তুলতেই ভিড় বেশি তাদের স্টলে।
বইমেলায় নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের অন্যতম গন্তব্য ছিল অন্যপ্রকাশ। তার প্রয়াণের পর অন্যপ্রকাশের প্যাভিলিয়ন আরও বেশি হুমায়ুন আহমেদনির্ভর হয়ে উঠেছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। হুমায়ুন আহমেদের পাঠকরাও অন্তত একবার না একবার ঢুঁ মারছেনই অন্যপ্রকাশে।
জাহিদুর রহমান নামে এক পাঠক সারাবাংলাকে বলেন, ‘হুমায়ুন আহমেদ মারা যাওয়ার পর থেকে বইমেলায় তেমন আসা হয় না। টানা পাঁচ বছর পর গত বছর এসেছি। এবার ফেসবুকে ছবি দেখে স্টলটা একটু আলাদা মনে হলো। তাই আসলাম।’
মাসব্যাপী বইমেলার উদ্বোধন হয় ১ ফেব্রুয়ারি। অধিবর্ষের এই বছরে মেলা চলবে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এখন পর্যন্ত এবারের মেলায় বেচাবিক্রি যথেষ্টই সন্তোষজনক বলে জানাচ্ছে স্টলগুলো।
সারাবাংলা/জেআর/টিআর
অমর একুশে বইমেলা অমর একুশে বইমেলা ২০২৪ দৃষ্টিনন্দন স্টল বইমেলা বইমেলা ২০২৪