বসন্তের রঙে রঙিন ভালোবাসা
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০০:১৭
জাতিসত্তা হিসেবে বাঙালির ইতিহাস যেমনি সুপ্রাচীন, তেমনি বিখ্যাত আমাদের অভিযোজন ক্ষমতাও। হাজার বছর ধরে আমরা শাসিত হয়েছি ভিন্ন ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর দ্বারা। আর এভাবেই বিভিন্ন জাতির ভাষা, পোশাক, জীবনাচার ঠাঁই করে নিয়েছে বাঙালির জীবনে। পেয়েছে নিজস্বতাও। এমনই একটি দিন ১৪ ফেব্রুয়ারি, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। করপোরেট মোড়লদের মাধ্যমে বিপণন স্বার্থে প্রচলন হলেও মানুষ ভালবাসা ছাড়া বাঁচতে পারে না। তাই ধীরে ধীরে দিনটি জায়গা করে নিয়েছে মানুষের মনে।
বঙ্গাব্দ বর্ষপঞ্জি সংস্কারের ফল হিসেবে কয়েক বছরের মতো এবারও ভালোবাসা দিবস এসেছে বসন্তের প্রথম দিনে। আর কে না জানে, বাঙালির ভালোবাসার মৌসুম ঋতুরাজ বসন্ত! ভ্যালেন্টাইনস ডে তথা ভালোবাসা দিবস তাই বসন্তের রঙে রঙিন।
বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে ও পহেলা ফাল্গুন। সেই সঙ্গে আজ সরস্বতী পূজাও। মলিন শীত পেরিয়ে বসন্ত আসে রূপ, রঙ, সুগন্ধ আর বৈচিত্র্য নিয়ে। চারদিকে ফোটে নানা রঙের ফুল। তাই তো বসন্ত বরণে প্রাধান্য পায় রঙ। রঙিন পোশাক, ফুল আর গয়নায় সেজে মানুষ বরণ করে নেয় বসন্তের প্রথম দিন। ঘর সাজানোয় প্রাধান্য পায় হলুদ গাঁদা ও লাল গোলাপ। ভালোবাসা দিবসেরও অন্যতম প্রকাশ লাল গোলাপে। একই দিনে দুই উদ্যাপনে তাই কেউ বেছে নেবেন হলুদিয়া সাজ, কেউ লাল।
বসন্ত যে বাঙালির ভালোবাসার ঋতু, প্রাচীনকাল থেকেই তা উঠে এসেছে বিভিন্ন কবির কবিতায়, গীতিকারের গানের বাণীতে। কুয়াশা, ধুলা আর ঠাণ্ডায় জড়সড়ো প্রকৃতিতে রোদের স্নিগ্ধতা নিয়ে আসে বসন্ত। আমের মুকুলের সুবাস আর কোকিলের গান বয়ে নিয়ে আসে মলয় বাতাস।
প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গে আড়মোড়া ভেঙে জেগে ওঠে মানুষের মনও। গ্রীষ্মপ্রধান দেশের মানুষ কয়েক মাসের শীতল আলস্য কাটিয়ে জেগে ওঠে নব উদ্যমে। আর সেই সেই ফাঁকে রোদের সঙ্গে সঙ্গে ঢুকে পড়ে প্রেম। প্রিয়জনের প্রতি আকাঙ্ক্ষা। সেই তো ভালবাসা।
পুরাণমতে, কামদেবের উৎসব বসন্ত। আর কামদেবের সঙ্গীরা হলো কোকিল, হাতি, ভ্রমর, বসন্ত ঋতু ও মলয় বাতাস। এ অঞ্চলে যেমন মানুষের মনে প্রেম ও কামের অনুরণন ঘটায় কামদেব, তেমনি গ্রিক পুরাণে দুষ্টু দেবশিশু কিউপিড সেই প্রেমিক, যে প্রেমের তীর ছুড়ে ভালবাসার উন্মেষ ঘটায়। তাই তো আমরা ফাল্গুনে ভালোবাসি, ভালবাসি ভ্যালেন্টাইনস ডে-তেও।
গৌরী প্রসন্ন মজুমদারের বিখ্যাত গানের প্রথম পঙ্ক্তিগুলো এমন— ‘মোর স্বপ্নের সাথী তুমি কাছে এসো/ আজ ঋতু ফাল্গুনে তবু দূরে থাকো/ বৃথা যায় দিন জানি তুমি আসো নাকো/ এসো গো এসো গো’। প্রেমিক মনের এই আকুল আবেদন প্রকাশ করার এই দিনের উদ্যাপন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেলেও তার আবেদন কমেনি একটুও।
সারাবাংলা/আরএফ/টিআর