মন্দিরে-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিদ্যা দেবী সরস্বতী বন্দনা
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৫:১৪
ঢাকা: নানা আয়োজন আর প্রার্থনায় পূজিত হলেন বিদ্যার দেবী সরস্বতী। বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) মাঘ মাসের পঞ্চম তিথিতে সকাল আটটা থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মন্দির এবং বাসা বাড়িতেও অনুষ্ঠিত হয় সরস্বতী পূজা। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম এ প্রধান উৎসবকে ঘিরে সারাদিন রাজধানী জুড়ে ছিল ধর্মীয় আমেজ। প্রার্থনা, পুষ্পাঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ বিতরণ ছাড়াও, ধর্মীয় সঙ্গীত, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছিল দিন জুড়ে। সকালে রাজধানী রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বড় আকারে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া বরাবরের মতো এবারও জগন্নাথ হলের মাঠে ব্যাপক আয়োজনে সরস্বতী পূজার আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
মন্দিরে মন্দিরে সরস্বতী পূজা
রাজধানী ঢাকায় বড় পরিসরে সরস্বতী পূজা কেবল রামকৃষ্ণ মিশন ও ঢাকেশ্বরী মন্দিরে অনুষ্ঠিত হতে দেখা যায়। এবারও নানা আয়োজনে সকালে রামকৃষ্ণ মিশনে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। ধূপ, প্রদীপ, দোয়াত, কলম, যবের শিষ রেখে চলে আরাধনা। ধূপের ঘ্রাণ আর প্রদীপের আলোয় সৃষ্টি হয় এক অন্যরকম আবহ। সকাল নটায় পূজা শুরু হয়ে ১১টায় শেষ হয়। এসময় অঞ্জলি নিতে আসা ভক্তদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয় মিশন কর্তৃপক্ষের। পরিবার পরিজন, সন্তানদের নিয়ে পূজায় অংশ নিয়েছেন বাবা মায়েরা। কেউ কেউ আসছেন সন্তানের হাতেখড়ি দিতে।
পূজায় অংশ নিতে আসা বাসুদেব সরকার সারাবাংলাকে বলেন, সরস্বতী আমাদের বিদ্যার দেবী। সন্তান যেন পড়াশুনায় মেধাবী হয়, মা বাবা ও দেশের সুনাম করতে পারে সেই প্রার্থনা সরস্বতী মায়ের কাছে।
শর্মিষ্ঠা দাস বলেন, এবারই বাচ্চাকে প্রথম স্কুলে দিয়েছি। তাই মায়ের কাছে প্রার্থনা করতে এসেছি।
মন্দিরের পুরোহিত বলেন, এখানে পূজার পাশাপাশি হাতেখড়ি দেওয়ার পর্ব থাকে। আগে থেকেই সিরিয়াল দিয়ে নাম লিখিয়ে যেতে হয় মিশনে। এরপর পূজার পরে হাতেখড়ি দেওয়া হয়।
সকাল ৯টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এখানে পূজায় অংশ নিতে আসা দীপালী পাল বলেন, বাচ্চাকে হাতেখড়ি দিতে নিয়ে এসেছি এখানে। পূজা অনুষ্ঠিত হয় সিদ্ধেশ্বরী কালি মন্দিরেও। সেখানেও সকাল থেকে চলে ব্যাপক আয়োজন।
হাতেখড়ি
সরস্বতী পূজার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হাতেখড়ি। বিদ্যার দেবীর কাছে শিক্ষালাভের আনুষ্ঠানিক সূচনা করা হয় এই হাতেখড়ির মাধ্যমে। কেউ স্লেটে, কেউ খাতায় প্রথমবারের মতো লিখেছেন। স্লেটে চকে অ, আ, ই, ঈ এবং এ বি সি ডি শিশুদের হাত ধরে লিখিয়ে দেন পুরোহিত। এর মধ্য দিয়ে সূচনা হয় পড়াশুনার। এই পর্বকেই বলা হয় হাতেখড়ি। বিশেষ করে রামকৃষ্ণ মিশন ও ঢাকেশ্বরীতে ব্যাপক আকারে হাতেখড়ির আয়োজন করা হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
পূজা অনুষ্ঠিত হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও
এছাড়া বিভিন্ন ছোট বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হয়। গোপীবাগ এলাকার স্পার্কল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল দশটার আগেই নানা সাজে অঞ্জলি নিতে স্কুলে হাজির হোন ছোট্ট শিশুরা। কেউ এসেছে বাবা মায়ের সঙ্গে, কেউ দাদু ঠাকুমার সঙ্গে। সকাল দশটায় শুরু হয় পূজা। পূজারির পাঠ করা মন্ত্রের সঙ্গে ঠোঁট মিলিয়ে পরম যত্নে মায়ের পায়ে ফুলে গুজে দেয়। পরে স্কুল শিক্ষকদের সঙ্গে অঞ্জলি নেওয়া শেষে প্রসাদ বিতরনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় পূজার আনুষ্ঠানিকতা। এখানকার শিক্ষকেরা জানান, প্রতি বছরই সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হয় এই স্কুলে। এবারও সে ধারাবাহিকতায় পূজার আয়োজন হয়।
বড় আয়োজন জগন্নাথ হলের মাঠে
প্রতিবছরের মতো এবারও একসঙ্গে বেশি সংখ্যক মণ্ডপ তৈরি করে সবচেয়ে বড় পূজার আয়োজন করা হয় ঢাবি জগন্নাথ হল খেলার মাঠে। জগন্নাথ হলের প্রবেশ পথে পুকুরে তৈরি করা হয়েছে সবচেয়ে বড় প্রতিমা। বেত, বাঁশের তৈরি সরস্বতী মায়ের বড় প্রতিমা ছিল এবারের পূজার মূল আকর্ষণ। আর মাঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদের নাম অনুযায়ী, বাংলা, গণিত, গণযোগাযোগ সাংবাদিকতা, ক্রমিনিওলোজি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সংস্কৃতি বিভাগ, ব্যাংকিং এন্ড ইনসিওরেন্স. নৃত্যকলাসহ প্রতিটি অনুষদ নিজ নিজ প্রতীক সামনে রেখে মণ্ডপ তৈরি করেছে। সেখানে বেলা ১টা পর্যন্ত চলে অঞ্জলি প্রদান। লোকেলোকারণ্যে পরিণত হয় পুরো খেলার মাঠ।
আয়োজকরা জানিয়েছেন মোট ৭২টি পূজা এখানে একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরমধ্যে মাঠে ৬৯টি পূজা মণ্ডপ, হলের পুকুরে ১টি, ও কর্মচারীদের ১টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া পূজা চলে ১২টা পর্যন্ত। এরপর অঞ্জলি নেওয়া চলে বেলা ১টা পর্যন্ত।
এ প্রসঙ্গে পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা জানান, ভালোবাসা দিবস, পহেলা ফাল্গুন এবারের পূজায় ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। গেল দুই বছর করোনার প্রভাব পূজাতে পড়েছিল। এবার প্রচুর মানুষের সমাগম ঘটেছে।
সনাতন ধর্মমতে সরস্বতী বিদ্যার দেবী। দেশের সকল সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থী মাঘ মাসের শ্রী পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজা করে থাকেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও সনাতন ধর্মাবলম্বী পরিবারগুলো নিজ নিজ বাড়িতে পূজার আয়োজন করে থাকে। পূজার সময় পবিত্র গ্রন্থ, পাঠ্যপুস্তক এবং কলম-পেন্সিল দেবীর আশীর্বাদ লাভের আশায় দেবীর আসনের কাছে রাখা হয়। এ উপলক্ষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়।
সারাবাংলা/জেআর/আইই