উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসার সেকেন্ড ইন কমান্ড গ্রেফতার
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৫:০৫
কক্সবাজার: কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সেকেন্ড ইন কমান্ড ও আরসা প্রধানের দেহরক্ষীসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব ১৫। এসময় দুটি বিদেশি অস্ত্র, একটি দেশীয় অস্ত্র ও চার রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত মধ্যরাতে উখিয়ার ২০ নম্বর এক্সটেনশন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি ঘর থেকে তাদের গ্রেফতার করে র্যাব।
বুধবার দুপুরে র্যাব ১৫ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন এসব তথ্য জানান।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, উখিয়ার চার নম্বর ক্যাম্পের মো. নুরের ছেলে আবুল হাসিম (৩১), ১২ নম্বর ক্যাম্পের মৃত আলী আহমেদের ছেলে হোসেন জোহার প্রকাশ আলী জোহার (৩২) ও ৬ নম্বর ক্যাম্পের নুর আলমের ছেলে মো. আলম প্রকাশ শায়ের মুছা (৩৫)।
র্যাব জানিয়েছে, গ্রেফতার আবুল হাসিম আরসার সেকেন্ড ইন কমান্ড। মো. আলম আরসা প্রধান আতাউল্লাহ জুনুনির দেহরক্ষী এবং আলী জোহার আরসার পরিবহন শাখার কমান্ডার। এদের সকলের বিরুদ্ধে হত্যাসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব ১৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন জানান, রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়, কয়েকজন আরসা সদস্য ২০ নম্বর এক্সটেনশন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি ঘরে অবস্থান করছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে মধ্যরাতে র্যাব-১৫, কক্সবাজার এর একটি চৌকস আভিযানিক দল বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় র্যাবের উপস্থিতি বুঝতে পেরে কৌশলে দ্রুত পালানোর সময় তিন আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার করা হয়।
তিনি বলেন, আবুল হাসিম ২০১৭ সালে বাংলাদেশে এসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়। ২০১৮ সালে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী সংগঠন আরসায় যোগদান করে। তিনি নম্বর ক্যাম্প ও বর্ধিত অংশে আরসার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য নতুন করে ঘাঁটি তৈরি করেন। পরে আবুল হাসিম সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে। তিনি আরসার নির্দেশনা মোতাবেক আরসার আধিপত্য বিস্তারের জন্য ক্যাম্পে সহিংসতা সৃষ্টি, মারামারি, প্রতিপক্ষ গ্রুপকে ক্যাম্প এলাকা থেকে বিতাড়িত করার জন্য দফায় দফায় সশস্ত্র হামলা, আরসার টার্গেটকৃত মাঝি, সাধারণ ও বিত্তশালী রোহিঙ্গাদের হত্যা ও অপহরণসহ নানা অপরাধ কাজ পরিচালনা করতেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে সন্ত্রাসী কার্যক্রম শেষে তিনি আত্মগোপনে চলে যেতেন। আবুল হাসিমের বিরুদ্ধে ৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এরশাদ, ইমাম হোসেন ও সাব মাঝি সৈয়দ আলম হত্যা, ৩ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আব্দুল হামিদ, মো. কাসিম ও ইউনুস হত্যা এবং ১৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাছিম হত্যাসহ সাতটি মামলা রয়েছে।
লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন আরও বলেন, হোসেন জোহার প্রকাশ আলী জোহার মিয়ানমারে থাকাকালীন আরসার সদস্য হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। যারা ২০১৭ সালে বাংলাদেশে প্রবেশ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করছে তাদের খুঁজে বের করে পুনরায় আরসায় ফেরত আনা ছিল তার মূল কাজ। ২০২০ সালের শুরুতে মৌলভী লাল মোহাম্মদ এবং মুফতি আতিকের সহযোগী হিসেবে আরসার কাচারী বা আদালতে বিচার কাজ করতেন। তখন আরসার কাচারীতে বিভিন্ন নির্যাতন ও জরিমানা আদায়ের মূল কাজটা করতেন তিনি। ২০২২ সালে কোনারপাড়া ডিজিএফআই কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডের পর আরসার কমান্ডাররা মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলে গেলে তিনি আরসার পরিবহন শাখার কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ পান। তার বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় দুটি মামলা রয়েছে।
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, মো. আলম প্রকাশ শায়ের মুছা ২০১৬ সালে মিয়ানমার থাকতেই আরসায় যোগদান করেন। তিনি মিয়ানমারে প্রথমে আরসার পাহারাদার হিসেবে কাজ করতেন। পরে আরসা নেতাদের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াতে তিনি তার মোটরসাইকেল ব্যবহার করতেন। পরে আতাউল্লাহ জুনুনির দেহরক্ষী হিসেবে কাজ করেন তিনি। তার বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় পাঁচটি মামলা রয়েছে।
গ্রেফতার তিন জনের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করে উখিয়া থানায় সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র্যাব অধিনায়ক। তিনি বলেন, এক বছরে র্যাব-১৫ আরসার ১০১ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করেছে। উদ্ধার করেছে সাতটি বিদেশি পিস্তল, ৫২টি দেশীয় অস্ত্র, ১৪০ রাউন্ড গুলি/কার্তুজ, ৬৭ রাউন্ড খালি খোসা, ৫০.২১ কেজি বিস্ফোরক, ২৮ পিস ককটেল, চার পিস আইইডি, ১দেড় কেজি মার্কারি (পারদ)।
সারাবাংলা/আইই