নির্মাণে কাটা পড়ছে টপসয়েল, হুমকির মুখে কৃষি
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:১৫
টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ইটভাটাসহ বাড়ি নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে টপসয়েল বা মাটির ওপরের অংশ। নির্বিচারে কাটা হচ্ছে ফসলি জমি। এতে মাটির জৈব পদার্থ, নাইট্রোজেন, ফসফরাসসহ প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে মাটির পুষ্টির সক্ষমতা। এর ফলে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখছেন কৃষিসংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয়রা বলছেন, এক দশক আগেও এ এলাকার কৃষি জমি ছিল ব্যাপক উর্বর। একই জমিতে তিন থেকে চারটি ফসল উৎপাদন করা হতো। সাম্প্রতিক সময়ে ইটভাটা, রাস্তা ও বাড়ি নির্মাণের জন্য কৃষিজমির ওপরের স্তরের মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। এতে করে দিন দিন মাটির উর্বরা শক্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এখন এসব জমিতে তিন ফসলের জায়গায় একটি বা দুটি ফসল আবাদ করা যাচ্ছে। কোথাও কোথাও ফলন বিপর্যয়ও ঘটছে।
মৃত্তিকা গবেষণা ইনস্টিটিউটের টাঙ্গাইল আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. উৎপল কুমার বলেন, মাটির ওপরের স্তর কেটে নিলে পুষ্টি উপাদান অস্বাভাবিক হারে কমে যায়। এভাবে মাটি কাটার ফলে জৈব পদার্থ ২ দশমিক ৪৯ শতাংশ থেকে কমে শূন্য দশমিক ৯২ শতাংশে নেমে আসে। নাইট্রোজেন শূন্য দশমিক ১৪ শতাংশ থেকে কমে শূন্য দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশে নেমে আসে। ফসফরাস চার দশমিক ৮২ শতাংশ থেকে কমে তিন দশমিক ৩৪ শতাংশে নেমে আসে।
এ ছাড়া পটাশিয়াম শূন্য দশমিক ১৬ শতাংশ থেকে কমে শূন্য দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ, বোরন শূন্য দশমিক ৪২ শতাংশ থেকে কমে শূন্য দশমিক ২৮ শতাংশ এবং ক্যালসিয়াম ছয় দশমিক ৩৬ শতাংশ থেকে নেমে এক দশমিক ২৫ শতাংশে নেমে আসে।
টপসয়েল কেটে নেওয়ায় কৃষিজমির ফলনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে ব্যাপক হারে। কৃষকরাও দুশ্চিন্তার মধ্য দিয়ে দিন পার করছেন।
বাসাইল মধ্যপাড়ার কৃষক শফিকুল ইসলাম রিপন বলেন, পেটে খাবার না থাকলে কোনো উন্নয়নই কাজে লাগবে না। যেভাবে মাটির ওপরের অংশ কেটে নেওয়া হচ্ছে, তাতে ফসল উৎপাদন মারাত্মক হারে ব্যাহত হবে। আগের মতো এখন আর ফসল ফলছে না। মাটিখেকোদের থামাতে হবে। না হলে বিপদ আসন্ন।
বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম বলেন, মাটির টপসয়েল কাটা ও শ্রেণিবিন্যাস পরিবর্তনকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এ ধরনের কাজে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
সারাবাংলা/টিআর