শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের বন্দির ঢামেকে মৃত্যু, অভিযোগ নির্যাতনের

ঢাকা: গাজীপুরের টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের (বালক) অসুস্থ এক কিশোর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। পরিবারের অভিযোগ কেন্দ্রের ভিতরে নির্যাতনের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। কিশোরের ডান চোখের পাশে কালো দাগসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে চামড়া ছেলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মৃত কিশোরের নাম মারুফ আহমেদ (১৬)। বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) মরদেহের ময়নাতদন্ত হবে বলে জানিয়েছেন শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সানারুল হক। গতকাল বুধবার (১৪ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। এর আগে, গত ১০ ফেব্রুয়ারি তাকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

মৃত মারুফের বাবা মো. রফিক আহমেদ জানান, তাদের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলায়। বর্তমানে খিলক্ষেত দর্জিবাড়ি এলাকায় পরিবারের নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন। মারুফ আগে কিছুদিন মাদরাসায় পড়াশুনা করলেও পরে পড়া বাদ দেয়। তিনি এলাকায় দিনমজুর। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে মারুফ ছিল সবার বড়।

রফিক আহমেদ বলেন, ‘গত ২৭ জানুয়ারি খিলক্ষেত এলাকায় এক ঝালমুড়িওয়ালার সঙ্গে কয়েকজন ছেলের ঝগড়া হয়। সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল মারুফ। তখন খিলক্ষেত থানা পুলিশ দুই ছেলের সঙ্গে মারুফকেও ধরে নিয়ে যায়। গত ২৮ জানুয়ারি কোর্টে চালান করে দেয়। খবর পেয়ে থানায় গিয়ে জানতে পারি মারুফের নামে ডাকাতি মামলা হয়েছে। আদালত থেকে তাকে গাজীপুরের টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত ৮ থেকে ১০দিন আগে মারুফের মা ইয়াসমিন বেগমকে নিয়ে টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে মারুফের সঙ্গে দেখা করতে যান। তখন মারুফ কান্না করে বলে— বাবা আমি জীবনেও আর মারামারি, খারাপ কাজ করব না। তোমরা আমারে এখান থেকে নিয়া যাও। ওরা আমাকে বাথরুম, থালা বাসন ধোয়ায়। না ধুইলে আমারে অনেক মারধর করে।’

রফিক আরও বলেন, ‘গত ১২ ফেব্রুয়ারি টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে থেকে ফোন করে জানায় মারুফ অসুস্থ। তাকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। পরে ঢাকা মেডিকেলে এসে দেখি আমার অচেতন অবস্থায় আছে। তার সঙ্গে কোনো কথা বলতে পারি নাই। মারুফের শরীরে, হাতের কনুইয়ে ও পিঠের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত দেখেছি। আমার ছেলেরে ওরা মারধর করেছে। মারধরের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। আমি আমার ছেলের মৃত্যুর বিচার চাই।’

মৃত মারুফ আহমেদের মরদেহর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছেন শাহবাগ থানার এসআই সানারুল হক। তিনি বলেন, ‘মারুফের ডান চোখে পাশে কালো দাগ রয়েছে, ডান ও বাম হাতের কনুইতে চামড়া ছেলা ও দুই পায়ের বিভিন্ন স্থানে চামড়া ছেলা।’ আগামীকাল মারুফের ময়নাতদন্ত হবে। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর কারণে জানা যাবে।

সুরতহালে প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, গাজীপুর টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের (বালক) তত্বাবধায়ক মো. দেলোয়ার হোসেনের অপমৃত্যু মামলার এজহার থেকে জানা যায়, খিলক্ষেত থানার মামলা নম্বর ২৯(১)২৪, ২৮/১/২৪। ওই মামলার বন্দি মারুফ গত ১০ ফেব্রুয়ারি দুপুরে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে অসুস্থ হয়ে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে গাজীপুর আহসানউল্লাহ মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৬০১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর সাড়ে ৬টার দিকে সে মারা যায়।

সারাবাংলা/এসএসআর/এনএস

টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের (বালক)