Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘পণ্য সরবরাহে সংকট সৃষ্টি করলে মিলের গেট বন্ধ হয়ে যাবে’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৮:৫২

চট্টগ্রাম ব্যুরো : যদি বাজারে নিত্যপণ্যের সরবরাহে সংকট সৃষ্টি হয় মিলের গেট ও দোকান বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে ‍হুঁশিয়ার করেছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।

বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে দেশে ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন তিনি। খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘খাতুনগঞ্জের পুরনো ঐতিহ্য আছে। এখানকার ব্যবসায়ীরা শত শত বছর ধরে সুনামের সঙ্গে সারাদেশে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করছে। আমি চাই, খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা সেই ঐতিহ্য ধরে রাখুক। একটা খাতুনগঞ্জ গড়ে উঠতে শত শত বছর লেগেছে। কিন্তু ধ্বংস করতে সাতদিনও লাগবে না। সুতরাং ব্যবসায়ীদের বলব, স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যবসা করতে হবে। পণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখতে হবে।’

ব্যবসায়ীদের পণ্যের যৌক্তিক মূল্য তালিকা প্রচারের অনুরোধ করে তিনি বলেন, ‘পণ্য সরবরাহ ঠিক না থাকলে দাম বাড়বে, এটাই বাজারের ধর্ম। কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বসে বাজার সম্পর্কিত তথ্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অপপ্রচার রোধে বড় হাতিয়ার হচ্ছে যৌক্তিক মূল্য তালিকা প্রচার।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ কিংবা ভোক্তা অধিকার দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কখনো সম্ভব নয়। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে প্রয়োজন অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ ও পণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে। যদি কৃষক পণ্যের দাম কম পায়, সে পণ্যের উৎপাদন কমিয়ে দেবে। এতে পণ্যের সরবরাহ কমে যাবে এবং দাম বাড়বে। সুতরাং পণ্যের যৌক্তিক মূল্য নিশ্চিত করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

রমজানের আগে সরকার নিত্যপণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে দেবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যেসব নিত্যপণ্য আছে, সেগুলোর মূল্য নির্ধারণ করার ক্ষমতা সরকারের আছে। যেসব নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য আছে, ট্যারিফ কমিশনের মাধ্যমে সেগুলোর মূল্য নির্ধারণ করে আগামী সপ্তাহের মধ্যে আমরা জানিয়ে দেব।’

বড়ো ব্যবসায়ীদের বাজার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘আগে আমাদের দেশে জাহাজের মালিক ছিল না। এখন অনেকেই জাহাজের মালিক হয়েছেন। অনেক সময় দেখা যায়, যিনি জাহাজের মালিক, তিনিই আবার মিলের মালিক, আবার তিনি নিজেই সরাসরি ভোক্তাপর্যায়ে পণ্য পৌঁছে দিচ্ছেন।’

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘৭ জানুয়ারি নির্বাচন হয়েছে। ৩ জানুয়ারি থেকে চাল ব্যবসায়ীরা (মিল মালিক) বাজারে চাল সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেন। আমি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েই ঢাকার মোহাম্মদপুর বাজারে গেলাম। দেখলাম, তারা মণপ্রতি ২০০-৩০০ টাকা বাড়িয়ে বাজারে সরবরাহ করছে।’

কৃত্রিম সরবরাহ সংকট তৈরির বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরাও বললেন, যখন আমরা (সরকার) ট্যাক্স কমিয়ে দিই, তখন তারা সময় মতো সাপ্লাই দেয় না। কোনো মিল যদি সাপ্লাই বন্ধ করে, তার গেইট বন্ধ হয়ে যাবে, আমি দায়িত্ব নিয়ে বললাম। সরবরাহে যদি কেউ অন্তরায় সৃষ্টি করে, পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, হয় ভালোভাবে ব্যবসা করতে হবে, নয়তো আমদানিকারক যত শক্তিশালীই হোক, ওই দোকান বন্ধ হয়ে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাজারে প্রতিযোগিতা থাকবে, প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ হবে। প্রতিযোগিতা না থাকলে বাজারে পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাওয়া যায় না। টিসিবি প্রয়োজনে নিজে আমদানি করবে, আমদানি করে বাজারে সরবরাহ ঠিক রাখবে। এসেনশিয়াল কমোডিটি নিয়ে সরকার কারও কাছে জিম্মি হতে চায় না, কাউকে জিম্মিও করতে দেবে না।’

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের ভাষ্যমতে সাপ্লাই চেইন নিয়ন্ত্রণ করে আমদানিককারক ও মিল মালিকরা। আপনাদের দায়িত্ব হলো কার কার কারণে সাপ্লাই চেইনে সমস্যা হচ্ছে সে খবর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানানো। কিন্তু আপনারা সেটা করেন না। পণ্যের সঠিক মূল্য তালিকা উপস্থাপন করলে ভোক্তা অধিদফতর আপনাদের হয়রানি করবে না।’

এফবিসিসিআই ও খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, ভোক্তা অধিদফতরের চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহ, খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছগির আহমেদ সভায় বক্তব্য দেন। এছাড়া ব্যবসায়ীরাও তাদের মতামত তুলে ধরেন।

এর আগে, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু নগরীর বন্দরটিলায় ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) আঞ্চলিক কার্যালয়ে রমজান উপলক্ষ্যে ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে দেশব্যাপী প্রথম ধাপে টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।

এ সময় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আছে, এরা সবসময় থাকবে। যারা ব্যক্তিস্বার্থে কাজ করে, মানুষের দুঃখকে পুঁজি করে ব্যবসা করতে চায়। সেইসব মজুতদারের বিরুদ্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শক্ত অবস্থান ঘোষণা করেছেন। প্রশাসনকে অনুরোধ করব, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে কোনো ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বা কেউ যেন কোনো কারসাজি করার সুযোগ না পায়।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সচেতন থাকতে হবে, তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীরা কোনোভাবেই খাদ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্য যেন বাড়াতে না পারে, সেজন্য সচেষ্ট থাকতে হবে।’

রমজানকে সামনে রেখে টিসিবির প্রত্যেক কার্ডধারীকে ৫২৫ টাকায় ২ লিটার সয়াবিন তেল, ২ কেজি মসুর ডাল, ১ কেজি ছোলা ও ৫ কেজি চাল দেয়া হচ্ছে। আগামী জুলাই থেকে টিসিবি জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে আগে দেওয়া কার্ড যাচাইবাছাই করে নতুনভাবে বিতরণের কাজ শুরু করবে বলে প্রতিমন্ত্রী জানান।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

গেইট পণ্য সরবরাহ বন্‌ধ মিল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর