Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রিগোজিনের পর নাভালনি— পুতিনবিরোধিতার নির্মম পরিণতি আরও যাদের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:২৩

অ্যালেক্সেই নাভালনি। ছবি: অনলাইন

কারাবন্দি অবস্থায় মারা গেছেন রাশিয়ার গত এক দশকের সবচেয়ে প্রভাবশালী বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনি। পরিবার-সমর্থক তো বটেই, পশ্চিমাবিশ্বও একসুরে তার মৃত্যুর জন্য সরাসরি ভ্লাদিমির পুতিনকেই দায়ী করছেন। বলছেন, পুতিনকেই এই মৃত্যুর দায় নিতে হবে। রুশ সরকার সে অভিযোগ অস্বীকার করেছে বরাবরের মতোই। বলছে, রুশবিরোধিতার চিরাচরিত রাজনৈতিক অবস্থান থেকেই পশ্চিমাবিশ্ব নাভালনির মৃত্যুর পেছনে পুতিনের হাত দেখছে।

বিজ্ঞাপন

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা রাশিয়ার সরকারের বক্তব্য গ্রহণ করতে রাজি নন। এর আগে গত বছরের আগস্টে বিমান ভূপাতিত হয়ে রাশিয়ার ভাড়াটে বিদ্রোহী দল ওয়াগনারের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের মৃত্যু হয়। ওই সময় তার মৃত্যুর পেছনেও পুতিনের ভূমিকা দেখেছিলেন বিশ্লেষকরা। বলেছিলেন, পুতিনের বিরোধিতা করারই খেসারত দিতে হয়েছে প্রিগোজিনকে।

নাভালনির মৃত্যুর পরও একই কথাই বলছেন বিশ্বনেতারাও। বলছেন, নাভালনি যে সাহস দেখিয়েছিলেন, তারই মূল্য দিতে হয়েছে তাকে। একইসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পুতিনের বিরোধিতা করতে গেলে যে কাউকেই একই পরিণতিই বরণ করতে হয়। প্রিগোজিন বা নাভালনির মৃত্যু পুতিনবিরোধী সবার জন্যই বার্তা হিসেবেই বিবেচিত হবে।

গত দুই দশকে পুতিনবিরোধী বা তার সমালোচনাকারী ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, মানবাধিকার কর্মী, গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষেরই ‘রহস্যময়’ মৃত্যু হয়েছে। এসব মৃত্যুর কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জানা যায়নি। তবে এসব ঘটনার পেছনে পুতিন বা রুশ সরকারের সুস্পষ্ট ভূমিকার অভিযোগ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যসহ অনেকেরই। পুতিনবিরোধী এমন কয়েকজনের কথঅ তুলে ধরা হচ্ছে এখানে।

আলেক্সান্ডার লিটভিনেনকো

রাশিয়ার সরকারি গোয়েন্দা বাহিনী ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিসে (এফএসবি) ছিলেন লিটভিনেনকো। তবে একসময় পুতিনের কড়া সমালোচক হয়ে ওঠেন। ‘হুইসেলব্লোয়ার’ ছিলেন তিনি। ২০০০ সালে ব্রিটেনে থিতু হন। সেখান থেকেই পুতিনের সমালোচনা চালিয়ে যান। রহস্যজনক বিষক্রিয়ার জের ধরে ২০০৬ সালের নভেম্বরে মৃত্যু হয় তার।

জানা যায়, লন্ডনের এক হোটেলে আরেক সাবেক রুশ এক গোয়েন্দার সঙ্গে চা খেয়েছিলেন লিটভিনেনকো। এর পরপরই অসুস্থবোধ করতে থাকেন। সারারাত বমি করেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ধরা পড়ে, পোলোনিয়াম-২১০ নামক এক ধরনের বিষাক্ত রেডিওঅ্যাকটিভ আইসোটোপ প্রয়োগ করা হয়েছিল তাকে, যেটি সংগ্রহ করা হয়েছিল রাশিয়ার ইউরাল পর্বতমালার নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টর থেকে।

বিজ্ঞাপন

২০২১ সালে ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত লিটভিনেনকোকে বিষ প্রয়োগে হত্যার জন্য রাশিয়াকে দায়ী করে। ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে সে অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ অভিহিত করে অস্বীকার করা হয়। লিটভিনেনকোকে হত্যায় অন্যতম অভিযুক্ত আন্দ্রেই লুগোভোই পরে রাশিয়ার সংসদেও স্থান পান।

ইয়েভজেনি প্রিগোজিন

পুতিনের বেশ নিকটজন ছিলেন প্রিগোজিন। তবে একসময় তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। নিজে ওয়াগনার নামে ভাড়াটে বাহিনী তৈরি করেন প্রিগোজিন। রুশ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। ২০২৩ সালের জুনের সেই বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়। বাহিনী নিয়ে বেলারুশে স্থান নেন প্রিগোজিন।

দুই মাস পর আগস্টে মস্কো থেকে বিমানে করে সেন্ট পিটার্সবার্গে যাওয়ার সময় ভূপাতিত হয়ে বিমানটি ধ্বংস হলে প্রিগোজিন মারা যান। প্রিগোজিনের সমর্থকরা বিমানটি ভূপাতিত হওয়ার পেছনে রুশ সরকারকেই দায়ী করেছিল। তবে ক্রেমলিন ওই ঘটনায় কোনো ধরনের সংযোগ অস্বীকার করে। প্রিগোজিনের মৃত্যুর পরদিন পুতিন মন্তব্য করেন, মেধাবী হলেও প্রিগোজিন কিছু ভুল করেছিলেন।

সের্গেই স্ক্রিপাল

রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা শাখায় কর্নেল ছিলেন সের্গেই স্ক্রিপাল। ১৯৯৯ সালে বাহিনী ছেড়ে যোগ দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে, কর্মরত ছিলেন ২০০৩ সাল পর্যন্ত। এর একবছর পর মস্কো থেকে গ্রেফতার হন তিনি। স্বীকার করেন, ১৯৯৫ সালে ব্রিটিশ গোয়েন্দা বাহিনীর মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলেন তিনি। ৭৯ হাজার ৩০০ পাউন্ডের বিনিময়ে তিনি রাশিয়ান এজেন্টদের সম্পর্কে ব্রিটিশ গোয়েন্দা বাহিনীকে তথ্য দিয়েছিলেন বলেও স্বীকার করেন। এ ঘটনার পর স্ক্রিপালকে কারাবন্দি করা হয়। পরে গোয়েন্দা বিনিময়ের আওতায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ব্রিটেনে চলে যান তিনি।

২০১৮ সালে স্যালিসবুরিতে স্ক্রিপাল ও তার মেয়ে ইউলিয়াকে নোভিচোক বিষ প্রয়োগ করা হয়। তবে তারা দুজনেই সে যাত্রায় প্রাণে বেঁচে যান। ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে বিষপ্রয়োগের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়। পরে এ ঘটনায় অভিযুক্ত দুই রুশ সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দাকে শনাক্ত করা হয়। তবে তারাও রাশিয়ার একটি টিভি চ্যানেলে উপস্থিত হয়ে অভিযোগ অস্বীকার করেন।

র‌্যাভিল ম্যাগনভ

রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লুকোঅয়েলের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান র‌্যাভিল ম্যাগনভের মৃত্যু হয় গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে। মস্কোর সেন্ট্রাল ক্লিনিক্যাল হসপিটালের ছয় তলার একটি জানালা দিয়ে পড়ে গিয়ে তার মৃত্যু হয়। রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা তাস এই মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে প্রচার করেছিল।

এর আগে ২০২২ সালের মার্চে লুকোঅয়েলের বোর্ডের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সহিংস সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানানো হয়। যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত সবার প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা দীর্ঘস্থায়ী অস্ত্রবিরতিকেই সমর্থ দিয়ে। আমরা বিশ্বাস করি, আলোচনা ও কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে সব ধরনের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।

বলা হয়ে থাকে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ তথা ইউক্রেনে রুশ হামলা নিয়ে প্রকাশে সমালোচনা করার ফলেই তাকে এই পরিণতি বরণ করতে হয়েছিল।

বরিস নিয়েম্‌ৎসভ

নিঝনি নোভগরদ ওব্লাস্টের সাবেক গভর্নর এবং রাশিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিন ক্ষমতায় থাকাকালে উপপ্রধানমন্ত্রী ছিলেন বরিস নিয়েম্‌ৎসভ। ২০১৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি মস্কোতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় তার। তাকে চারবার পেছন থেকে গুলি করা হয়েছিল।

পুতিনের কঠোর সমালোচক ছিলেন নিয়েম্‌ৎসভ। পুতিন যখন ইউক্রেনে হামলা শুরু করেন এবং যার ধারাবাহিকতায় ক্রিমিয়া দখল করে নেন, নিয়েম্‌ৎসভ এসব কার্যক্রমের বিরোধিতা করেছেন। তাকে যখন হত্যা করা হয়, ঠিক তখন তিনি পুতিনের এমন আগ্রাসী কার্যক্রমের বিরোধিতায় একটি র‌্যালি আয়োজনের জন্যই কাজ করছিলেন।

আন্না পোলিটকোভস্কিয়া

রাশিয়ান বংশোদ্ভূত সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী পোলিটকোভস্কিয়ার জন্ম নিউইয়র্কে। ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ঘটে যাওয়া দ্বিতীয় চেচেন যুদ্ধের রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে সুপরিচিত হয়ে ওঠেন তিনি। ২০০৬ সালে তার নিজের অ্যাপার্টমেন্টের লিফটের মধ্যেই হত্যা করা হয় তাকে। তখন তার বয়স মাত্র ৪৮ বছর।

পোলিটকোভস্কিয়ার খুনের ঘটনাটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাড়া ফেলেছিল। ২০১৪ সালে তাকে হত্যার দায়ে পাঁচজনকে সাজা দেওয়া হলেও এই হত্যার পেছনে নির্দেশদাতা কে বা কারা ছিল, তা স্পষ্ট হয়নি। তবে তার মৃত্যুর পর পুতিন বলেছিলেন, রাশিয়ার রাজনৈতিক অঙ্গনে পোলিটকোভস্কিয়ার রিপোর্টিংগুলোর প্রভাব ছিল একেবারেই অনুল্লেখ্য।

সের্গেই ম্যাগনিটস্কি

দুর্নীতির তথ্য উন্মোচন করেছিলেন রাশিয়ান আয়কর আইনজীবী সের্গেই ম্যাগনিটস্কি। হারমিটেজ ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট নামে এক কোম্পানির জন্য কাজ করতে গিয়ে তিনি সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের তথ্য বের করে এনেছিলেন। বলেছিলেন, সরকারি কর্মকর্তারা রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ অর্থ চুরি করে নিয়েছেন।

বিনা বিচারে তাকে কারাবন্দি রাখা হয়েছিল প্রায় একবছর। তার কারামুক্তির দিনক্ষণও ঠিক হয়েছিল। তবে এর মাত্র সাত দিন আগে ২০০৯ সালের ১৬ নভেম্বর ৩৭ বছর বয়সে কারাগারে তার মৃত্যু হয়। অভিযোগ রয়েছে, কারাগারে তাকে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছিল। পরে জানা যায়, কারাগারে হামলার শিকার হয়েছিলেন তিনি।

ম্যাগনিটস্কির মৃত্যুতে মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ সরকারি কর্মকর্তাদের চুরি ও প্রতারণার নানা অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়। হারমিটেজের সহপ্রতিষ্ঠাতা আমেরিকান বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ বিনিয়োগকারী বিল ব্রাউডারকে ২০০৫ সালে রাশিয়া থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। তবে ম্যাগনিটস্কির মৃত্যুর পর তিনি বিভিন্ন লবির মাধ্যমে ‘ম্যাগনিটস্কি অ্যাক্ট’ পাস করাতে সক্ষম হন, যাতে ২০১২ সালে সই করেছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ম্যাগনিটস্কির মৃত্যুতে যেসব রুশ কর্মকর্তা জড়িত, তাদের সাজা দিতে এই আইন পাস করা হয়েছিল।

মিখাইল খোদোরকোভস্কি

 

২০০৩ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি মনে করা হতো খোদোরকোভস্কিকে। ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ সম্পদ নিয়ে তিনি ফোর্বসের বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির তালিকায় ছিলেন ১৬তম স্থানে। ২০০৩ সালের অক্টোবরে জালিয়াতি ও কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাকে। ১০ বছর কারাভোগের পর পুতিন তার জন্য ক্ষমা ঘোষণা করলে তিনি কারামুক্ত হন এবং দেশ ছাড়েন। বর্তমানে লন্ডনে বসবাস করছেন তিনি।

সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার আগে অল-ইউনিয়ন লেনিনিস্ট ইয়াং কমিউনিস্ট লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বে পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর সাইবেরিয়ার কিছু তেলের খনির নিয়ন্ত্রণ পেলে তার সম্পদের পরিমাণ রাতারাতি বেড়ে যায়। ২০০১ সালে তিনি ওপেন রাশিয়া নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। পুতিনের বিরোধিতার কারণেই তাকে সাজাভোগ এবং পরে নির্বাসন বেছে নিতে হয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। খোদোরকোভস্কি এখনো এক্সে (সাবেক টুইটার) পুতিনের সমালোচনা করে থাকেন।

বরিস বেরেজোভস্কি

খোদোরকোভস্কি নির্বাসনে গিয়ে প্রাণে বাঁচলেও সে সুযোগ পাননি রুশ ব্যবসায়ী ও ওলিগার্ক তথা রাজনৈতিক অঙ্গনেও ব্যাপক প্রভাবশালী বেরেজোভস্কি। তিনিও যুক্তরাজ্যে চলে গিয়েছিলেন। সেখানে ২০১৩ সালে তার সাবেক স্ত্রীর বাড়িতে তার মরদেহ পাওয়া যায়। তার মৃত্যুর পেছনেও পুতিনের ভূমিকা রয়েছে বলে সন্দেহ করা হয়। তার মৃত্যুতে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়া হলেও পরে করোনারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, মৃত্যুর কারণ সুস্পষ্ট নয়।

বেরেজোভস্কি একসময় রাশিয়ার প্রধানতম টিভি চ্যানেল ‘চ্যানেল ওয়ান’-এর নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হন। ১৯৯৭ সালে তার সম্পদের পরিমাণ ছিল তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বলা হয়ে থাকে পুতিনের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পেছনেও তার ভূমিকা ছিল। তবে ক্রেমলিন তার টিভি চ্যানেলটি বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করলে পুতিনের সঙ্গে তার মতবিরোধের সূচনা হয়। ২০০০ সালে তিনি রাশিয়া ছাড়তে বাধ্য হন। ২০০৩ সালে রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছিলেন যুক্তরাজ্যে। তার মৃত্যুর পর পুতিন বলেছিলেন, বেরেজোভস্কি তার কাছে ক্ষমা চেয়ে চিঠি লিখেছিলেন।

আলেক্সান্ডার পেরেপিলিচনি

রুশ ব্যবসায়ী পেরেপিলিচনি ২০১০ সালে কিছু নথিপত্র সুইস কর্মকর্তাদের হস্তান্তর করে আলোচনায় আসেন। ওইসব নথিতে রাশিয়ার সরকারি কোষাগার থেকে ২৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার চুরির তথ্য ছিল। ম্যগনিটস্কির মৃত্যুর পর এ ঘটনাও আলোচিত হয়। তিনি দুর্নীতির একাধিক ঘটনায় সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।

২০১২ সালের নভেম্বরে ব্রিটেনের সারেতে তার বাড়ির কাছেই পেরেপিলিচনির মরদেহ পাওয়া যায়। শুরুতে জানা যায়, জগিং করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। প্রথম দিকে তার মৃত্যু স্বাভাবিকও মনে করা হয়েছিল। তবে ২০১৭ সালে বিশেষজ্ঞরা আরেক তদন্তের সময় বলেন, তাকে বিষ প্রয়োগ করা হয়ে থাকতে পারে। কারণ তার মরদেহে জেলেসেমিয়াম এলিজেন্স পাওয়া গিয়েছিল, যা মূলত গাছ থেকে তৈরি এক ধরনের বিরল বিষ। মার্কিন গোয়েন্দা সূত্রগুলোও ওই সময় পেরেপিলিচনিকে হত্যা করা হয়েছে বলে সন্দেহের কথা জানিয়েছিল।

অস্বাভাবিক সব মৃত্যু

পুতিন বা ক্রেমলিনের সঙ্গে বিরোধে জড়ানো ব্যক্তিদের প্রাণহানির খবর নেহায়েত কম হয়। গত বছরের আগস্টে প্রিগোজিনের মৃত্যুর খবর যখন জানা যায়, একই দিনে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা আরআইএ নোভোসতি এক খবরে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক জেনারেল জেনাডি লোপিরেভের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল। কৃষ্ণ সাগরে পুতিনের বাসস্থান নির্মাণের তথ্য তিনি জানতেন বলে ধারণা করা হয়। ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে তাকে ৯ বছর ৮ মাসের সাজা দেওয়া হয়েছিল। আরআইএর খবরে বলা হয়, জেনারেল লোপিরেভ কারাবন্দি অবস্থায় হঠাৎ অসুস্থবোধ করেন এবং ১৬ আগস্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

গত মে মাসে রাশিয়ার বিজ্ঞান ও উচ্চ শিক্ষাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী পিওতর কুচেরেংকো কিউবা সফর থেকে ফেরার পথে মৃত্যুবরণ করেন। ৪৬ বছর বয়স হয়েছিল তার। এই মৃত্যুকেও রহস্যজনক বলে বিবেচনা করা হয়।

জার্মানির বার্লিনে রুশ দূতাবাসের সামনে নাভালনির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। ছবি: অনলাইন

এ ছাড়া গত এক বছরে অন্তত ১৩ জন প্রভাবশালী রুশ ব্যবসায়ী আত্মহত্যা বা রহস্যজনক বিভিন্ন পরিস্থিতিতে পড়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এর মধ্যে ছয় জন দেশটির জ্বালানি খাতে সবচেয়ে বড় দুই কোম্পানি গাজপ্রম ও লুকওয়েলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। এদের মধ্যে লুকওয়েল সরাসরি ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান প্রকাশ্য করেছিল।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে ভারতে মৃত্যু হয় রাশিয়ার আরেক শীর্ষ ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ পাভেল আনতভ। ভারতীয় পুলিশ জানায়, হোটেলের চার তলা থেকে পড়ে গিয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলেছিল ভারতীয় পুলিশ। এর দুদিন আগেই আনতভের জন্মদিনে তার বন্ধু ও সফরসঙ্গী ভ্লাদিমির বুদানভের মৃত্যু হয় হার্ট অ্যাটাকে

রাশিয়ার জাহাজ নির্মাণ খাতের শীর্ষ একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান আলেক্সান্ডার বুজাকভও ২০২২ সালের ডিসেম্বরে মারা যান। ওই প্রতিষ্ঠানটি নন-নিউক্লিয়ার সাবমেরিন নির্মাণের জন্য সুপরিচিত। রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছিল, বুজাকভের মৃত্যুর কোনো কারণ কর্তৃপক্ষ জানাতে পারেনি।

এর মাসখানেক আগেই মস্কো এভিয়েশন ইনস্টিটিউটের সাবেক রেক্টর আনাতোলি গেরাশেংকোর মৃত্যু হয়। ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে দুর্ঘটনায় তার মৃত্যুর তথ্য জানায়। তবে সেই দুর্ঘটনার কোনো তথ্য জানা যায়নি।

সূত্র: দ্য ইনডিপেন্ডেন্ট, রয়টার্স, বিবিসি, সিএনএন

সারাবাংলা/টিআর

অ্যালেক্সেই নাভালনি আলেক্সান্ডার লিটভিনেনকো ইয়েভজেনি প্রিগোজিন করুণ পরিণতি পুতিনবিরোধী পুতিনের সমালোচক ভ্লাদিমির পুতিন রহস্যজনক মৃত্যু

বিজ্ঞাপন

আজ সশস্ত্র বাহিনী দিবস
২১ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:১৬

আরো

সম্পর্কিত খবর