ঢাকা: আসন্ন রমজান মাসে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় খোলা রাখার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে শিক্ষা সচিব এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব বরাবর।
রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. ইলিয়াছ আলী মন্ডল রেজিস্ট্রি ডাকযোগে এই নোটিশ পাঠিয়েছেন।
নোটিশে বলা সংবিধানের ২(ক), ৩১ ও ১৫২(১) অনুচ্ছেদের উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৯৮ শতাংশ নাগরিক মুসলমান। সংবিধান অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এবং নাগরিকরা স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করতে পারবেন। আইন অনুযায়ী ছাড়া এমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না যাতে কোনো ব্যক্তির স্বাধীনতার হানি ঘটে। সংবিধানে আরও বলা হয়েছে, ‘আইন’ অর্থ বাংলাদেশে আইনের ক্ষমতা সম্পন্ন যেকোনো প্রথা ও রীতি।
নোটিশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকে রমজান মাসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে— এটিই আইন, প্রথা ও নীতি এবং সে অনুযায়ী সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাহে রমজান মাসে বন্ধ থাকে। তাই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় রমজান মাসে খোলা রাখতে সরকারের তর্কিত সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক।
নোটিশে আরও বলা হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত বছরের ১১ ডিসেম্বর দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আসন্ন রমজান মাসে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সম্প্রতি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রমজান মাসে খোলা রাখার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত বৈষম্যমূলক ও সাংঘর্ষিক। যদিও মাদরাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রমজান মাসে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়েছে।
নোটিশে আরও বলা হয়, রমজান মাসে শিক্ষকরা রোজা রেখে ক্লাসে লেখাপড়া শেখানোর বিষয়ে মনোযোগী হন না। এ ছাড়া রোজা রেখে সন্তানের নিয়ে স্কুলে যাতায়াত অভিভাবকদের জন্য কষ্টকর হবে। রমজানে স্কুল খোলা রাখা শিশুদের ওপর শারীরিক ও মানসিক চাপ তৈরি করবে।
নোটিশে আইনজীবী বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে রমজান মাসে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকত। সরকারের বর্তমান সিদ্ধান্ত সংবিধানের ২৬, ২৭, ২৮, ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাই ওই সিদ্ধান্ত বাতিল ও রমজানে স্কুল বন্ধ রাখার অনুরোধ করছি। এর ব্যর্থতায় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
আইনজীবী ইলিয়াছ আলী মন্ডল সারাবাংলাকে বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম— এটি সংবিধানে উল্লেখ করা আছে। প্রতি বছর রমজান মাসে শিশু-কিশোরসহ সবার শরীর-স্বাস্থ্য বিবেচনায় নিয়ে পুরো রমজান মাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়। এ বছর পুরো রমজান মাসে মাদরাসা বন্ধ থাকলেও প্রাথমিক বিদ্যালয় রমজানের প্রথম ১০ দিন ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় রমজানের প্রথম ১৫ দিন খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত সংবিধানের ২৬, ২৭, ২৮, ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা অবৈধ বলে মনে করি।
‘এ কারণে রমজান মাসে স্কুল খোলা রাখার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চেয়ে শিক্ষা সচিব এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিবকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। অন্যথায় এর প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হবে,’— বলেন আইনজীবী ইলিয়াস।