Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কবিতার বই বাড়লেও বাড়ছে না পাঠক-বিক্রি, প্রশ্নবিদ্ধ মান

রাহাতুল ইসলাম রাফি, ঢাবি করেসপন্ডেন্ট
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:৩১

অক্ষর প্রকাশনীর তথ্য, তরুণ কবিদের তুলনায় রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ ও মুহম্মদ নুরুল হুদার মতো প্রতিষ্ঠিত কবিদের কবিতার বইয়ের বিক্রিই বেশি। ছবি: সুমিত আহমেদ/ সারাবাংলা

গত পাঁচ বছরে কবিতার বই প্রকাশের সংখ্যা বেড়েছে। শুধু তাই নয়, বইমেলায় যত বই বের হয় তার প্রায় এক-তৃতীয়াংশই কবিতার বই। তবে প্রকাশের সংখ্যা বাড়লেও কবিতার বইয়ের মান বেড়েছে কতটুকু— এ প্রশ্নে ইতিবাচকের তুলনায় নেতিবাচক আলোচনাই বেশি।

প্রকাশনাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কবিতার লেখক কিংবা বই বাড়লেও বাড়েনি কবিতার মান! একইসঙ্গে কমেছে কবিতার পাঠক বা কবিতার বইয়ের ক্রেতা। এর ফলে কমে গেছে কবিতার বইয়ের বিক্রিও।

বিজ্ঞাপন

বাংলা একাডেমির জনসংযোগ দফতরের তথ্য বলছে, গত পাঁচ বছরে বইমেলায় মোট কবিতার বই এসেছে পাঁচ হাজার ১৯৭টি। একই সময়ে প্রকাশিত সব ধরনের বইয়ের সংখ্যা ১৬ হাজারের কিছু বেশি। সেই হিসাবে মোট বইয়ের ৩২ শতাংশেরও বেশি, অর্থাৎ প্রায় এক-তৃতীয়াংশই দখল করে নিয়েছে কবিতার বই।

বছর ধরে হিসাব করলে কেবল ২০২১ সালে কবিতার বই হাজারের সীমা পার করতে পারেনি। বাংলা একাডেমির হিসাব বলছে, ২০২০ সালে এক হজার ৫৮৫টি, ২০২১ সালে ৮৯৮টি, ২০২২ সালে একক হাজার ৬০টি এবং ২০২৩ সালে এক হাজার ২৪৭টি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। আর এবারে অর্থাৎ অমর একুশে বইমেলা ২০২৪-এর আজকের দিন পর্যন্ত তথা ১৮ দিনে প্রকাশিত কবিতার বইয়ের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। বইমেলার শেষের দিকে বই প্রকাশের হার বেড়ে যায় বলে এবারও হয়তো কবিতার বইয়ের সংখ্যা হাজারের সীমা পার করবে।

প্রতিবছর এত বিপুল পরিমাণে কবিতার বই প্রকাশিত হলেও বইপ্রেমী, পাঠক ও প্রকাশকদের দাবি, ‘ভালো মানসম্পন্ন’ কবিতার বই বিরল হয়ে পড়েছে। কবিতার বই হিসেবে যেগুলো প্রকাশ পাচ্ছে, তাতে পড়ার মতো কবিতা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কবিতাপ্রেমীদের অনেকেই তাই এখনো কেবল ভরসা রাখছেন প্রতিষ্ঠিত ও বিখ্যাত কবিদের বইয়েই।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান রুহান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ছন্দ মিলিয়ে দিলেই তো কবিতা হয়ে যায় না। কবিতা লেখাকে ফ্যাশন বানিয়ে ফেলা হয়েছে এখন। দুপয়সা থাকলেই কবিতার নামে অখাদ্য লিখে ছাপিয়ে দেওয়া যাচ্ছে। সত্যি বলতে, কবিতা বলতে সেই অর্থে এখন আর কিছুই হয় না।’

শিশু-কিশোরদের কবিতার বইও মেলায় কম নেই। তবে সেগুলোর বিক্রিও আশানুরূপ নয়। ছবি: সুমিত আহমেদ/ সারাবাংলা

বইমেলায় ঘুরতে আসা আরেক বইপ্রেমী ফয়সাল আহমেদও ‘কবিতার মান’ নিয়ে একই ধরনের মন্তব্য করছেন। তিনি বলেন, ‘বাঙালিদের মধ্যে তরুণ বয়সে কবিতা লেখার প্রবণতা সবসময়ই বেশি। তবে বই প্রকাশ এখন যতটা সহজ, তেমনটি আগে ছিল না। এ কারণে হয়তো বইয়ের সংখ্যা এখন বেশি। আর শুধু কবিতার বই নয়, গল্প-উপন্যাস কিংবা ফিকশন ও নন-ফিকশন সব ধরনের বইয়ের মান নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে। সার্বিকভাবেই মানসম্মত বইয়ের সংখ্যা আশানুরূপ নয়। কবিতার বই যেহেতু সংখ্যায় বেশি, তাই মানসম্মত নয় এমন কবিতার বইয়ের সংখ্যাও বেশি।’

প্রকাশকদের কণ্ঠেও কবিতার বইয়ের ভালো পাণ্ডুলিপির জন্য আক্ষেপ শোনা গেছে। মানহীন কবিতার আধিক্যের কথা জানিয়েছেন তারাও। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পুরোনো একটি প্রতিষ্ঠান খান ব্রাদার্স অ্যান্ড কোম্পানি অনেক আগেই কবিতার বই ছাপানো বন্ধ করেছে।

প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী কে এম ফিরোজ খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা কবিতার বই ছাপা বন্ধ করে দিয়েছি অনেক আগেই। হুমায়ূন আজাদ, আবুল হাসানদের বই আমরা ছাপতাম। তারা প্রত্যেকেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন।’

ফিরোজ খানের দাবি, বাংলাদেশে এখন সবাই কবি। কেউ প্রকাশ করতে পারেন, কেউ পারেন না। তিনি বলেন, ‘আমরা কবিতার বই ছাপা বন্ধ করেছি মানহীনতা এবং প্রকাশনা সংস্থার আধিক্যের কারণে। এখন আমরা সিরিয়াস কিছু বিষয় নিয়ে বই ছাপছি।’

তরুণ কবি সাঈদ বিলাস অবশ্য একটু ভিন্নভাবেই দেখছেন এই সময়ের কবিতাচর্চাকে। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এখন সময়টা অন্যরকম। প্রযুক্তির প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের বইয়ের সঙ্গে এক ধরনের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। আবার কবিতা শুধু নয়, সাহিত্যচর্চার ধরন বদলে গেছে। মানুষের সময় এখন ডিজিটাল ডিভাইসের সঙ্গে অনেক বেশি কাটে। এরকম সময়কেও ধারণ করার মতো কবিতা অনেকেই লেখার চেষ্টা করছেন, লিখছেন। রাজনৈতিক কবিতা লেখা হচ্ছে, দ্রোহ নিয়ে কবিতা লেখা হচ্ছে। নিছক প্রেম-ভালোবাসার কবিতাও লেখা হচ্ছে। কবিতা শুধু নয়, যেকোনো শিল্পেরই মান নির্ধারণটা কঠিন। সে কথা বিবেচনায় নিয়েও বলা যায়, সব কবিতা মানসম্মত হচ্ছে না। হয়তো বেশিরভাগ কবিতাই মানসম্মত হচ্ছে না। কিন্তু ভালো কবিতাও হচ্ছে।’

সাঈদ বিলাসের দুটি কবিতার বই রয়েছে। দুটি বই-ই তিনি ব্যক্তি উদ্যোগে প্রকাশ করেছিলেন। সেগুলোর সব কপিই তার পরিচিত পাঠক বলয়ের মধ্যে বিক্রি হয়েছে বলেও জানালেন। এ ক্ষেত্রে বরং ‘ভালো কবিতা’ পাঠকের কাছে না পৌঁছানোর পেছনে প্রকাশনা শিল্পে পেশাদারিত্বের অভাব দেখছেন তিনি।

বইমেলায় শিশু-কিশোরদের উপস্থিতি লক্ষণীয়। ছবি: সুমিত আহমেদ/ সারাবাংলা

সাঈদ বিলাস বলেন, ‘আমাদের দেশে প্রকাশনা সংস্থাগুলোর মধ্যে পেশাদারির ঘাটতি রয়েছে। তারা কবিতার বইয়ের পাণ্ডুলিপিগুলো যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করে প্রকাশ করলে ভালো কবিতাগুলো পাঠকের কাছে পৌঁছানো সহজ হয়ে যেত। মানসম্মত নয়, এমন কবিতার পাণ্ডুলিপি ফিরিয়ে দেওয়া হলে তখন কবিতার বইয়ের বেশির ভাগ মানহীন— এমন কথা হয়তো শুনতে হতো না।’

অক্ষর প্রকাশনীর স্টলে প্রয়াত কবিদের মধ্যে রয়েছে বরেণ্য কবি রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর কবিতার বই। বাংলা একাডেমির বর্তমান মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নুরুল হুদার কবিতার বইও রয়েছে তাদের। স্টলের বিক্রয়কর্মী জানালেন, তারা প্রতিষ্ঠিত কবিদের পাশাপাশি নবীন কবিদের বইও তারা নিয়মিত প্রকাশ করে থাকেন। তবে নতুন কবিদের বই বিক্রির হার আশানুরূপ নয়। প্রতিষ্ঠিত কবিদের বইয়ের বিক্রি বরং ভালো।

সময় প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘অন্যান্য বইয়ের তুলনায় কবিতার বই খুব কম বিক্রি হচ্ছে। কিছু কবিতার বই ভালো বিক্রি হচ্ছে। আর কিছু বই একেবারেই বিক্রি হচ্ছে না।’

এদিকে তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার ও আর্থিক সচ্ছলতার কারণে সহজেই বই ছাপানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে বলেই কবিতার বইয়ের এত আধিক্য বলে অভিমত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদের। তিনি জাতীয় কবিতা পরিষদেরও সভাপতি।

অধ্যাপক সামাদ বলেন, ‘আগে আমরা পত্রিকাসহ বিভিন্ন জায়গায় কবিতা লিখতাম। তারপর তা প্রকাশ করতাম একটি বইয়ে। কিন্তু এখন তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। মানুষের হাতে পর্যাপ্ত অর্থ আছে বলে তারা খুব সহজেই বই প্রকাশ করছে। এমন লেখকও আছেন যারা নিজেই সরাসরি বই বের করছেন।’

কবিতার প্রতি মানুষের প্রেমবোধে ভাটা পড়েছে বলে মনে করেন একুশে পদকজয়ী এই অধ্যাপক। বলেন, ‘কবিতার আসর এখন খুবই বিরল। জাতীয় কবিতা পরিষদ ছাড়া আর তেমন কেউ কেউ কবিতা উৎসবও আয়োজন করে না। কবিতা চর্চা নিয়েও তাই আগের ধারা আর নেই।’

সারাবাংলা/আরআইআর/টিআর

অমর একুশে বইমেলা অমর একুশে বইমেলা ২০২৪ কবিতার বই টপ নিউজ বইমেলা বইমেলা ২০২৪

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে তরুণের মৃত্যু
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২২:১০

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর