Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তিনিই জাকির, তিনিই মোশরফ— বিদ্যুতের মামলায় এনআইডি জালিয়াতি ফাঁস!

তহীদ মনি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৩:০৪

গ্রেফতার জাকির হোসেন ওরফে মোশরফ হোসেন। দুই নামে তার দুই পরিচয়পত্র। ছবি: সারাবাংলা

যশোর: নাম জাকির হোসেন, পিতা মো. মুনছুর আলী। অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের এক মামলার আসামি ছিলেন তিনি। আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকায় তাকে গ্রেফতার করতে গিয়েছিল পুলিশ। জাকিরকে খুঁজেও পাওয়া যায় তার বাড়িতেই। কিন্তু তাকে গ্রেফতার করতে গিয়েই বের হয়ে এসেছে এক জালিয়াতির তথ্য!

জাকির পুলিশের কাছে দাবি করেন, তার নাম মোহাম্মদ মোশরফ হোসেন, পিতা মো. হারুনউর রশিদ। বিভ্রান্তিতে পড়ে পুলিশ তাকে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেখাতে বলে। জাকিরও এনআইডি বের করে দেন পুলিশের হাতে। পুলিশ দেখতে পায়, তার নাম মোশরফ হোসেন!

বিভ্রান্তি অবশ্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি পুলিশের। ঠান্ডা মাথায় তারা ঘটনা পর্যালোচনা করে বুঝতে পারেন, জাকির আর মোশরফ আলাদা কেনো ব্যক্তি নন, বরং একই ব্যক্তি। কোনো না কোনোভাবে জালিয়াতির মাধ্যমে তিনি আলাদা নাম-ঠিকানা-পরিচয় ব্যবহার করে দুটি জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে নিয়েছেন।

পুলিশের জেরার মুখে শেষ পর্যন্ত এই জালিয়াতির তথ্য আর ধামাচাপা দিয়ে রাখতে পারেননি জাকির ওরফে মোশরফ। স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছেন, দুই নামে তিনি দুটি পরিচয়পত্র বানিয়ে নিয়েছিলেন। পরে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে।

অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ মামলায় জাকির ওরফে মোশরফকে গ্রেফতারের অভিযানে উপস্থিত ছিলেন যশোর কোতোয়ালি থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) টমাস মন্ডল। এনআইডি জালিয়াতির ঘটনা উদ্ঘাটনের তথ্য সারাবাংলাকে তিনি নিশ্চিত করেছেন।

টমাস মন্ডল জানান, দুটি এনআইডির একটিতে এনআইডিধারীর নাম জাকির হোসেন, পিতা মো. মুনছুর আলী, মাতা সাফিয়া খাতুন। ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে যশোর সদরের। আরেকটি এনআইডিতে নাম মোশরফ হোসেন ও পিতা মো. হারুনউর রশিদ ব্যবহার করা হলেও মাতার নাম, ঠিকানা ও জন্ম তারিখ একই রাখা হয়েছে।

যে মামলার সূত্র ধরে জাকির ওরফে মোশরফের এনআইডি জালিয়াতি উদ্ঘাটন হয়েছে সেই মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, যশোর শহরের ঘোপ জেল রোডে ঢাকা হোটেল নামে একটি হোটেল চালান জাকির হোসেন। হোটেলটির ট্রেড লাইসেন্স মোহাম্মদ মোশরফ হোসেন নামে নেওয়া। ২০১৯ সালে ট্রেড লাইসেন্স নিলেও তার নামে কোনো বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। কখনো অবৈধ সংযোগ, কখনো বিদ্যুৎ চুরি করে হোটেল চালানোর অভিযোগে গত ২৫ জানুয়ারি ভ্রাম্যমাণ আদালত ওই হোটেলে অভিযান চালায়।

অভিযানে বিদ্যুৎ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ) আয়েশা আক্তার মৌসুমী ৬২ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেন ওই হোটেলকে। জরিমানা না দেওয়ায় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি আদালত জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।

আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর ওই রাতেই উপশহরের জলপাইতলা ফকিরার মোড়ে জাকিরের বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালায়। এ সময় জাকির নিজের পরিচয় লুকাতে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে পুলিশের কাছে তিনি দুটি এনএইডি কার্ড বের করে দিতে বাধ্য হন। একই সঙ্গে জাকির নামে ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং মোশরফ নামে ট্রেড লাইসেন্সও পাওয়া যায় তার কাছে। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে।

শহরের ঘোপ জেল রোড এলাকার বাসিন্দা ফজলে রাব্বী অভিযোগ করেন, জাকির তাদের মিটারের বিদ্যুৎ চুরি করে হোটেলে ব্যবহার করছিলেন। এ জন্য তিনি বিদ্যুৎ বিভাগে অভিযোগ দিয়েছিলেন।

বিদ্যুৎ বিভাগের মামলায় জাকিরকে গ্রেফতারের অভিযানে উপস্থিত এএসআই টমাস মন্ডল বলেন, জাকির নামের ওই ব্যক্তি বড় ধরনের প্রতারক। ভিন্ন ভিন্ন কাজে তার দুটি পরিচয়পত্র তিনি ব্যবহার করেছেন। বিদ্যুতের মামলায় তাকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দের পাশাপাশি দুটি এনআইডিসহ জালিয়াতির ব্যাপারে আদালতে পৃথক প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।’

দুটি এনআইডির বিষয়ে জানতে জাকির হোসেনের স্ত্রীর মোবাইল নম্বরে কল করা হলে রিসিভ করেন তার ছেলে রিদম। তিনি দাবি করেন, তার বাবার একটিই আইডি কার্ড। আরেকটি কার্ড কোথা থেকে এসেছে, তা তারা জানেন না। ভিন্ন নামে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ট্রেড লাইসেন্সের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে কোনো উত্তর দেননি তিনি।

নাম ও বাবার নাম আলাদা হলেও বাকি সব তথ্য ঠিক রেখে দুটি এনআইডি তৈরির বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বাদল চন্দ্র অধিকারী বলেন, ‘একই ব্যক্তির দুটি এনআইডি কার্ড রাখার সুযোগ নেই। তবে দুয়েকটি ক্ষেত্রে এরকম হয়ে থাকতে পারে। অনেকের প্রথম এনআইডি ২০০৭ সালের আগে করা। পরে স্মার্ট কার্ড তৈরির সময় যদি কোনো কারণে আগের এনআইডি অনুযায়ী আঙুলের ছাপ ম্যাচ না করে, তাহলে হয়তো জালিয়াতি করে দুটি এনআইডি করে নিয়ে থাকতে পারেন কেউ। তবে ধরা পড়লে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়।’

নির্বাচন কর্মকর্তা বাদল বলেন, আমরা ঘটনাটি জেনেছি। অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির ব্যাপারে আদালত নির্দেশনা দিলে কিংবা পুলিশ কোনো সহযোগিতা চাইলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সারাবাংলা/টিআর

অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ এনআইডি জালিয়াতি দুই এনআইডি যশোর


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর