Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অনিয়ম-দুর্নীতিকেই নিয়ম বানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক আলম

এমদাদুল ইসলাম ভূট্টো, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:০০

ঠাকুরগাঁও: বিদ্যালয়ে যান না নিয়মিত। ম্যানেজিং কমিটির অনুমোদন নিয়েছিলেন ভুয়া স্মারক ব্যবহার করে। বিনা বেতনে একজনকে দিয়ে বছরের পর বছর কাজ করিয়ে টাকার বিনিময়ে ওই পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন আরেকজনকে। এরকম নানা অভিযোগে অভিযুক্ত ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার পীরগঞ্জ ইউনিয়নের বেগুনগাঁও পয়েন্ধা বিশমাইল (বিপিবি) উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলম। স্থানীয়রা বলে থাকেন, তার কাছে অনিয়মগুলোই নিয়ম, দুর্নীতিই রীতি।

বিজ্ঞাপন

বছরের পর বছর ধরে এমন অনিয়ম-দুর্নীতি করতে থাকায় প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কার্যালয়ে নানা ধরনের অভিযোগ জমা পড়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলাও রয়েছে। সম্প্রতি তার অনিয়ম-দুর্নীতিতে অতীষ্ঠ হয়ে স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির চার অভিভাবক সদস্য পদত্যাগ করেছেন।

অভিযোগে জানা গেছে, সম্প্রতি ওই বিদ্যালয়ের ১৪ জন শিক্ষক একত্রিত হয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অপকর্ম, অনিয়ম-দুর্নীতি এবং জাল-জালিয়াতির প্রমাণসহ ১৭ দফা অভিযোগ করেছেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দফতরে। অন্যদিকে এক কর্মচারীকে ২৮ বছর বিনা বেতনে চাকরি করানোর পর তাকে নিয়োগ না দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অন্যদের নিয়োগ দেওয়ায় প্রধান শিক্ষককের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন ওই কর্মচারী।

২৯ বছর ধরে পীরগঞ্জের বেগুনগাঁও পয়েন্ধা বিশমাইল (বিপিবি) বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন মোহাম্মদ আলম। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরেই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন না নিয়মিত। নানা অজুহাতে অনুপস্থিত থাকেন। পরে কখনো বিদ্যালয়ে গেলে হাজিরা খাতায় অনুপস্থিত থাকা দিনগুলোতেও সই করে দেন। প্রধান শিক্ষকের এমন অনিয়মের কারণে বিদ্যালয়ের অন্য সহকারী শিক্ষকরাও বিদ্যালয়ের উপস্থিত হওয়া ও পাঠদান নিয়ে গড়িমসি করেন। এসব কারণে এরই মধ্যে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী সংকটসহ ফলাফল বিপর্যয় ঘটছে।

অভিযোগে আরও জানা গেছে, ২০১২ সালে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড দিনাজপুর বরাবরে চিঠি না দিয়ে ভুয়া স্মারক ব্যবহার করে ম্যানেজিং কমিটি অনুমোদন নেন প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলম। বিষয়টি প্রমাণিত হলে ওই সময়কার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ফজলে আলম তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করেছিলেন। একই বছর বিদ্যালয়ের কম্পিউটার ও প্রজেক্টার আত্মসাৎ করলে স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটি তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়।

বিজ্ঞাপন

পরের বছর ২০১৩ সালে ভুয়া শাখা দেখিয়ে দুই সহকারী শিক্ষক এলিজা বেগম ও সেলিনা বেগমকে নিয়োগ দিয়েছিলেন মোহাম্মদ আলম। সে নিয়োগ প্রক্রিয়া সঠিক না হওয়ায় এমপিও বাতিলসহ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রংপুর অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা উপপরিচালক অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। ওই বছরই মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক গৌর চন্দ্র মন্ডল তদন্ত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জালিয়াতির অভিযোগে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেন।

এদিকে সরকারি বিধি উপেক্ষা করে ঘুঘুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে অভিভাবক সদস্য বানিয়ে উভয়ের যোগসাজশে কর্মচারী নিয়োগে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে মোহাম্মদ আলমের বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগে অবৈধ নিয়োগ ও সই জালিয়াতির অভিযোগ তুলে জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিয়েছেন ওই বিদ্যালয়ের ১৪ শিক্ষক।

স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সদস্য জালাল উদ্দীন বলেন, এই প্রধান শিক্ষক জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে কাউকে না জানিয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেয়। বিষয়টি জানতে পেরে আদালতের আশ্রয় নেই। পরে আমাদের হাত-পা ধরে ‘আর ভুল করব না’ বলে অঙ্গীকার করলে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি শোধরাননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির এক সদস্য বলেন, এই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ, সবগুলোরই প্রমাণও আছে। কিন্তু তিনি বহাল তবিয়তে চাকরি করে যাচ্ছেন। নিজে এমন দুর্নীতিবাজ হলে বাচ্চাদের কী শেখাবেন?

বিপিবি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল মতিন ও খয়রাত আলী বলেন, প্রধান শিক্ষক সহকারী শিক্ষকদের সই জাল করে বিল তুলে নেন। আমরা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি।

জানতে চাইলে স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মকছেদুর রহমান বলেন, ‘কোথাও কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে যে কেউ আইনের আশ্রয় নিতে পারেন।’ এর বাইরে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলম কোনো মন্তব্য করতে চাননি। শুধু বলেছেন, তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাহীন আকতার বলেন, তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। সেগুলো অধিকতর তদন্তের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হবে।

সারাবাংলা/টিআর

অনিয়মের অভিযোগ দুর্নীতির অভিযোগ প্রধান শিক্ষক

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর