শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য প্রস্তুত কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৩:৫৫
ঢাবি: আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই রক্তস্নাত ভাষা আন্দোলনের অম্লান স্মৃতি বিজড়িত মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহর। রাত ১২টা ১ মিনিট থেকেই অর্থাৎ ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ঢল নামবে সর্বস্তরের মানুষের।
শ্রদ্ধা জানানো হবে বাঙালির অকুতোভয় ভাষা সৈনিকদের। প্রতি বছরের মতো এবারও সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ইতোমধ্যেই কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ধুয়েমুছে পরিষ্কার করা হয়েছে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার। মূল বেদিতে রঙের আঁচড় থেকে শুরু করে সার্বিক সব বিষয়ে প্রস্তুতি শেষ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নতুন রঙে ঝকঝকে হয়ে আছে শহিদ মিনার।
মিনারের সামনে বড় জায়গাজুড়ে করা হয়েছে আলপনা। শহিদ মিনারের আশপাশের দেয়ালগুলোতে শোভা পাচ্ছে নানান ধরনের ছবি আর উক্তি। ভাষা শহীদের ছবি, বাংলা বর্ণমালাসহ বিভিন্ন চিত্র শোভা পাচ্ছে দেয়ালগুলোতে।
প্রতিবছর আলপনা আঁকার কাজটি করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। অঙ্কন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের কাজ শেষ হয়েছে বলা চলে। মোটামুটি সবকিছুই প্রস্তুত। মহান এই দিবসকে ঘিরে আমর এই আলপনার আঁকার কাজ করি। বিষয়টি আমাদের জন্য গর্বের। আমরা চারুকলার শিক্ষার্থীরা উৎসাহ-আনন্দ নিয়েই এই কাজ করে থাকি’
শহিদ মিনারের ঠিক বিপরীত পাশেই আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব চিকিৎসাকেন্দ্র শহিদ মোর্তাজা মেডিক্যাল সেন্টার। সেখানে তথ্যকেন্দ্র বসিয়েছে র্যাব ও ফায়ার সার্ভিস।
এদিকে, মহান শহিদ দিবসকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে শুরু করে আশেপাশে পলাশী, ঢাকা মেডিক্যালসহ সংলগ্ন জায়গাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাড়তি উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্পাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এ ছাড়া, এই এলাকায় শহিদ দিবসকে কেন্দ্র করে চার স্তরের নিরপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের নিরাপত্তার হুমকি নেই। পুলিশ সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে মোকাবেলায় পুলিশ সব সময় প্রস্তুত রয়েছে। পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া সমগ্র এলাকা সিসি টিভির আওতায় থাকবে।
মহান শহীদ দিবস সুশৃঙ্খলভাবে পালন করতে সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল।
তিনি জানান, ২১ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১২টা থেকে পরদিন বেলা চারটা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে শহিদ মিনার প্রাঙ্গণ। এর আগে রাত ১২টা ১ মিনিটে একুশের প্রথম প্রহরে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা, মন্ত্রী পরিষদ, তিন বাহিনীর প্রধান ও পুলিশ প্রধানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং বিভিন্ন সংগঠন।
এদিকে, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবস পালন উপলক্ষে ২১ ফেব্রয়ারি মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বুধবার বেলা ৩টা পর্যন্ত যানচলাচল বন্ধ থাকবে শহিদ মিনার সংলগ্ন ১৩টি সড়কে। এগুলো হলো—শাহবাগ, টিএসসি, দোয়েল চত্বর, হাইকোর্ট, শহীদুল্লাহ হল, জিমনেসিয়াম মাঠ গেট, রোমানা ক্রসিং, জগন্নাথ হল, ভাস্কর্য ক্রসিং, নীলক্ষেত, পলাশী, বকশিবাজার ও চানখাঁরপুল ক্রসিং দিয়ে যান চলাচল বন্ধ থাকবে। বিকল্প পথ হিসেবে কাঁটাবন, নীলক্ষেত, পলাশী, বকশিবাজার ক্রসিং হয়ে চানখাঁরপুল ক্রসিংয়ে যাওয়া যাবে।
আবার শাহবাগ, কাঁটাবন, বাটা সিগন্যাল, সায়েন্স ল্যাব ক্রসিং হয়ে মিরপুর রোডে যান চলাচল করবে। শাহবাগ, মৎস্য ভবন, কদম ফোয়ারা, হাইকোর্ট, আবদুল গণি রোড হয়ে জিরো পয়েন্ট ক্রসিং; হাইকোর্ট, বঙ্গবাজার, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, গোলাপশাহ মাজার ক্রসিং হয়ে ফুলবাড়িয়া ক্রসিং এবং শাহবাগ, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, বাংলামোটর, সোনারগাঁও ক্রসিং হয়ে ফার্মগেট, বকশিবাজার, চানখাঁরপুল, নিমতলী ক্রসিং হয়ে মেয়র হানিফ উড়াল সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে।
সারাবাংলা/আরআইআর/এনইউ