Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শূন্য পড়ে থাকে ভাষা শহিদ রফিক স্মৃতি পাঠাগার

রিপন আনসারী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:০০

সংশ্লিষ্টরা জানালেন, সারাবছর এরকম প্রায় ফাঁকাই পড়ে থাকে শহিদ রফিক গ্রন্থাগার। ছবি: সারাবাংলা

মানিকগঞ্জ: বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহিদ রফিক উদ্দিন আহমদ। তার নিজ গ্রাম মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার পারিলে তার স্মরণে নির্মাণ করা হয়েছিল শহিদ রফিক উদ্দিন আহমদ গ্রন্থাগার ও জাদুঘর। ১৬ হাজার বইয়ের সমৃদ্ধ এক ভাণ্ডার রয়েছে গ্রন্থাগারটিতে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কেবল ভাষার মাসে এই গ্রন্থাগার ঘিরে কিছু মানুষের আনাগোনা দেখা যায়। বছরের বাকি প্রায় পুরোটা সময়ই এটি শূন্য পড়ে থাকে, দেখা মেলে না পাঠকের।

বিজ্ঞাপন

এদিকে ভাষাশহিদের স্মরণ ও নামে পাঠাগার গড়ে তোলা হলেও সেখানে ভাষা আন্দোলনের ওপর কোনো বই নেই বললেই চলে। স্থানীয়রা বলছেন, দেশের যেকোনো গ্রন্থাগারেই ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে ওপর বই থাকা প্রয়োজন। সেখানে ভাষাশহিদের নামে গড়ে তোলা পাঠাগারে এ বইয়ের উপস্থিতি অপরিহার্য হওয়া উচিত। সেটি করা গেলে এই গ্রন্থাগার ঘিরেই স্থানীয় তরুণ ও নতুন প্রজন্মের মধ্যে ভাষা ও ইতিহাস চর্চার সুযোগ তৈরির চেষ্টা করা যেত। কিন্তু সেটি সম্ভব হচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের জারি করা ১৪৪ ধারা তথা জরুরি অবস্থা ভেঙে মিছিল হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলাকায়। সেই মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে প্রথম শহিদ হন মানিকগঞ্জের রফিক উদ্দিন আহমেদ। ২০০০ সালে এই সূর্য সন্তানকে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। জেলার সিংগাইর উপজেলার পাড়িল গ্রামে জন্ম নেওয়া রফিকের নামে গ্রামটির নামকরণ করা হয় রফিকনগর।

স্থানীয়রা জানান, ২০০৮ সালের ২৪ মে মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদ রফিকনগরে নির্মাণ করে ভাষাশহিদ রফিক উদ্দিন আহমদ স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার। ১২ হাজার বই দিয়ে গ্রন্থাগারটির যাত্রা শুরু হয়। বাড়তে বাড়তে বর্তমানে বইয়ের সংখ্যা ১৬ হাজার। বই বাড়লেও দিনদিন গ্রন্থাগারটির পাঠক কমে যাচ্ছে।

ভাষাশহিদ রফিক উদ্দিন আহমদ গ্রন্থাগারের লাইব্রেরিয়ান ফরহাদ হোসেন খান সারাবাংলাকে বলেনম, এত সুন্দর একটি পাঠাগার এখানে নির্মাণ করা হয়েছে, কিন্তু কেন পাঠক আসছে না তা বলতে পারব না। এখানে মোট ১৬ হাজার বই আছে। এখন পাঠকরা যদি আসতে না চায়, তাদের কীভাবে আনব? জোর করে তো আনা যাবে না। পাঠক যারা আছেন, তাদের মনমানসিকতা নিয়ে তাদেরই কাজ করতে হবে।’

শহিদ রফিক স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগারের মূল ফটক। ছবি: সারাবাংলা

ফরহাদ হোসেন জানালেন, এই গ্রন্থাগারে ভাষা শহিদ রফিকসহ পাঁচজন শহিদকে নিয়ে লেখা একটি বই আছে। আর আছে ভাষাশহিদ রফিকের একটি জীবনীগ্রন্থ। এর বাইরে ভাষা আন্দোলন সম্পর্কিত আর তেমন কিছু নেই।

গ্রন্থাগারটিতে ভাষা আন্দোলনের ওপর বই না থাকার সমালোচনা করছেন শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা। তারা বলছেন, যেহেতু ভাষাশহিদ রফিকের নামে গ্রন্থাগারটি প্রতিষ্ঠিত, সেখানে ভাষা আন্দোলনের ওপর নানা ধরনের বই থাকা প্রয়োজন, যেগুলো থেকে সবাই, বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে। সেসব বই না থাকায় নতুন প্রজন্ম ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস জানতে পারছে না।

গ্রন্থাগার ও জাদুঘরটি পরিদর্শন শেষে লেখক ও গবেষক মিয়া জান কবীনও বললেন একই কথা। পাঠক বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘এই গ্রন্থাগারে কিছু বই থাকলেও পাঠক সংকট দেখতে পেলাম। পাঠক বাড়াতে হলে প্রথমে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংযোগ তৈরি করতে হবে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচিতে যা আছে, তার সহায়ক বই পাঠাগারে রাখতে হবে। তাহলে হয়তো তারা এখানে আসতে আগ্রহী হবে।’

ভাষা আন্দোলন স্মৃতির রক্ষা পরিষদ কমিটির সহসভাপতি মোসলেউদ্দিন খান মজলিস বলেন, ভাষাশহিদ রফিক স্মৃতি পাঠাগারটি সমৃদ্ধ করতে হলে ভাষা আন্দোলনসংশ্লিষ্ট এবং যারা শহীদ হয়েছেন তাদের জীবনবৃত্তান্ত সম্পর্কিত গবেষণামূলক বই এখানে থাকতে হবে। আমি এখনো ওই ধরনের কোনো বই এখানে দেখতে পাইনি। এ ছাড়া এই অঞ্চলের ভাষাশহিদ রফিক সম্পর্কে এখনো অনেকেই অবগত নন। ভাষাশহিদের নামে গড়ে তোলা গ্রন্থাগারে ভাষা আন্দোলন নিয়ে বই থাকা খুবই জরুরি। ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন দিক নিয়ে লেখা নানা ধরনের বই আনা হয়তো পাঠক বাড়বে বলে আশা করি।

অবশ্য ভাষা আন্দোলনের বই না থাকার কারণে গ্রন্থাগারে পাঠক নেই— এমন অভিমতের সঙ্গে একমত নন অনেকেই। নাম প্রকাশ না করে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক সারাবাংলাকে বলেন, গ্রন্থাগারে পাঠক সংকটের পেছনে এটিকে কারণ বললে সেটি অজুহাতের মতো শোনায়। প্রকৃতপক্ষে আমরা শিক্ষার্থী বা কিশোর-তরুণদের মধ্যে পাঠ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে পারছি না। বই না দিয়ে তাদের হাতে মোবাইল তুলে দিচ্ছি। তাদের পড়ালেখাও করে দিয়েছি গাইডনির্ভর, মুখস্থনির্ভর। তাহলে কেন তারা গ্রন্থাগারে যাবে বই পড়ার জন্য?

জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট গোলাম মহিউদ্দিন অবশ্য পাঠক বাড়ানোর জন্য পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাদ দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে নিয়মিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে পারি। বিনামূল্যে বই বিতরণের কর্মসূচি হাতে নেওয়া যায়। সেটি করলে কিছু পাঠক বাড়বে। এরকম কী কী করা যায়, সেই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা ভাবছি। পরিকল্পনা করে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এদিকে শহিদ রফিক স্মৃতি জাদুঘরে শহিদ রফিকের ব্যবহার্য কিছু জিনিসপত্র ও স্মৃতিচিহ্ন রাখা হয়েছে। সেখানেও দর্শনাথীর সংখ্যা নগণ্য বলেই জানালেন সংশ্লিষ্টরা।

সারাবাংলা/টিআর

গ্রন্থাগার ভাষাশহিদ রফিক মানিকগঞ্জ শহিদ রফিক শহিদ রফিক উদ্দিন আহমদ শহিদ রফিক গ্রন্থাগার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর