মেঘ-বৃষ্টি কেড়েছে বই বিক্রির আনন্দ
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২২:৪৪
ঢাকা: ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া অমর একুশে বইমেলার ২২ তম দিন বৃহস্পতিবার। মেলা শুরুর পর প্রথম দুই সপ্তাহ বই বিক্রি ঢিলেঢালা থাকলেও তা জমতে শুরু করে মূলত ১৪ ফেব্রুয়ারি পয়লা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের দিন থেকে। বইমেলায় ভিড়, জটলা, বেচাকেনা ছিল তুঙ্গে। সর্বশেষ ২১ ফেব্রুয়ারির জনারণ্যও সামাল দিতে হয়েছে প্রকাশক-বিক্রেতাদের। কিন্তু ২২তম দিনে সেই যাত্রায় লেগেছে কিছুটা হোঁচট।
এদিন বিকেল ৩টায় মেলা শুরুর পর ক্রেতা-দর্শনার্থী, পাঠকদের ধীরলয়ের ভিড় শুরু হতে না হতেই তা ভেঙে পড়ে ছিটেফোঁটা বৃষ্টির হানায়। এ ছাড়া সারাদিন আকাশ মেঘলা মেঘলা থাকায় ঘর থেকেও পাঠক-ক্রেতারা বের হতে চাননি বলে অনুমান বইবিক্রি সংশ্লিষ্টদের।
বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় সরেজমিনে অমর একুশে বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশ ঘুরে দেখা যায়, দুই একটি প্যাভিলিয়নে পাঠকদের বিক্ষিপ্ত জটলা। তবে এক ইউনিট, দুই ইউনিট, এমনকি তিন ইউনিটের স্টলগুলোকে বসে থাকতে হয়েছে অলসভাবে। বেচাকেনা অন্যান্য দিনের তুলনায় অর্ধেকও হয়নি বলে দাবি তাদের। এর কারণ হিসেবে মেঘলা আকাশ আর ছিটেফোঁটা বৃষ্টিকে দায়ী করছেন তারা। এ ছাড়া গতকাল ২১ ফেব্রুয়ারির ডামাডোল ক্লান্ত করেছে পাঠকদের। এ কারণে আজ বই কিনতে পাঠক সমাগম হয়নি বলে জানাচ্ছেন প্রকাশকরা।
ঐতিহ্য প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী মো. সোলায়মান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজ মেলায় বৃষ্টির প্রভাব ছিল। কিছু কিছু বই ভিজে গেছে। বইগুলো গুছিয়ে আবার প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়েছে।’ অন্যদিনের চেয়ে আজ বিক্রি তুলনামূলক কম বলেও জানান তিনি।
আগামী প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী হাসান মাহমুদ বলেন, ‘মেলা শুরুর পরপরই ক্রেতারা আসতে শুরু করেছিল। কিন্তু বৃষ্টির পরপরই তারা বেরিয়ে গেছে।’
পলল প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী নাহির হোসেন বলেন, ‘আজ লোকজন নেই তেমন। বেচাকেনাও জমেনি। তবে আগামীকাল শিশুপ্রহর ও সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় মেলা জমবে বলে আশা প্রকাশ করছি।’
বইমেলায় ঘোরাঘুরি করছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চতুর্থ সেমিস্টারের ছাত্র সাজ্জাদ মিয়া। তিনি মেলায় আসেন বৃষ্টি থামার কিছুক্ষণ পর।
সাজ্জাদ মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘বৃষ্টি থামার পরই আমি মেলায় এসেছি। অন্যদিনের চেয়ে মেলার পরিবেশ শান্ত-নির্জন। এই পরিবেশে ঘুরতে ভালোই লাগছে।’
মেলার পরিবেশ অন্যদিনের চেয়ে শান্ত হলেও বিক্রি নিয়ে অনেকখানি হতাশ চন্দ্রবিন্দু প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী জাহিদ। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ৩ হাজার টাকাও বেচাকেনা করতে পারিনি। গতকাল ২১ ফেব্রুয়ারি ছিল লোকসমাগম আজ কম।’
প্রকাশনী প্রতিষ্ঠান লেখা প্রকাশের প্রকাশক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আজ বিক্রি কম। বৃষ্টির আগে কিছু বই বিক্রি করতে পেরেছি। বৃষ্টির পর বেচাকেনা নেই।’
স্টুডেন্ট ওয়েজের ফজলুল হক সাকিব এমন মেঘলা দিনে প্রশ্ন তোলেন মেলার ব্যবস্থাপনা নিয়ে। তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর ফেব্রুয়ারিতে বইমেলা চলাকালে ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কা থাকে। গোটা মেলাতে একাধিক পাঠক ছাউনি থাকলে ভালো হতো। তাহলে পাঠকেরা মেলার ভেতরের ছাউনিতে অবস্থান নিতে পারত।’
ফজলুল হক সাকিব বলেন, ‘এরকম বিরূপ পরিবেশে সিনিয়র সিটিজেনরা বিপদে পড়েন। তাদের কথা চিন্তা করে হলেও পাঠক ছাউনি থাকা দরকার।’
শব্দশৈলীর বিপণনকর্মী মো. রাসেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজ বিক্রির পরিমাণ খুবই কম। অন্যদিনের তুলনায় অর্ধেকও বিক্রি হয়নি।’
অমর একুশে বইমেলার ২২তম দিনে প্রকাশিত হয়েছে ৭৮টি নতুন বই। মেলা শুরু হয় হয়েছে বিকেল ৩টায় এবং চলে রাত ৯টা পর্যন্ত।
বইমেলার আজকের আয়োজন নিয়ে জানানো হয়েছে, বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ : আসাদ চৌধুরী এবং স্মরণ : জাহিদুল হক শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাহমুদা আকতার এবং কামরুল হাসান।
তারা বলেন, কবি আসাদ চৌধুরী ষাটের দশকের বাস্তবতায় একজন ঐতিহ্যমগ্ন কবি। তার কবিতায় জাতীয়তা, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধিকার-চেতনা নান্দনিক সৌকর্যে প্রতিভাত হয়েছে। যার ফলে তার কবিতার মাঝে শৈল্পিক বোধের সঙ্গে স্বজাতির প্রতি সুগভীর ভালোবাসা মূর্ত হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে, বাংলা কবিতার ইতিহাসে কবি জাহিদুল হক আপন প্রতিভায় উজ্জ্বল। তিনি ছিলেন একজন ছন্দসচেতন কবি। ছন্দ ও ধ্বনির ওপর দখল তাকে একজন শক্তিমান গীতিকার করে তুলেছিল।
আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন কবি দিলারা হাফিজ, কবি বায়তুল্লাহ কাদেরী এবং কথাসাহিত্যিক মনি হায়দার।
আলোচকরা বলেন, সদাবিনয়ী, মিষ্টভাষী কবি আসাদ চৌধুরী গণমানুষের কবি। বাহান্নর চেতনাকে বুকে ধারণ করে স্বদেশের প্রেমে উজ্জীবিত হয়ে তিনি দেশ, সমাজ ও সংস্কৃতিকে চিত্রিত করেছেন তার কবিতায়। লোকজীবনের নানা অনুষঙ্গ তার কবিতায় স্থান করে নিয়েছে। অন্যদিকে, বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে কবি জাহিদুল হক তার প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। কবিতার পাশাপাশি গল্প ও উপন্যাস রচনাতেও তিনি দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। গল্প, কবিতা ও উপন্যাসের মধ্য দিয়ে তিনি তার গভীরতম অনুভব ও অনুভূতির অত্যন্ত নিখুঁত ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ড. মুহম্মদ সামাদ। তিনি বলেন, ‘কবি আসাদ চৌধুরী ও জাহিদুল হক তাদের কবিতার মধ্য দিয়ে মানুষের প্রতি, দেশের প্রতি, ভাষার প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। তাই তাদের কবিতা গণমানুষের ভাষ্য হয়ে উঠেছে।’
আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি শিহাব সরকার, শিশুসাহিত্যিক তপংকর চক্রবর্তী, গবেষক হোসনে আরা এবং কথাসাহিত্যিক মিলটন রহমান।
বই-সংলাপ ও রিকশাচিত্র প্রদর্শন মঞ্চের আয়োজনে বিকেলে দ্রাবিড় সৈকত রচিত ‘বাংলার চিত্রকলা : ইতিহাসের বিভ্রান্তি এবং মনন-মনীষায় ইউরোপমুখিনতার মর্মভেদ’ এবং ‘ফ্রয়েডিয় লিবিডো-তত্ত্ব এবং তান্ত্রিক দেহাত্মবাদ : সমীক্ষণ ও তুলনামূলক বিচার’ শীর্ষক দুটো বই নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
বইমেলার আগামীকালের কর্মসূচি
আগামীকাল শুক্রবার বইমেলার ২৩তম দিন। মেলা শুরু হবে বেলা ১১টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বেলা ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত চলবে শিশুপ্রহর। সকাল সাড়ে দশটায় বইমেলার মূলমঞ্চে রয়েছে অমর একুশে উদযাপন উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমি আয়োজিত শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি ও সংগীত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান।
এতে স্বাগত ভাষণ দেবেন করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নজরুল ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণ : আখতারুজ্জামান ইলিয়াস শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মামুন হুসাইন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন ওয়াসি আহমেদ এবং জাফর আহমদ রাশেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক খালিকুজ্জামান ইলিয়াস।
সারাবাংলা/একে