Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নেত্রকোনা বিশ্ববিদ্যালয়: ৪ বছরে অগ্রগতি ৩১%, সময় বাড়ছে আরও ৩ বছর

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:১৬

ঢাকা: নেত্রকোনার বাসিন্দাদের আনন্দে ভাসিয়ে বছর সাতেক আগে এসেছিল শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষণা। পরের বছরই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। দুই বছরের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণের লক্ষ্য নির্ধারণ করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাস করা হয় প্রকল্প।

এরপর নির্ধারিত দুই বছর তো দূরের কথা, এক দফায় আড়াই বছর মেয়াদ বাড়িয়ে সেই মেয়াদের শেষ ভাগে পৌঁছে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়টির অবকাঠামো এখনো আটকে রয়েছে কাগজে-কলমে। প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৩১ দশমিক ১৭ শতাংশ। এ পরিস্থিতিতে প্রকল্পের মেয়াদ আরও তিন বছর বাড়ানোর প্রস্তাব জমা পড়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। বাস্তবতা বিবেচনায় সেই প্রস্তাব পাসও হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে দুই বছর মেয়াদি প্রকল্পের মেয়াদ গিয়ে ঠেকবে সাড়ে সাত বছরে!

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য বলছে, ‘শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় নেত্রকোনা’ প্রকল্পের চার বছর পেরিয়ে গেলেও আর্থিক বা ভৌত কোনো দিক থেকেই খুব একটা অগ্রগতি নেই। ভৌত অগ্রগতির কথা আগেই বলা হয়েছে। আর্থিক অগ্রগতি আরও শোচনীয়— মাত্র ১৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এ অবস্থাতেই মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের (মাউশি) অধীনে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব জমা পড়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এরই মধ্যে এই সংশোধনী প্রস্তাব নিয়ে কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই বিভাগের সদস্য (সচিব) আব্দুল বাকী সে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে প্রকল্পের অগ্রগতির বিভিন্ন তথ্য উঠে আসে।

প্রকল্প বাস্তবায়নে এত দেরি কেন— জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক জাকির হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ২০১৮ সালের রেট শিডিউল অনুযায়ী প্রকল্পটি তৈরি করা হয়েছিল। তখন জিনিসপত্রের দাম অনেক কম ছিল। পরে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রব্যমূল্য অনেক বেড়ে গেছে। ফলে কাজ করা সম্ভব হয়নি। ঠিকাদারেরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল। এসব কারণে প্রকল্পের বাস্তবায়নে কোনো গতি নেই।

বিজ্ঞাপন

আধুনিক, বিজ্ঞানমনস্ক ও যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে ২০১৮ সালে শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রণয়নের মাধ্যমে নেত্রকোনায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। মাউশির অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপনের প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। মোট ব্যয় ধরা হয় দুই হাজার ৬৩৭ কোটি ৪০ লাখ হাজার টাকা। ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালে বাস্তবায়নের জন্য সেই প্রকল্প অনুমোদন পায় একনেকে।

প্রথম দুই বছরে প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতিই ছিল না। এ কারণে ওই মেয়াদের শেষের দিকে গিয়ে প্রাক্কলিত ব্যয় না বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় আড়াই বছর। অর্থাৎ ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। সেই জুন মাস শেষ হতে বাকি আর মাত্র চার মাস। কিন্তু এখনো প্রকল্পের তিন ভাগের এক ভাগ কাজও শেষ হয়নি!

বাস্তব পরিস্থিতিতেই শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় নেত্রকোনা স্থাপনের জন্য সময় আরও বাড়াতে হবে। সেই বর্ধিত সময় প্রস্তাব করা হয়েছে তিন বছর। তবে এবারে সংশোধনী প্রস্তাবে প্রাক্কলিত ব্যয় ১১ কোটি ৫৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকা কমানো হচ্ছে। তাতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হচ্ছে দুই হাজার ৬২৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা।

সভায় কমিশনের আর্থসামাজিক বিভাগ থেকে বলা হয়, প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হলো সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের সমন্বয়ে সুশিক্ষিত, দক্ষ ও প্রাগ্রসর মানবসম্পদ তৈরিসহ মানসম্মত উচ্চ শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করা। এ ছাড়া শিক্ষাক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করে প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীসহ সবার উচ্চ শিক্ষাস্তরে সমান সুযোগ নিশ্চিত করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি থাকলেও উদ্দেশ্য পূরণ করার জন্য প্রকল্পটি শেষ করতে সময় বেশি লাগলেও দিতে হবে।

সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি বলেন, কিছু অঙ্গের ব্যয় বাড়ানো-কমানো হবে। আবার প্রকল্পের কিছু অঙ্গ কমিয়ে নতুন কিছু অঙ্গ যোগ করতে হবে। নির্মাণ ও পূর্ত কাজের প্রাক্কলিত ব্যয় পিডব্লিউডির ২০১৮ সালের রেট শিডিউল অনুযায়ী নির্ধারণ করা, যা এখন বাস্তবায়ন করতে গেলে ২০২২ সালের রেট শিডিউল অনুযায়ী করতে হবে। কিছু অংশের অর্থনৈতিক কোডও সুস্পষ্ট করা প্রয়োজন। এসব কারণে সংশোধনী প্রস্তাব আনা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি বলেন, সংশোধনী প্রস্তাবে ড্রেনেজ সিস্টেম নির্মাণ; কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার, স্বাধীনতার স্মৃতিফলক ও জাতীর পিতার ম্যুরাল নির্মাণ; দ্বিতীয় তলা ক্যাফেটেরিয়া ভবন ও ১০ তলা তিনটি একাডেমিক ভবন নির্মাণ; উপাচার্যের ডুপ্লেক্স ভবন, উপউপাচার্য ও ট্রেজারারের আবাসিক ভবন এবং শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মাচারীদের আবাসিক ভবন নির্মাণেও কিছু অঙ্গের ব্যয় বেড়েছে। তবে আরও কিছু অঙ্গের ব্যয় কমেছে। ফলে সার্বিকভাবে প্রকল্পের ব্যয় কমেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করে যথাযথ কর্তৃপক্ষ অনুমোদন নেওয়া হয়েছে বলে সভায় জানানো হয়। বলা হয়, মাস্টারপ্ল্যানে ১২১ একর জলাধার সংরক্ষণসহ প্রায় ৭৮ শতাংশ ওপেন স্পেস রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় একটি ফিজিবিলিটি স্টাডি এরই মধ্যে শেষ করা হয়েছে। সভায় প্রস্তাবিত সংশোধনীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারপ্ল্যান ও ফিজিবিলিটি স্টাডির প্রতিবেদন সংযোজন করার বিষয়ে সবাই একমত পোষণ করেন।

সভায় বলা হয়, প্রকল্পের সংশোধনীতে প্রস্তাবিত যন্ত্রপাতির ব্যয় বেশি মনে হয়েছে। এ প্রসঙ্গে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮ অনুযায়ী নির্ধারিত যাচাই কমিটির মাধ্যমে পুনরায় বাজারদর যাচাই করে প্রতিটি আইটেমের সংখ্যা সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণ করে ব্যয় পুনরায় প্রাক্কলনের নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রস্তাবিত প্রকল্পের অধীন সব পণ্য, সেবা ও পূর্তকাজ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮ অনুসরণ করে কেনার পরিকল্পনা পুনর্গঠন, প্যাকেজ সংখ্যা যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ ও তিন সদস্যের বাজারদর নির্ধারণ কমিটি গঠন করা হয়।

পিইসি সভায় বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটির (বিপিপিএ) প্রতিনিধি বলেন, ক্রয় পরিকল্পনার টাইটেল সংশোধন করে উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য সার্বিক ক্রয় পরিকল্পনা করতে হবে। এ ছাড়া ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম ক্রয় পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা ক্রয় পরিকল্পনা থেকে বাদ দেওয়া দরকার। ক্রয় পরিকল্পনায় পরামর্শকের ক্রয় পরিকল্পনাকে পূর্ত কাজ হিসাবে দেখানো হয়েছে, যা সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে।

তিন বছর বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত পুনর্নির্ধারণ এবং সে অনুযায়ী ব্যয় প্রাক্কলন ও ক্রয় পরিকল্পনা প্রণয়নের বিষয়ে সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সারাবাংলা/জেজে/টিআর

নেত্রকোনা নেত্রকোনা বিশ্ববিদ্যালয় পরিকল্পনা কমিশন শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর