ভাষা সৈনিককে মনোনীত করেও প্রত্যাহার— বিতর্কে চসিকের ‘পদক’
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৩:০৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) একুশে সম্মাননা স্মারক পদক নিয়ে বিশৃঙ্খল অবস্থা ও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ভাষা সৈনিক অধ্যাপক আসহাব উদ্দীন আহমেদকে পদকের জন্য মনোনীত করেও প্রদানের আগের দিন তার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে বিব্রতবোধ করছেন তার পরিবারের সদস্যরা। এছাড়া কারও কারও বিরুদ্ধে তদবির করে পদকের জন্য মনোনীত হওয়ার অভিযোগও উঠেছে, যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা চলছে।
শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) নগরীর সিআরবি’তে চসিক আয়োজিত একুশের বইমেলা মঞ্চে মনোনীতদের এ পদক তুলে দেওয়া হবে। এতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ প্রধান অতিথি হিসেবে এবং সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। গতবছর পর্যন্ত পদকটি ‘চসিক একুশে পদক’ নামে পরিচিত ছিল। এবার সেটি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন একুশে সম্মাননা স্মারক পদক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এ পদকের জন্য মনোনীতদের তালিকা চূড়ান্ত করে চসিক। জুরি বোর্ডের প্রস্তাবিত হিসেবে প্রয়াত অধ্যাপক আসহাব উদ্দীন আহমেদকে মনোনীত করা হয়েছে বলে তার নাতি বাঁশখালী উপকূলীয় কলেজের উপাধ্যক্ষ বশির উদ্দীন কনককে জানান চসিকের উপ-সচিব আশেক রসূল টিপু। কিন্তু পদক প্রদানের আগের দিন বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) একই কর্মকর্তা তাকে মুঠোফোনে ক্ষুদেবার্তা দিয়ে জানান, আসহাব উদ্দিনকে পদক দেওয়া হচ্ছে না, স্থগিত করা হয়েছে।
বশির উদ্দীন কনক সারাবাংলাকে বলেন, ‘সপ্তাহখানেক আগে আমাকে প্রথমে মেসেজ দিয়ে এবং পরে ফোন করে পদক দেওয়ার বিষয়টি জানানো হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের পদক গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু গত (বৃহস্পতিবার) রাত ১০টার দিকে আবার মেসেজ দিয়ে জানানো হয়েছে, পদক স্থগিত করা হয়েছে। তবে লিখিতভাবে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে আমাদের কিছুই জানানো হয়নি।’
কাদের পদক দেওয়া হবে, বিষয়টি নির্ধারণ করে চসিকের গঠিত জুরিবোর্ড। খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সভাপতি ডাক্তার এ কিউ এম সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত বোর্ডে জ্যেষ্ঠ্য সাংবাদিক নওশের আলী খান, দৈনিক আজাদীর জ্যেষ্ঠ্য প্রতিবেদক শুকলাল দাশ এবং আরও দু’জন সদস্য আছেন।
পদকের জন্য মনোনীত করেও প্রত্যাহারের বিষয়ে জানতে চাইলে একিউএম সিরাজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘অধ্যাপক আসহাব উদ্দীনের নাম একজন সাংবাদিক ভাই প্রস্তাব করেছিলেন। পরবর্তীতে সেটি নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে আপত্তি ওঠে। উনি চীনপন্থী বাম রাজনীতি করতেন। বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগের কট্টর সমালোচক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও ওনার ভূমিকা নিয়ে কেউ কেউ আপত্তি তুলেছেন। আমরা যখন বিষয়টি মেয়র মহোদয়কে জানাই, উনি বিতর্ক ওঠে এমন কাউকে না রাখার জন্য বলেন।’
‘তবে ওনার পরিবারকে জানানোর পর আবার প্রত্যাহারের বিষয়টি সঠিক হয়নি। পরিবারকে জানানো উচিত হয়নি। এটি ওনার পরিবারের জন্য অবশ্যই বিব্রতকর।’
জুরি বোর্ডের কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করেন চসিকের শিক্ষা বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি নিছার উদ্দিন আহম্মেদ। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘জুরি বোর্ডের কার্যক্রমে আমরা কখনো হস্তক্ষেপ করি না। ওনারাই অধ্যাপক আসহাব উদ্দিনের নাম প্রস্তাব করেছিলেন। পরবর্তীতে রিভিউ করার সময় সেটি বাদ পড়ে। জুরি বোর্ডের সিদ্ধান্তে যদি কোনো বিতর্ক বা সমালোচনা ওঠে, তখন সিটি করপোরেশনকে হস্তক্ষেপ করতে হয়।’
এদিকে আসহাব উদ্দীন আহমেদের নাম বাদ দেওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা চলছে। অনেকেই জুরি বোর্ড এবং চসিকের এ কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি লিখেছেন, ‘‘৫৪’র যুক্তফ্রন্টের নির্বাচিত প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য, ভাষা সৈনিক, সাহিত্যিক-সমালোচক, ইংরেজির জাঁদরেল শিক্ষক প্রফেসর আসহাব উদ্দীন আহমেদকে ভাষা আন্দোলনে অবদানের জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মরণোত্তর একুশে পদক প্রদানের জন্য মনোনীত করে। আজ শুক্রবার শিরীষতলার বইমেলার আলোচনা মঞ্চ থেকে পদক আনুষ্ঠানিকভাবে স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়ার কথা। কিন্তু গতরাতে হঠাৎ করে চসিক থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় তার পদক প্রক্রিয়া ‘স্থগিত’।’’
মহসীন কাজী আরও উল্লেখ করেন, ‘‘ঘটনাটি শোনার পর একুশে মেলা কমিটির অন্যতম কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঘটনা সত্য। আসহাব উদ্দীন আহমেদের নাম ঘোষণার আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড এবং একটি রাষ্ট্রীয় সংস্থা থেকে আপত্তি এসেছে- তাই ওনারটা স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়েছে’। তাৎক্ষণিক ওনাকে বললাম, আপনি যা বলছেন তা ঠিক মনে হচ্ছে না। আপনি মনে হয় জানেন না, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে কয়েক বছর আগে বরেণ্য গীতিকার মাজহারুল আনোয়ার স্বাধীনতা পদক নিয়েছেন। তিনি ছিলেন প্রকাশ্যে বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত। নাট্যকার আমজাদ হোসেন ও অভিনেতা আহমেদ শরীফ বিএনপি করতেন। অসুস্থতার সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে তারা মোটা অংকের সহায়তা পেয়েছিলেন।’’
‘চসিকের আরেক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, তাকে এ বিষয়ে না জানিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওনাকে নির্বাচিত করার পর, হঠাৎ স্থগিতের সিদ্ধান্ত দেওয়া কোনোভাবে ঠিক হয়নি। আমরা জানি, আসহাব উদ্দীন আহমেদ একজন কড়া প্রগতিশীল মানুষ ছিলেন। প্রায় সারাজীবন কেটেছে জেল-জুলুম, হুলিয়ার মধ্য দিয়ে। ভাষা আন্দোলনে ওনার অবদান উল্লেখযোগ্য। সাহিত্যিক এবং রাজনৈতিক সমালোচক হিসেবে ছিলেন পাঠকপ্রিয়। তার প্রকাশিত গ্রন্থগুলো এখনো আলোচিত। চসিক তাকে নিয়ে যা করেছে তা সত্যিই অমানবিক’- এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন মহসীন কাজী।
লেখক-সাংবাদিক হাসান নাসিরও ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতিবছর ভাষার মাসে চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনদের একুশে সম্মাননা স্মারক পদক প্রদান করে থাকে চসিক। এটি বেশ ভালো উদ্যোগ। পদকের জন্য নির্বাচিত ব্যক্তিত্বগণের নাম ঘোষণার পর কিছু সমালোচনা ওঠে। তবে আমার মধ্যে এ নিয়ে কোনো ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া হয় না। কারণ, এই বিরোধিতার নেপথ্যে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের বিষয়টিও থাকে।’
‘কিন্তু এ বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে চসিক পদকে একটি কাণ্ড ঘটে গেল, যা নিয়ে দু’যেক লাইন কথা না বলে পারছি না। চসিক থেকে সম্মাননার জন্য প্রথমে ১৮ জনের নাম ঘোষণা করা হয়, যার মধ্যে অন্যতম ভাষা আন্দোলনে অধ্যাপক আসহাব উদ্দীন আহমদ (মরণোত্তর)। তিনি একজন ভাষা সৈনিক, বামপন্থী বিপ্লবী, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ। জীবন কেটেছে জেল, জুলুম, হুলিয়া মাথায় নিয়ে। ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন এই নেতা। সম্মাননার জন্য তিনি একজন যথাযথ ব্যক্তিত্ব। আবার কেউ গুণী ব্যক্তি হলেই পদক পেতে হবে, সেই দাবি আমি করি না।’
হাসান নাসির আরও উল্লেখ করেন, ‘কিন্তু নাম ঘোষণা করে আবার বাতিল করা হবে, এটি কেমন কথা? অধ্যাপক আসহাব উদ্দীন আহমদের বংশধররা কি চসিকের কাছে কোনো পদকের জন্য আবেদন করেছিলেন? তাছাড়া তিনি যেখানে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘একুশে পদক’ আগেই পেয়েছেন, সেখানে চসিক পদক এমন আর কী! তার বংশধরদের একজন জানালেন, চসিক থেকেই ফোন করে জানানো হয় অধ্যাপক আসহাব উদ্দিন আহমদকে মরণোত্তর সম্মাননার জন্য নির্বাচিত করার কথা। বলা হয়েছে পরিবারের পক্ষে কেউ যেন উপস্থিত হয়ে পদক গ্রহণ করেন। পরে সেই একই জায়গা থেকেই ফের ফোন করে মানা করে দেওয়া হয়েছে।’
‘‘আসহাব উদ্দিন আহমদ যে আওয়ামী লীগ করতেন না বরং আওয়ামী লীগের সমালোচক ছিলেন তা গোপন বিষয় নয়। তিনি বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির সমালোচনাও করেছেন। একই দল না করলে আদর্শিক অবস্থান থেকে বিরুদ্ধাচরণ খুবই সঙ্গত। কিন্তু মত-পথের ভিন্নতা থাকলেই কি ব্যক্তির কীর্তি, অবদান অস্বীকার করা যায়? ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির বিরুদ্ধে ছিলেন। কিন্তু তাকে অস্বীকার করা যাবে? ভাষা আন্দোলনে তার এমনই ভূমিকা, যার ফলে তিনি পরিচিতি পেয়েছেন ‘ভাষা মতিন’ হিসেবে। কেউ কি তাকে অসম্মান করেছেন? জাসাস নেতা ছিলেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। অন্যতম শ্রেষ্ঠ গীতিকার ছিসেবে শেখ হাসিনার সরকারের আমলেই দেশের সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পদক’ পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিচয় কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। আরও দুই জাসাস নেতা চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেন ও অভিনেতা আহমেদ শরিফ। চিকিৎসা সহায়তা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের হাতে তুলে দিয়েছেন যথাক্রমে ৪২ লাখ ও ৩৫ লাখ টাকার আর্থিক অনুদানের চেক।’’
‘রাজনীতি আছে, থাকবে। কিছুক্ষেত্রে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠতে হয়। এমন কিছু মানুষ থাকেন, যাদের দলীয় পরিচয়টাই মুখ্য বিবেচ্য হওয়া উচিত নয়। তাছাড়া যিনি সম্মান পাওয়ার জন্য আবেদন করেননি, তাকে এভাবে টেনে এনে অসম্মান করা হবে কেন’- এভাবে উপসংহার টানেন হাসান নাসির।
অধ্যাপক আসবাহ উদ্দীনের নাম বাদ দিয়ে বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) চসিকের জনসংযোগ শাখা থেকে পদকের জন্য ১৬ জনের নাম ঘোষণা করা হয়। তবে এর আগেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পদকের জন্য মনোনীতদের তালিকা চলে আসে, যা নিয়েও তৈরি হয়েছে সমালোচনা-বিতর্ক। অভিযোগ উঠেছে, তদবিরের মধ্য দিয়ে এমন কাউকে পদকের জন্য মনোনীত করা হয়েছে, যাদের অতীত ও সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড বিতর্কিত। আবার এমনও কেউ পেয়েছেন, যাদের চট্টগ্রামের নাগরিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সে অর্থে কোনো ভূমিকাই নেই।
কবি আকতার হোসাইন ফেসবুকে লেখেন, ‘শোনা যায়, চসিকের একুশে পুরস্কার পাওয়ার জন্য কেউ কেউ বিভিন্ন মাধ্যমে লবিং করেন। যোগ্য হলেও এতে সম্মানের হানি ঘটে।’
আকতার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন একুশে পদক দেয়, এটা প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কিন্তু পদকের জন্য কিভাবে, কাদের মনোনীত করা হবে, সম্ভবত এর কোনো নীতিমালা নেই। বিশেষত, সাহিত্যে অনেক প্রবীণ, সিনিয়র কবি-লেখকরা, যাদের দীর্ঘ অবদান, তাদের বাদ দিয়ে জুনিয়র কাউকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আবার অনেক সিনিয়রকে এনে জুনিয়রদের সঙ্গে পদক দেওয়া হচ্ছে। অনেকের তেমন কোনো অবদানই নেই, অথচ লবিং করে পদক পেয়ে যাচ্ছেন, এগুলো তো আমাদের কানে আসে। মেয়র যাকে চান কিংবা জুরি বোর্ডে লবিং করে পদক পেতে হলে, সেটা না দেওয়াই বেটার।’
জানতে চাইলে একিউএম সিরাজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের শিক্ষা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি সভায় ছিলেন। সেখানে দেখেছি, একজন সাংবাদিক ভাই এবং ওনারা মিলে আগেই হোমওয়ার্ক করে কাগজে কিছু নাম লিখে নিয়ে এসেছিলেন। পরে সেগুলোই চূড়ান্ত করা হয়। আমি বেশিক্ষণ সভায় ছিলাম না। আমার কাজ থাকায় বের হয়ে যাই। এবার একটা হ-য-ব-র-ল অবস্থা তৈরি হয়ে গেল। শুনেছি, অনেকে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। এটা স্বাভাবিক।’
এবার পদকের জন্য মনোনীতরা হলেন— সাংবাদিকতায় জসীম চৌধুরী সবুজ, সঙ্গীতে শ্রেয়সী রায়, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা আন্দোলনে শহিদ সাইফুদ্দিন খালেদ চৌধুরী (মরণোত্তর), শিল্প উন্নয়ন ও সমাজসেবায় মো. নাছির উদ্দিন, চিকিৎসায় অধ্যাপক ডাক্তার মোহাম্মদ গোফরানুল হক, নাট্যকলায় শিশির দত্ত, শিক্ষায় অধ্যাপক প্রদীপ চক্রবর্তী, সংবাদপত্র শিল্পের বিকাশ ও মানোন্নয়নে রুশো মাহমুদ, ক্রীড়ায় জাকির হোসেন লুলু, চলচ্চিত্র নির্মাণ ও গবেষণায় শৈবাল চৌধুরী এবং সাহিত্যে শামসুল আরেফীন, ডক্টর শামসুদ্দীন শিশির, আবসার হাবীব, ভাগ্যধন বড়ুয়া, অরুণ শীল এবং শিবুকান্তি দাশ।
পদকের জন্য মনোনীত হিসেবে ঘোষণার পর চসিকের আরও একটি কর্মকাণ্ডে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পদকের জন্য মনোনীতদের কাছে মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম স্বাক্ষরিত চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন একটি স্মারকপত্র প্রকাশেরও উদ্যোগ নিয়েছে। প্রকাশনার নিমিত্তে মনোনীতদের কর্মময় জীবন বৃত্তান্ত ও এক কপি ছবি ১৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হয়।
যাদের কর্মময় অবদানের জন্য পদক দিচ্ছে, তাদের কাছেই আবার ‘কর্মময় জীবন বৃত্তান্ত’ চাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মনোনীত একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘চসিকের এমন চিঠি পেয়ে আমি বিব্রত হয়েছি। বিষয়টি আমার কাছে ভালো লাগেনি। এটি অপমান। আমি এ পদক না-ও নিতে পারি।’
একিউএম সিরাজুল ইসলামও চসিকের এমন কর্মকাণ্ডে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘অবদানের বিষয় যদি জানা না-ই থাকে, তাহলে আমরা মনোনীত করলাম কেন? তাদের কাছে জীবনবৃত্তান্ত চাওয়া, এটা কেমন কথা! এটা তো সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারাই নিজ উদ্যোগে খুঁজে বের করবেন।’
চসিকের শিক্ষা বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর নিছার উদ্দিন আহম্মেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘একুশে পদকটা নিয়ে প্রতিবার বিতর্ক হচ্ছে। এবারও হয়েছে। আমরা এবারের প্রোগ্রামটা শেষ করে মেয়র মহোদয়ের সঙ্গে বসবো। জুরি বোর্ডটা পুনর্গঠন করা যায় কি না, সেটা আমাদের ভাবতে হবে।’
সারাবাংলা/আরডি/এনএস