Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সমীক্ষা ছাড়াই ২০০০ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:০২

ঢাকা: সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ছাড়াই দুই হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, ২৫ কোটি টাকার বেশি খরচ হলেই প্রকল্পের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা বাধ্যতামূলক। ফলে নতুন করে সমীক্ষা করে প্রকল্পটির প্রস্তাব পুনর্গঠন করার সুপারিশ করা হয়েছে।

‘শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম’ প্রকল্পের প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবে ঘটেছে এমন ঘটনা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা। প্রকল্প পরিচালক বলছেন, সংশোধনীটি দ্বিতীয় পর্যায়ের হওয়ায় সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ছাড়াই প্রস্তাবনা তৈরি করেছিলেন। তবে তার এমন বক্তব্য কমিশন গ্রহণ করেনি।

বিজ্ঞাপন

প্রকল্পটি নিয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। তাকে সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) আবদুল বাকী। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি জারি করা করা ওই সভার কার্যবিবরণী সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ২০১টি উপজেলায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এর জন্য উপজেলা পর্যায়ে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের প্রকল্পটি গৃহীত হয়। এক হাজার ৬৪৯ কোটি ৩২ লাখ ৫২ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রকল্পটি চলমান রয়েছে ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুন মেয়াদে।

এই প্রকল্পের ব্যয় এক হাজার ২৭ কোটি ৩০ লাখ ৪৮ হাজার টাকা বাড়িয়ে দুই হাজার ৬৭৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা নির্ধারণ করে এবং মেয়াদও আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করে প্রথম সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

পিইসি সভায় আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের প্রধান বলেন, মূল প্রকল্প ব্যয় এক হাজার ৬৪৯ কোটি ৩২ লাখ ৫২ হাজার টাকা প্রাক্কলন করা হলেও প্রকল্পটির ওপর সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়নি। এখন সংশোধনীতে প্রস্তাবে ব্যয় এক হাজার ২৭ কোটি ৩০ লাখ ৪৮ হাজার টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলেও এরও সমীক্ষা করা হয়নি। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য অর্থ বিভাগের উন্নয়ন জনবল কমিটি চারটি পদ ও একটি সেবা ক্রয়ের সুপারিশ হয়েছে। এ ছাড়া মন্ত্রণালয়ের এমটিবিএফ প্রত্যয়নপত্রও সংযোজন করা হয়নি।

এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক মাহবুব মোরসেদ সোহেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রকল্প হওয়ায় সম্ভব্যতা সমীক্ষা করা হয়নি। একেবারেই প্রকল্প নতুন হলে তখন সম্ভব্যতা সমীক্ষা প্রয়োজন ছিল।’

তবে প্রকল্প পরিচালকের এমন বক্তব্য গ্রহণ করছে না পরিকল্পনা কমিশন। ওই সভাতেই আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের প্রধান বলেন, প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন বিষয়ে নির্দেশিকা অনুযায়ী সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শেষ করা আবশ্যক ছিল। এর ব্যত্যয় ঘটানো যাবে না। পরে প্রকল্প পরিচালক বলেন, সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রতিবেদন সীল-সইসহ আরডিপিপিতে সংশোধন করা যেতে পারে।

প্রকল্পের সংশোধনের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, জমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় বেড়েছে, বাস্তব অবস্থার কারণে ডিপিপিতে পরিমাণ অপেক্ষা মাটি ভরাট ও প্যালাসাইডিং কাজের পরিমাণ বেড়েছে। ফলে সংশোধিত ডিপিপিতে ব্যয় বেড়েছে।

সভায় প্রকল্প সংশোধনের কারণ তুলে ধরৈন প্রকল্প পরিচালক মাহবুব মোরসেদ সোহেল বলেন, ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া ব্যয় প্রাক্কলন বর্তমানে বেড়েছে। ফলে সংশোধিত ডিপিপিতে জমি অধিগ্রহণ খাতে খরচ বেড়েছে ২৮৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা। কিছু উপজেলায় বাস্তব অবস্থার কারণে ডিপিপিতে পরিমাণের চেয়ে মাটি ভরাট ও প্যালাসাইডিং কাজের পরিমাণ বেড়েছে। ফলে সংশোধিত ডিপিপিতে ব্যয় বেড়েছে ২৫৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা।

তিনি আরও জানান, মূল ডিপিপিতে ১৮৬টি উপজেলা অন্তর্ভুক্ত ছিল। জমি সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ৯টি উপজেলা বাদ দেওয়ায় উপজেলার সংখ্যা হয়েছে ১৭৭টি। তবে প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ের প্রস্তাবিত ১৫টি উপজেলা ও অন্যান্য ৯টি খাস উপজেলাসহ মোট ২০১টি উপজেলা নিয়ে সংশোধিত ডিপিপি প্রণয়ন করা হয়। মূল ডিপিপিতে মোট ১০৩টি উপজেলা জমি অধিগ্রহণের জন্য অন্তর্ভুক্ত থাকলেও সংশোধিত ডিপিপিতে মোট ১২৫টি উপজেলার জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। তাই সংশোধিত ডিপিপিতে ব্যয় বেড়েছে।

এ ছাড়া সরফেস ড্রেন খাতে ২৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা, ওয়াকওয়ে নির্মাণ খাতে ৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, সংযোজন সড়ক খাতে ২৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, রিটেইনিং ওয়াল খাতে ১০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, সেপটিক ট্যাং খাতে ১৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা খরচ বেড়েছে।

সভায় প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, ডিপিপি প্রণয়নের সময় ২০১৮ সালের গণপূর্ত অধিদফতরের শিডিউল অনুসরণ করা হয়। এখন গণপূর্ত অধিদফতরের সর্বশেষ শিডিউল ২০২২ দর কার্যকর হওয়ার কারণে নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে। এ ছাড়াও মূল ডিপিপিতে প্যাভিলিয়ন ভবন ও গ্যালারির জন্য ৪৪টি উপজেলায় পাইল ফাউন্ডেশন অন্তর্ভুক্ত থাকলেও পরে কনসালট্যান্ট সয়েল টেস্ট ও স্থাপত্য নকশা অনুযায়ী কাঠামোগত নকশা প্রণয়ন করে মোট ৭০টি উপজেলায় পাইল ফাউন্ডেশনের প্রয়োজন হবে।

সারাবাংলা/জেজে/টিআর

পরিকল্পনা কমিশন মিনি স্টেডিয়াম যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর