ঢাকা: মেডিকেল ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পদের ব্যক্তিদের নীতি-নৈতিকতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে দেশে বর্তমান উন্নয়ন এবং অগ্রগতি ধরে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ বলে জানিয়েছেন কুষ্টিয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদক্ষেপ প্রত্যাশা করেছেন তিনি।
রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ ক্ষোভ ও প্রত্যাশার কথা জানান।
মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, উন্নয়ন আমাদের যথেষ্ট হয়েছে, এখন প্রয়োজন এই উন্নয়ন ধরে রাখা। উন্নয়নকে ধরে রাখার জন্য সরকারের সামনে, দেশের সামনে সবচেয়ে বড় সমস্যা, আমাদের মানুষের সততা, নীতি-নৈতিকতা, মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়ের দিকে জাতি চলে যাচ্ছে। এখান থেকে যদি বের হয়ে আসতে না পারি তাহলে এই উন্নয়ন কিন্তু ধরে রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
তিনি বলেন, গত কয়েক দিন আগে বা কিছু দিন ধরে আপনারা দেখেছে দুই জন শিশু, আইমান এবং আইয়ান খতনা করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছে। কয়েক দিন আগে আরেকটি শিশু এই অবস্থায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে মৃত্যু ঝুঁকিতে ছিল। চিকিৎসকদের গাফিলতির কারণে এই দুটি শিশু প্রাণ হারালো, এটা নিয়ে অনেকেই শঙ্কিত আছে। এ অবস্থাটা কেন হয়েছে, জাতি অবাক হলেও আমি কিন্তু খুব একটা বিস্মিত হইনি। চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সর্বোচ্চ সেবা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ কর্ণধারকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার অনৈতিকতা, স্বজনপ্রীতি নিয়ে, নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে নানা ধরণের লেখালেখি হয়। তখন কিন্তু চিকিৎসার উপরে মানুষের আস্থাটা আস্তে আস্তে কমে যায়।
হানিফ বলেন, লক্ষ্য করে দেখুন, আজকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের বিষয়েও কিন্তু বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য চলে আসছে। কেউ স্বজনপ্রীতির সঙ্গে জড়িত, কেউ নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। এমন কি অনেক উপাচার্যের অডিও রেকর্ডও চলে আসছে গণমাধ্যমে, যারা যারা নিয়োগের জন্য সরাসরি প্রার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন আর্থিক সুবিধা নেওয়ার জন্য। এই যদি সর্বোচ্চ পদধারী ব্যক্তিদের অবস্থা হয় তাহলে সেই জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে, তার নীতি-নৈতিকতা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা ছাড়া কিছুই করার থাকে না।
মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, গ্রিক দার্শনিক প্লেটো এক উক্তিতে বলেছিলেন, একটি দেশের মানুষ যেমন হবে রাষ্ট্র তেমনি হবে। মানুষের চরিত্র দ্বারাই রাষ্ট্র গঠিত হয়। আজ আমাদের শিক্ষিত ও সর্বোচ্চ ব্যক্তিদের যদি এই নীতি-নৈতিকতার অবস্থা হয় তাদের যদি এই মূল্যবোধ হয় তাহলে সেক্ষেত্রে এই রাষ্ট্রের চরিত্র আস্তে আস্তে অবক্ষয়ের দিকে যাবে এটাই স্বাভাবিক। আমি মনে করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দেশের ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন, অগ্রগতি করেছেন। এই উন্নয়ন অগ্রগতি ধরে রাখার জন্য এখন দরকার আমাদের এই সমাজের যে নীতি-নৈতিকতা, সততার যে অবক্ষয়ের মধ্যে যাচ্ছে সেটাকে কিভাবে আবার আমরা ফিরিয়ে আনতে পারি, মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করতে পারি সেই লক্ষ্যে আমাদের কাজ করা প্রয়োজন।