‘জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সহযোগিতা করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র’
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:২৬
ঢাকা: জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে চায় বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী।
রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্রের উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তারের নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রতিনিধি দল মন্ত্রণালয়ের তার সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে এমন আশ্বাস আসে বলে ব্রিফিংয়ে জানান সাবের হোসেন চৌধুরী। এ সময় তিনি বৈঠকের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
জলবায়ু সংকট নিয়ে তারা কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেছেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে পরিবেশমন্ত্রী বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন তো প্রতিদিনই চ্যালেঞ্জ। আমরা বাংলাদেশেও এটার প্রভাব দেখছি। এটা যে একটা জরুরি বিষয়, তা তারা উপলব্ধি করেন। বাংলাদেশ যেভাবে বিগত বছরগুলোতে এগিয়ে গেছে, সেটা ধরে রাখতে গেলে এই উন্নয়নের একটা স্থায়িত্ব থাকা প্রয়োজন। এটা টেকসই হতে হবে। টেকসই হতে হলে পরিবেশবান্ধব হতে হবে, জলবায়ু পরিবর্তনের যে বিষয়গুলো আছে, সেগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। যেটা আমরা দিচ্ছি।’
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘তারা মনে করে, বাংলাদেশ শুধু জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার কিংবা ক্ষতিগ্রস্তই না, জলবায়ু পরবর্তনের অনেক সমাধানও বাংলাদেশে আছে। তারা একটা রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশকে দেখে। আমরা যখন অ্যাডাপটেশনের (অভিযোজন) কথা বলি, তারা আমাদের কাছ থেকেও অনেক কিছু জানতে পারবে। অনেক কিছু তাদের দেশেও কাজে লাগাতে হবে।’
অর্থায়ন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘এগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমরা এখন কথা বলেছি তাদের নতুন কর্মসূচি ও বাংলাদেশ নিয়ে তাদের পরিকল্পনা বিষয়ে। তাতে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের আলোকে সেই চাহিদা পূরণে কীভাবে তারা সহযোগিতা করবে, সেটা নিয়ে আমরা কথা বলেছি।’
শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) শ্রমিক নেতা কল্পনা আখতার ও বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মার্কিন প্রতিনিধিরা। আপনার সঙ্গে কী বিষয়ে কথা হয়েছে? জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘রাজনৈতিক কোনো আলাপ হয়নি। টেকসই উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিশ্বজুড়ে যেসব বিষয় নিয়ে তাদের উদ্বেগ আছে, সেগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি।’
সুনির্দিষ্টভাবে কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নতুন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। পাঁচ বছর এই সরকার থাকবে। কাজেই আগামী দিনে তাদের যে কর্মসূচিগুলো আছে, যেসব জায়গায় তারা আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে চান, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কী, জলবায়ু আমরা কীভাবে দেখছি, এ সম্পর্কে তারা একটা ধারণা চেয়েছেন। তারা যখন তাদের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করবেন, আমাদের চাহিদাগুলো তারা মাথায় রাখবেন।’
সম্পর্কোন্নয়নের জন্য মার্কিন প্রতিনিধিদের বাংলাদেশ সফর কিনা? প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই! আমাদের সম্পর্ক আমি মনে করি উন্নত আছেই। আগামীতে সেটা আরও কীভাবে জোরালো করা যায়, সে বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। তার আমাদের সঙ্গে কাজ করবেন, সেজন্যই তারা এখানে এসেছে। যখন দুটি দেশের মধ্যে সম্পর্কের কথা বলব, সেখানে অনেকগুলো দিক থাকবে। কিছু কিছু দিক থাকে, যেখানে তারা একটু বেশি জোর দেবে। আমি মনে করি, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন, এটা তাদের একটা অগ্রাধিকারমূলক এলাকা। তারা এ বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে। এটার ওপর ভর করে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আগামী দিনে আরও জোরালো হবে।’
তবে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কোনো কথা হয়নি বলে জানান। এ ছাড়া, সোলার ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে দু’পক্ষের আলাপ হয়েছে। সেখানে মার্কিন প্রযুক্তি নিয়ে কথা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করি, সেটা চাহিদার চেয়ে বেশি। কাজেই আমরা যখন নবায়নযোগ্য জ্বালানির কথা বলব, সেখানে আমরা যে প্রযুক্তি ব্যবহার করব, সেটা যাতে আধুনিক প্রযুক্তি হয়।’
পোশাক খাতের পরিবেশ নিয়ে কোনো কথা হয়নি। তবে ১৫ মিলিয়ন ডলারের ফান্ড গঠন নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা যেটা বলেছি, আমরা নতুন একটা প্ল্যাটফর্ম দাঁড় করাচ্ছি। সেখানে আমাদের সব উন্নয়ন সহযোগীরা সহায়তা করতে পারবেন। আমি আশাবাদী, আমেরিকাও থাকবে। টাকার বিষয়ে কোনো দেশ থেকে আমরা সেভাবে চাচ্ছি না, আমাদের পরিকল্পনা একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করব, যেখানে সবাই থাকবেন। আমাদের মধ্যে সমন্বয় না থাকলে দেখা যাবে, একাধিক উন্নয়ন সহযোগী একই বিষয়ে সহযোগতিা করছেন। আমরা সেটা চাই না।’
গত সপ্তাহে দেখা গেছে বায়ু দূষণে ঢাকা সর্বোচ্চ পর্যায়ে। ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযানও চলছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশমন্ত্রী বলেন, ‘ইটভাটা নিয়ে আমরা অভিযান চালাচ্ছি, এটার দুটো দিক। একটা হচ্ছে আইনের শাসন। কেউ যদি অনুমতি ছাড়া একটা ইটভাটা পরিচালনা করেন, তাহলে সেটা আইনসম্মত হচ্ছে না। আরেকটা হচ্ছে, বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে আমরা যে বার্তাটি দিতে চাচ্ছি সেটা হলো- সনাতন পদ্ধতি থেকে আমাদের ব্লকে চলে আসতে হবে।’
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘এককভাবে ইটভাটা আমাদের সমস্যা তৈরি করছে না। আমরা যে ডিজেল বাংলাদেশে ব্যবহার করি, তাতে সালফারের যে কন্টেন্ট আছে, সেটা অনেক দেশের তুলনায় বেশি। এই জায়গায় আমাদের মানের দিকে নজর দিতে হবে। বিভিন্ন যানবাহন যে ঢাকায় চলাচল করে, সেগুলোর ফিটনেসের প্রতি নজর দিতে হবে। উন্মুক্তভাবে ঢাকার রাস্তায় বালু-সিমেন্ট রেখে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া চলছে উন্মুক্তভাবে নির্মাণ কাজ।’ ইটভাটা একটা উৎস, বাকি অনেব উৎসগুলো আছে- সেগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে বলে জানান তিনি।
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম