Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধে নারী খুন, ভাগ্নিজামাই গ্রেফতার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:৫৯

চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম নগরীতে নিজ বাসা থেকে শ্বাসরোধে খুন হওয়া পঞ্চাশোর্ধ নারীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সেইসঙ্গে হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের রহস্যও উদঘাটন করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, পাওনা টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করায় ভাগ্নি জামাইয়ের হাতে ওই নারী খুন হয়েছেন।

রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ভোরে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলা থেকে হত্যায় জড়িত একমাত্র ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে নগরীর পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। গ্রেফতার লিটন কান্তি দে (৪০) চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াজিশপুর ইউনিয়নের নতুনহাট এলাকার কাজল কান্তি দে’র ছেলে।

শনিবার সন্ধ্যায় নগরীর পাঁচলাইশ থানার নাজিরপাড়া এলাকা থেকে মঞ্জু দেবী (৫২) নামে এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। তাদের বাড়ি পটিয়া উপজেলায়। ছেলে উত্তম দেবকে (৩২) নিয়ে তিনি নাজিরপাড়ার বাসায় ভাড়া থাকতেন।

পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, চার মাস আগে ভাড়া নেওয়া বাসাটিতে শুধু মা ও ছেলে থাকতেন। উত্তম লেদ মেশিনের ওয়ার্কশপের কর্মচারী। শুক্রবার রাতে ঘরে বানানো পিঠা-পায়েস খান তারা। খাওয়ার পর থেকেই উত্তমের একটু তন্দ্রাভাব লাগছিল। বিছানায় যাওয়ার পর গভীর ঘুমে তলিয়ে যান। সেই ঘুম ভাঙে শনিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে। ঘুম থেকে উঠে দেখেন, তার মা পাশেই মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন। পরে তিনি পুলিশকে খবর দেন।

পাঁচলাইশ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা সারাবাংলাকে জানান, পুলিশকে খবর দেওয়ার আগে উত্তম পাশ্ববর্তী ভবনের বাসিন্দা তার মাসি সঞ্জু সেনকে ঘরে ডেকে আনেন। পরে প্রতিবেশিদের মাধ্যমে পুলিশকে খবর দেওয়ার পর লাশ উদ্ধার করা হয়।

প্রতিবেশি এক নারীর তথ্যে পুলিশ জানতে পারে, শনিবার সকালে লিটন কান্তি দে ওই বাসা থেকে বেরিয়ে যান। তখন পুলিশ তার সন্ধানে নামে। ভোরে ফটিকছড়ি উপজেলায় বোনের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। লিটনের বাসাও নাজিরপাড়া এলাকায়।

ওসি বলেন, ‘গ্রেফতারের পর লিটন জানিয়েছে, শুক্রবার রাত ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে তিনি তার মাসিশাশুড়ি মঞ্জু দেবীকে ঘাড়ে আঘাত করায় অচেতন হয়ে যান। পরে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করেন। সারারাত ওই ঘরে থেকে শনিবার সকালে লিটন পালিয়ে রাঙ্গামাটি চলে যায়। বিকেলে সেখান থেকে ফিরে আসে রাউজান নিজ বাড়িতে। সেখান থেকে রাতে ফটিকছড়ি উপজেলায় বোনের বাড়িতে চলে যায়।’

গ্রেফতার লিটন এবং স্বজনদের দেওয়া তথ্যের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের কারণও উদঘাটন হয়েছে বলে জানান ওসি সন্তোষ চাকমা। এ পুলিশ কর্মকর্তার দেওয়া তথ্যানুযায়ী, গ্রেফতার লিটন পুলিশকে জানিয়েছে, মঞ্জু দেবী সুদের বিনিময়ে লোকজনকে টাকা ধার দেন। মাস ছ’য়েক আগে মঞ্জু তার নিজের ছেলে উত্তমের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার নিয়ে দিতে লিটনকে অনুরোধ করেন। বিনিময়ে প্রতিমাসে লিটনকে এক হাজার টাকা করে দেওয়ার আশ্বাস দিলেও বিষয়টি উত্তমের কাছে গোপন রাখার অনুরোধ করেন।

লিটন নিজের বাড়ির দলিলের কপি জমা রেখে উত্তমের কাছ থেকে টাকা ধার নেন, যা গত ১২ ফেব্রুয়ারি পরিশোধের কথা ছিল। পরবর্তী সময়ে লিটন নিজের মায়ের ব্যাংক থেকে তুলে আরও ৯০ হাজার টাকা মঞ্জুকে ধার দিয়েছিলেন। কিন্তু সঠিক সময়ে উত্তমের কাছ থেকে ধার করা ৫০ হাজার টাকা ফেরত না দেওয়ায় মঞ্জুর সঙ্গে লিটনের বিরোধের সৃষ্টি হয়।

ওসি সন্তোষ চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘লিটনের ভাষ্য অনুযায়ী, উত্তমের টাকা পরিশোধ নিয়ে ৩/৪ দিন আগে মঞ্জু দেবীর সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। ওইসময় মঞ্জু আরও একমাস সময় নিতে বলেছিলেন। শুক্রবার মঞ্জু তার বোনের (লিটনের শাশুড়ি) মাধ্যমে সন্ধ্যায় তাকে বাসায় যেতে বলেন। শাশুড়ির কাছ থেকে খবর পেয়ে রাত সাড়ে আটটার দিকে তিনি মঞ্জুর বাসায় যান। সেখানে মঞ্জু তাকে এবং উত্তমকে পিঠা-পায়েস খেতে দেন।’

‘কিছুক্ষণ পর সেখানে থাকা মঞ্জুর ছেলে উত্তম ঘুমিয়ে পড়লে তিনি মঞ্জু দেবীর কাছ থেকে টাকা ফেরৎ চান। এ সময় কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে মঞ্জু টাকা দিয়েছে, এমন কী প্রমাণ আছে জানতে চান। এ সময় লিটন ক্ষিপ্ত হয়ে ঘরে থাকা দা-র উল্টো পাশ দিয়ে মঞ্জুর ঘাড়ে আঘাত করেন। পরে গামছা দিয়ে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এর পর উত্তমের রুম থেকে তার দেওয়া দলিলের ফটোকপি নিয়ে তা ছিঁড়ে টয়লেটের কমোডে ফেলে দেন।’

গ্রেফতার লিটনকে নিয়ে রোববার সকালে পুলিশ নাজিরপাড়া এলাকায় হত্যাকাণ্ডস্থলে গিয়ে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে।

এদিকে পুলিশ তথ্য পেয়েছে, বাসায় মঞ্জু দেবী যে পায়েস রান্না করেছিলেন, সেখানে নেশাজাতীয় দ্রব্য মেশানো ছিল। সেই পায়েস খেয়েই তার ছেলে উত্তম গভীর ঘুমে তলিয়ে গিয়েছিলেন। এখন পায়েসে নেশাজাতীয় দ্রব্য মিশিয়েছিল কে, এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ।

লিটন পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, বাসায় যাওয়ার পর মঞ্জু তাকে পিঠা ও উত্তমকে পায়েস খেতে দিয়েছিলেন। তিনি পায়েস খেতে চাইলেও তাকে তা দেওয়া হয়নি। উত্তম পায়েস খাওয়ার কিছু সময় পর তার ঘুম আসছে বলে ঘুমিয়ে পড়েন।

ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, ‘শুক্রবার রাতে পায়েস খাওয়ার পরপরই উত্তম ঘুমিয়ে যায়। পরদিন বিকেল চারটার দিকে ঘুম থেকে উঠেও তিনি স্বাভাবিক ছিলেন না। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। চিকিৎসক নেশাজাতীয় দ্রব্যের কারণে তার এমন হয়েছে বলে জানিয়েছেন।’

‘পায়েসে নেশাজাতীয় কিছু মেশানো হয়েছিল, এটা আমরা নিশ্চিত হয়েছি। এটা কি মঞ্জু দেবী নিজে মিশিয়েছেন না কি লিটন মিশিয়েছিল, অথবা কে বা কারা মিশিয়েছিল, সেটা আমরা খতিয়ে দেখছি।’

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় উত্তম দেব বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা করেছেন বলে ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা জানান।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

টপ নিউজ নারী খুন ভাগ্নিজামাই


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর