তেভাগা আন্দোলনের স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে দাঁড়াচ্ছে ইলা মিত্র সংগ্রহশালা
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:২৯
চাঁপাইনবাবগঞ্জ: তেভাগা আন্দোলনের বিপ্লবী নারী ইলা মিত্র। যাকে নাচোলের রানীও বলা হয়। ইতিহাসের পাতায় তার স্মৃতি ধরে রাখতে এবং নতুন প্রজন্মের কাছে মহিয়সী এ নারীর ইতিহাস তুলে ধরতে পরিকল্পনা নিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন নাচোলে মাটির তৈরি দ্বিতল ভবনটি ইলামিত্র সংগ্রহশালা হিসেবে গড়ে তুলেছেন।
ইলামিত্রের স্মৃতি বিজড়িত গ্রাম নাচোলের কেন্দুয়া রাওতাড়া গ্রাম। এ গ্রামেই বসেই ইলামিত্র বাংলার শোষিত ও বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তেভাগা আন্দোলন সংগঠিত করেছিলেন। ইতিহাসের পাতায় বিপ্লবী নারীর নাম থাকলেও তার স্মৃতি ধরে রাখতে এ এলাকায় তেমন কিছু ছিল না। সেজন্য জেলায় যোগদানের পর বিপ্লবী নারী ইলামিত্রের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে একটি সংগ্রহশালা নির্মাণের উদ্যোগ নেন জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন।
ইলামিত্রের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতেই জেলা প্রশাসকের নির্দেশে নাচোলের সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাইমেনা শারমীন সংগ্রহশালাটি নির্মাণ শুরু করেন। পরে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সবুজ হাসানের দেখভালে সংগ্রহশালাটি প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। তেভাগা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত নাচোলের রাওতাড়া গ্রামে ইলা মিত্র মঠের পাশেই ২৬ শতক জমির ওপর নির্মিত হয়েছে ইলামিত্র সংগ্রহশালাটি।
সংগ্রহশালাটি নির্মাণে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ঐতিহ্যকে। মাটি দিয়েই তৈরি করা হয়েছে শিল্পমণ্ডিত দৃষ্টিনন্দন দ্বিতল ভবনটি। ৮০০ বর্গফুট আয়তনের ভবনটির দোতলায় ওঠার জন্য সামনের বেলকনিতে কাঠের সিঁড়ি ব্যবহার করা হয়েছে। ভবনটির কিছুদূরে আরেকটি মাটির ঘর নির্মাণ করা হয়েছে পর্যটকদের বিশ্রামের জন্য। সংগ্রহশালাটিতে তেভাগা আন্দোলন ও ইলা মিত্র সম্পর্কিত বই, পত্র-পত্রিকা, দুর্লভ স্থিরচিত্র ছাড়াও জেলার ঐতিহ্যবাহী উপাদান স্থান পেয়েছে। উদ্বোধনের আগেই সংগ্রহশালাটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এসে ভিড় জমাচ্ছে। জেলা প্রশাসকের এমন উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে- এমনটিই বলছেন সুশীল সমাজের লোকজন।
আদিবাসী নেতা বিধান সিং সারাবাংলাকে বলেন, ‘ইলা মিত্র সমন্ধে জানার ও দেখার জন্য কিছু ছিল না নাচোলে। এরকম একটি সংগ্রহ শালা নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই।’
এর নির্মাণ প্রসঙ্গে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সবুজ হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘জেলা প্রশাসক স্যারের উদ্যোগে সাবেক ইউএনও’র তত্ত্বাবধানে বিপ্লবী নেত্রী ইলা মিত্রের স্মৃতি সংরক্ষণে সংগ্রহশালাটির নির্মাণ শুরু হয়। পরে আমার ওপর এই নির্মাণ যজ্ঞের দায়িত্ব এসে পড়ে। জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশে আমি সংগ্রহশালাটি নির্মাণ কাজ দেখভাল করছি। এটি দেখতে ইতোমধ্যে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এসে ভিড় জমাচ্ছে।’
সংগ্রহশালা নিয়ে নাচোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফা সরকার সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিপ্লবী নারী ইলামিত্র স্মৃতি সংরক্ষণে এবং নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস সর্ম্পকে ধারণা দেবে সংগ্রহশালাটি। নাচোলবাসীর জন্য এটি একটি ঐহিত্যবাহী স্থাপনা হয়ে থাকবে।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন অভিযাত্রার অংশ হিসেবে কৃষক আন্দোলনের নারী নেত্রী ইলা মিত্রের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতেই সংগ্রহশালা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সংগ্রহশালাটির কাজ প্রায় শেষের দিকে। এখন রয়েছে উদ্বোধনের অপেক্ষায়। উদ্বোধনের পর এটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, ১৯২৫ সালের ১৮ অক্টোবর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন সংগ্রামী নারী ইলা মিত্র। তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী হিসেবে আদিবাসী এলাকা নাচোলের রানী হিসেবে তাকে অভিহিত করা হয়। তিনি ১৯৪৬ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল অঞ্চলে তেভাগা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। তার আদি নিবাস ছিল ঝিনাইদহের বাগুটিয়া গ্রামে। বাবার চাকরির সুবাদে পরিবারের সবাই কলকাতায় থাকতেন। কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে তিনি ১৯৪৪ সালে বিএ পাস করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন।
সারাবাংলা/পিটিএম