ইবিতে ফি সমন্বয় নিয়ে ‘লুকোচুরি’, বিপাকে শিক্ষার্থীরা
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৪:৪৩
ইবি: ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের প্রায় ৪ গুণ ফি বৃদ্ধি করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০ শতাংশ ফি সমন্বয় করা হয়। তবে সমন্বয় হওয়া ফিসমূহ পরবর্তীতে আবারও আদায় করছে কর্তৃপক্ষ। এদিকে ফি সম্পূর্ণ পরিশোধ করা না হলে সার্টিফিকেট, নম্বরপত্রসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আটকে দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট দফতর। তাই বাধ্য হয়েই পুরো ফি দিতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
কর্তৃপক্ষের এমন ‘চাতুরি’তে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
শিক্ষার্থীদের দাবি, ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীরা ফি কমানোর দাবিতে তীব্র আন্দোলন হয়। পরে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ২০ শতাংশ ফি কমানোর আশ্বাস দেয় তৎকালীন প্রশাসন। যেসব শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে ফি দিয়েছে পরবর্তীতে তাদের ফি সমন্বয় করা হবে বলেও জানানো হয়। সে হিসেবেই শিক্ষার্থীরা ফিসমূহ দিয়েছে। তবুও স্নাতক (সম্মান) শেষে কাগজপত্র উত্তোলনের সময় একাডেমিক শাখা থেকে বলা হচ্ছে তাদের ফি বকেয়া রয়েছে। সম্পূর্ণ ফি পরিশোধ না করলে শিক্ষার্থীদের কাগজপত্র দেওয়া হবে না বলেও সাফ জানানো হয়। ফলে বাধ্য হয়েই শিক্ষার্থীরা সমন্বয়ের ঘোষণার পূর্বের বছরগুলোর পূর্ণ ফি দিচ্ছেন।
বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ চরম আকার ধারণ করেছে। এদিকে ফি দিতে গিয়ে অনেক শিক্ষার্থীর দেওয়া টাকা একাডেমিক শাখায় না তোলারও অভিযোগ রয়েছে।
একাডেমিক শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, ফি সমন্বয় সংক্রান্ত কোনো কিছুই তারা জানেন না। তাদের কাছে এ ধরণের কোনো চিঠি দেওয়া হয়নি। বিগত প্রশাসন মুখে আশ্বাস দিলেও কার্যত তা বাস্তবায়ন হয়নি। যার ফলে তারা সমন্বয় করা ফিসহ সম্পূর্ণ ফি আদায় করছেন।
তবে বিগত প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা বলছে, সংশ্লিষ্ট সব দফতরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেই চিঠি বিভিন্ন বিভাগে ও দফতরে খুঁজে পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৩০ জুলাইয়ের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম আব্দুল লতিফ স্বাক্ষরিত সেই বিজ্ঞপ্তিতে হয়, সেসব শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে ভর্তি হয়েছে তাদের পরিশোধিত সেশন ফি পরবর্তী বর্ষে ভর্তির সময় সমন্বয় করা হবে। এছাড়াও অপর একটি বিজ্ঞপ্তিতে পরীক্ষা ফি সমন্বয়ের বিষয়টি বলা হয়।
এদিকে একাডেমিক শাখার এক কর্মকর্তার টেবিলে সমন্বয় সংক্রান্ত স্বাক্ষর ছাড়া একটি কাগজ থাকলেও তিনি তার সঠিক ব্যাখা দিতে পারেননি। পরে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
ফি নির্ধারণে করণীয় অনুসন্ধান কমিটির সদস্য মাহবুবর রহমান বলেন, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আন্দোলনকারী ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেই ফি সমন্বয় করা হয়। এই সিদ্ধন্তটি বিজ্ঞপ্তি আকারে বিভিন্ন দফতরে দেওয়া হয়েছিল।’
একাডেমিক শাখার উপ-রেজিস্ট্রার (শিক্ষা) আলীবদ্দীন খান বলেন, ‘প্রথম বর্ষে ভর্তির সময় যারা ফি দিয়েছে তাদেরটা সমন্বয় হবে না। পরবর্তী ফিসমূহ নিয়ম অনুযায়ী সমন্বয় করা হবে।’ এরপরও কেন সমন্বয় করা হচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তাহমিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিগত প্রশাসন আমাদের ফি সমন্বয়ের বিষয়টি আশ্বস্ত করেছিল। এখন কাগজপত্র তোলার জন্য অতিরিক্ত টাকা দিতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এই প্রহসন বন্ধ হোক।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এমন কিছু হয়ে থাকলে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বসে সমাধান করা হবে।’
সারাবাংলা/এমও