স্মারকলিপি নিয়ে চসিকে হকাররা, দেখা দেননি মেয়র
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:৫৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম নগরীর সড়ক-ফুটপাত থেকে উচ্ছেদ হওয়া হকারদের পক্ষ থেকে সিটি মেয়র বরাবরে স্মারকলিপি দেওৈয়া হয়েছে। এতে আসন্ন রমজানে ফের তাদের সড়ক-ফুটপাতে বসতে দেওয়ার দাবি তুলেছেন।
হাজারখানেক হকার মিছিল নিয়ে বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টার দিকে নগরীর টাইগারপাসে নগর ভবনে চসিক মেয়রের কার্যালয়ের উদ্দেশে রওনা দেয়। টাইগারপাস মোড়ে পুলিশ আটকে দিলে তারা সেখানেই বসে পড়েন। এ সময় টাইগারপাস থেকে কদমতলী অভিমুখী সড়কে প্রায় আধাঘন্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।
নগরীর কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম ওবায়দুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘হাজারখানেক হকার প্রথমে পুরাতন রেলস্টেশন চত্বরে সমাবেশ করে। তার পর তারা মিছিল করে সিটি করপোরেশন ভবনের দিকে এগোতে চাইলে আমরা টাইগারপাস মোড়ে তাদের নিয়ন্ত্রণ করি। তাদের একটি প্রতিনিধি দলকে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। প্রতিনিধি দল যাওয়ার পর হকাররা কিছুক্ষণ সড়কে অবস্থান করে চলে যান।’
জানা গেছে, হকার নেতারা মূলত সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাতের আশায় ছিলেন। কিন্তু মেয়র তাদের সাক্ষাৎ দেননি। মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম তাদের কাছ থেকে স্মারকলিপি নেন।
চট্টগ্রাম হকার্স ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম লেদু সারাবাংলাকে বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ শেষ করে আমরা ১৫ হাজার হকারের মিছিল নিয়ে মেয়রের কার্যালয়ে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমাদের টাইগারপাস মোড় পার হতে দেয়নি। এরপর সম্মিলিত হকার্স ফেডারেশনভুক্ত বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা গিয়ে মেয়রের কার্যালয়ে স্মারকলিপি দিই। আমরা সরাসরি মেয়রের হাতে সেটা দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে মেয়র আমাদের সাক্ষাৎ দেননি।’
এদিকে, বিকেলে চসিকের এক অনুষ্ঠানে ফুটপাত রক্ষায় আবারও অনড় অবস্থান ব্যক্ত করেছেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এ সময় তিনি বলেন, ‘অবৈধভাবে ফুটপাত দখলকারীদের জনস্বার্থে উচ্ছেদ করেছি। অবৈধভাবে রাস্তা দখলের জন্য চাপ তৈরি করতে একটি মহল আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে । কার আন্দোলন? কীসের আন্দোলন? জনগণের ফুটপাত দখল করার অধিকার ওদের কে দিয়েছে? যত আন্দোলনই করেন না কেন, আমি ফুটপাতে অবৈধভাবে বসতে দেব না।’
গত ৮ ফেব্রুয়ারি নগরীর নিউমার্কেট মোড় থেকে নতুন রেলস্টেশন, রিয়াজউদ্দিন বাজার, পুরাতন রেলস্টেশন, ফলমণ্ডি, তামাকমুণ্ডি লেইন ও আমতলসহ প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা থেকে হাজারেরও বেশি হকার উচ্ছেদ করে সিটি করপোরেশন। এসব এলাকার ফুটপাত থেকে সড়কের একাংশ দখলে নিয়ে এসব হকার পোশাক, মোবাইল, জুতা, তৈরি খাবারসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে আসছিল। ফুটপাত ও সড়কে বিভিন্ন অস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের কারণে এসব এলাকায় নিয়মিত যানজট লেগে থাকতো।
উচ্ছেদ অভিযানের সময় হকাররা বিক্ষোভ করেছিলেন। পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ নিয়ে হকাররা ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। পর দিন হকারদের কেউ কেউ আবারও বসতে চাইলে সিটি করপোরেশনের কর্মীরা গিয়ে তাদের সরিয়ে দেন। এরপরও হকাররা সড়ক ও ফুটপাতের বিভিন্ন অংশ দখলে নিতে শুরু করলে ১২ ফেব্রুয়ারি ফের অভিযান চালায় সিটি করপোরেশন। এসময় হকারদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ভাংচুর করা হয় সিটি করপোরেশনের যানবাহন। পুলিশসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনায় হকারদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের হয়েছে।
এ অবস্থায় উচ্ছেদ হওয়া হকারদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের পুনর্বাসনের দাবি তোলেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। হকাররাও ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছে।
হকার নেতা নুরুল আলম লেদু সারাবাংলাকে বলেন, ‘রমজানের আগে হঠাৎ করে উচ্ছেদের কারণে হাজার-হাজার হকার তাদের পরিবার নিয়ে পথে বসে গেছে। পুনর্বাসন ছাড়া এভাবে উচ্ছেদ করার বিষয়টি শুধু আমরা নয়, কেউই মানতে পারছেন না। আমরা মেয়র মহোদয়ের কাছে স্মারকলিপিতে অনুরোধ করেছি, রমজান মাসটা যেন আমাদের ব্যবসা করার অনুমতি দেওয়া হয়।’
তবে রমজান মাসকে পুঁজি করে হকাররা ফের সড়ক-ফুটপাত দখলের পাঁয়তারা করছেন বলে মনে করছেন চসিকের কর্মকর্তারা।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম