চলচ্চিত্রের বইয়ের পাঠক-প্রকাশক দুই-ই কম
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২৩:২৩
প্রতিবছর বইমেলায় সবচেয়ে বেশি প্রকাশিত হয় কবিতার বই। আর বিষয়ভিত্তিক বইয়ের তালিকায় সবচেয়ে কম প্রকাশ হয় সম্ভবত চলচ্চিত্রবিষয়ক বই। এরপরও বেশকিছু লেখক ও গবেষক নিয়মিত লিখে যাচ্ছেন চলচ্চিত্রের বই। কিছু প্রকাশনীও নিয়মিত এ ধরনের বই প্রকাশ করছে। সেগুলো বিক্রিও হচ্ছে। তবে কোনোটিই সংখ্যায় খুব বেশি নয়।
চলচ্চিত্রবিষয়ক গবেষক বা লেখকরা বলছেন, অধিকাংশ প্রকাশনা সংস্থারই এ ধরনের বই প্রকাশে অনাগ্রহ রয়েছে। তবে প্রকাশনা সংস্থাগুলো বলছে, পাঠকস্বল্পতার পাশাপাশি ভালো পাণ্ডুলিপির অভাব এ ধরনের বই প্রকাশের অন্যতম অন্তরায়।
চলচ্চিত্রবিষয়ক বেশকিছু বই প্রকাশ করেছে ভাষাচিত্র। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার খন্দকার সোহেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি থিয়েটার ও সংস্কৃতিকর্মী। সেই দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে চলচ্চিত্র ও নাটকের বই প্রকাশ করি। দুঃখজনকভাবে বইগুলোর পাঠক এ দেশে নেই বললেই চলে। অধিকাংশ বই বিক্রি হয়েছে কলকাতায়। এ দেশের পাঠকরা বইয়ে কী আছে তা পড়েন না, তারা লেখকের নাম দেখে বই কেনেন, যা দুঃখজনক।’
ভালো পাণ্ডুলিপির অভাবের বিষয়টি তুলে ধরে প্রথমার বিক্রয় ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন বলেন, ‘ভালো লেখক নেই, এটা আমরা বলতে পারি না। আমরা বলব ভালো পাণ্ডুলিপি পাচ্ছি না। কারণ আমরা তো তারেক মাসুদের বই প্রকাশ করেছি। সে মানের পাণ্ডুলিপি পেলে অবশ্যই আমরা প্রকাশ করব।’
দেশের অন্যতম প্রকাশনা সংস্থা ঐতিহ্য থেকে ৩০টিরও বেশি চলচ্চিত্র ও নাটকবিষয়ক বই প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির সিইও আরিফুর রহমান নাঈম সারাবাংলাকে বলেন, ‘সব বই আমরা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে প্রকাশ করি, তা কিন্তু না। একটা প্রকাশনা সংস্থা হিসেবে আমরা চাই সব ধরনের বিষয় বৈচিত্র্যের বই আমাদের প্রকাশনায় থাকুক। সে জায়গা থেকে আমরা রান্নার রেসিপির বইও করি। আর আমাদের চলচ্চিত্রের বইগুলোর বিক্রিও ভালো। তবে এ ধরনের বইয়ের পাঠক সুনির্দিষ্ট।’
বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে চলচ্চিত্রবিষয়ক বিভিন্ন গবেষণাপত্র প্রকাশ করে আসছে। মূলত আর্কাইভের অর্থায়নে যারা গবেষণা করেন, তাদের বই প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি। কেউ পাণ্ডুলিপি নিয়ে যোগাযোগ করলে মান বিবেচনায় সেটিও প্রকাশের ব্যবস্থা করা হয়।
ফিল্ম আর্কাইভের কর্মকর্তা মো. সবুজ মিয়া বলেন, আমরা প্রতিবছরই গবেষণা প্রস্তাবনা আহ্বান করি। সেগুলো ফান্ডিং করি। পরে সেগুলো বই আকারেও প্রকাশ করি। বাংলাদেশে আমাদের চেয়ে বেশি চলচ্চিত্রবিষয়ক বই আর কেউ প্রকাশ করেনি। এ ছাড়া প্রথম দিকে কেউ পাণ্ডুলিপি নিয়ে এলে আমরা প্রকাশ করতাম। বর্তমানে সেই কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবু কেউ আবেদন করলে আমরা বিবেচনা করব।
চলচ্চিত্র গবেষক ও লেখক বিধান রিবেরু জানালেন, চলচ্চিত্রের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে তিনি প্রতি বছর বই লিখে থাকেন। তবে এ ধরনের বইয়ের পাঠক কম বলে স্বীকার করছেন তিনি। সামগ্রিক পাঠ্যাভ্যাস কমে যাওয়াকেই এর কারণ মনে করছেন তিনি।
বিধান রিবেরু বলেন, আমাদের দেশে বইয়ের পাঠক মূলত দুই ধরনের— সৃজনশীল ও মননশীল। মননশীল পাঠকদের ক্ষুদ্র একটি অংশের আগ্রহ চলচ্চিত্র নিয়ে। বাংলাদেশের মানুষের চলচ্চিত্র নিয়ে আগ্রহ আছে, কিন্তু তা নিয়ে পঠন-পাঠনের আগ্রহটা নেই। সামগ্রিকভাবেও মানুষের পড়ার প্রতি আগ্রহ কমে গেছে। মানুষকে জিজ্ঞাসা করলে বলবে, সে অবসরে ফেসবুক স্ট্যাটাস পড়ে। ফলে সামগ্রিকভাবে চলচ্চিত্রের বই কম হচ্ছে। তারপরও কিছু প্রকাশক আগ্রহ দেখাচ্ছেন বলে প্রতিবছর চলচ্চিত্রবিষয়ক বই আসছে।
ভালো প্রকাশক নেই মানতে নারাজ চলচ্চিত্র গবেষক ও লেখক আ-আল মামুন। তিনি বলেন, কেউ চলচ্চিত্রবিষয়ক বই প্রকাশে বাধা দিচ্ছে, ব্যাপারটা এমন না। চলচ্চিত্র পাঠের কতগুলো রুলস ও নর্মস থাকে। আপনি যদি তারেক মাসুদের চলচ্চিত্রের সঙ্গে জহির রায়হানের চলচ্চিত্রের তুলনা করতে যান, তাহলে সামাজিক প্রেক্ষাপটসহ অনেক কিছুই বুঝতে হবে। আমার যেটা মনে হয়, লেখক হিসেবে আমাদের প্রস্তুতির অভাব থেকে যায়।
ছবি: ইভান গালিব
সারাবাংলা/এজেডএস
অমর একুশে বইমেলা অমর একুশে বইমেলা ২০২৪ চলচ্চিত্র বিষয়ক বই বইমেলা বইমেলা ২০২৪ বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ