Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘সংকল্প করেছিলাম, বাঁচলে একসঙ্গে মরলেও একসঙ্গে’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১ মার্চ ২০২৪ ১৫:১২

ঢাকা: রাজধানীর বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান সদ্য বিবাহিত দম্পতি মেহেদী হাসান (৩৬) ও উম্মে হাবিবা (৩২)। তারা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

বিভীষিকাময় সেই পরিস্থিতির বর্ণানা দিতে গিয়ে মেহেদী হাসান সারাবাংলাকে বলেন, আমার বাসা মিরপুরে। ছয় মাস আগে আমরা বিয়ে করি। আমার শ্বশুর বাড়ি শান্তিনগর এলাকায়। কয়েকদিন আগে শ্বশুর বাড়িতে আসি। আমার এক বন্ধু আবরার ফারদিন দুই সপ্তাহ আগে চীন থেকে ঢাকায় আসেন। আমি, আমার স্ত্রী ও বন্ধু ফারদিন একসঙ্গে বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাত পৌনে ১০টার দিকে ‘খানাজ’ রেস্টুরেন্টে রেস্টুরেন্টে খেতে যাই। বেইলি রোডের ‘গ্রিন কোজি কটেজ’ ভবনের সাততলার তৃতীয় তলায় রেস্টুরেন্টটা অবস্থিত।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, হঠাৎ রেস্টুরেন্টের এক স্টাফ বলেন নিচে আগুন লেগেছে। তখন আমরা তিনজন এদিক ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকি। পরে নিচতলার দিকে গিয়ে ধোঁয়া দেখতে পাই। তখনই বন্ধু ফারদিনকে হারিয়ে ফেলি। একপর্যায়ে আমি স্ত্রীকে নিয়ে চারতলায় ইললিন নামে একটি রেস্টুরেন্টের বাথরুমে ঢুকে যাই। সেখানেই আড়াই ঘণ্টা কেটে যায়।

মেহেদী বলেন, আমরা বাঁচার আশা একদমই ছেড়ে দিয়েছিলাম। এরপর দুইজনই বলতে থাকি আমাদের উদ্ধার করার মতো মনে হয় কেউ নেই। আমরা দুই জনই মারা যাব। তবে বাঁচলে একসঙ্গে বাঁচব আর যদি মরি তাহলে একসঙ্গেই মরব। যখন এই সংকল্প করছিলাম তখন বন্ধু ফারদিনের কথাও মনে পড়ছিল। সত্যি কথা বলতে আড়াই ঘণ্টার একটা বিভীষিকাময় সময় কেটেছে। পরে দরজা ভেঙে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আমাদের উদ্ধার করেন।

বিজ্ঞাপন

উম্মে হাবিবা বলেন, ওই রাতের আড়াই ঘণ্টার ঘটনার বর্ণনা দিতে পারব না। বেঁচে ফিরেছি এটাই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। আড়াই ঘণ্টা বাথরুমে থেকে শুধু পানি দিয়েছি শরীরে আর নাকে মুখে। কিছুক্ষণ পর পানিও শেষ হয়ে যায়। পরে দেবদূতের মত ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আমাদের উদ্ধার করেন।

এদিকে, শুক্রবার (১ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল ও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি রোগীদের দেখার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।

তিনি জানান, বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে অগ্নিকাণ্ডে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৬ জন হয়েছে। এছাড়া ঢামেক হাসপাতাল ও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ১২ জন চিকিৎসাধীন আছেন। আহতদের চিকিৎসার খরচ সরকার বহন করবে বলেও জানান তিনি।

সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘অনেক সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফোন দিয়ে রোগীদের খোঁজ-খবর নেন। সবার চিকিৎসার দায়িত্ব তিনি নিজেই নিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুরো ভবনটিতে বদ্ধ অবস্থায় তৈরি হয়েছিল। এই অবস্থায় সেখানে অতিরিক্ত ধোঁয়া ও তাপে কেউই শ্বাস নিতে পারছিলেন না। তাই যারা মারা গিয়েছেন সবাই শ্বাসনালী পুড়ে মারা গেছেন। যারা চিকিৎসাধীন আছেন তারা কেউই শঙ্কামুক্ত নন।’

এর আগে, বেইলি রোডের ওই ভবনে বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে আগুন লাগে। ৯টা ৫০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। রাত ১২টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিট ঘটনাস্থলে কাজ করছিল। এর আগে রাত ১১টা ৫০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর আগুন পুরোপুরি নেভাতে কাজ করছিল ফায়ার সার্ভিস।

ভবনটির ছাদসহ বিভিন্ন তলায় অনেকেই আটকা পড়েছিলেন। টার্ন টেবল ল্যাডার (টিটিএল) ব্যবহার করে ছাদ ও বিভিন্ন তলা থেকে সবাইকে উদ্ধারের চেষ্টা করছিলেন ফায়ার সার্ভিস, আনসার ও বিজিবি সদস্যরা।

সারাবাংলা/এসএসআর/এনইউ

টপ নিউজ বেইলি রোড অগ্নিকাণ্ড

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর